ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে ভাবনা
তানিউল করিম জীম
🕐 ২:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২০
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে উপেক্ষা করে সকল অফিস আদালত খুলে দেওয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ। তাই শিক্ষার্থীদের মনে ক্যাম্পাসে ফেরার অপেক্ষার প্রহর বেড়েই চলেছে। কেউ ফিরতে চায় ক্যাম্পাসের টানে আবার কেউবা ফিরতে চায় জীবনের তাগিদে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন- তানিউল করিম জীম
ইমরান সিদ্দিকি
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ (মাস্টার্স)
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বর্তমানে শিক্ষার্থীরা গৃহবন্দি জীবনযাপন করছে। বিশেষত যাদের পড়াশোনা একদম শেষপ্রান্তে। অপেক্ষা শুধু সার্টিফিকেটের। তারা ভুগছে মানসিক সমস্যায়। মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্যে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও তার সুবিধা পাচ্ছে হাতে গোনা কিছু শিক্ষার্থী। এছাড়া এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের আয়ের উৎস ছিল টিউশনি। দীর্ঘদিনের বন্ধে তাদের অবস্থা আজ শোচনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী প্রাপ্তবয়স্ক। তাই অফিস-আদালতের পাশাপাশি উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া যুক্তিসংগত বলে মনে করি। প্রথমে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ১৪ দিনের কোয়ারান্টিন মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যেতে পারে। কারণ তাদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
বর্তমানে পরিস্থিতি এমন একটি পর্যায়ে চলে এসেছে যেখানে বলতে পারি আমাদের বাংলাদেশ অনেকটা সাধারণ জীবনযাপনে ফিরে গেছে। তাই আমাদের অনেকের মনে একটি প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করছে ক্যাম্পাস কবে খুলবে? অথবা ক্যাম্পাস খুলছে না কেন? ক্যাম্পাস খুললে লাভের প্রসঙ্গ আসলে বলতে পারি অবশ্যই মানসিক এবং শারীরিকভাবে আমাদের শরীরে মরিচা পড়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে ফেরত এসে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে নিজের মধ্যকার সেই মরিচা ঝেড়ে ফেলার সময় এসেছে।
পড়ালেখার কথা বললে অনেকের মনে হতে পারে সম্পূর্ণ বিশ্ব যেখানে থেমে আছে সেখানে আমি কিভাবে পেছাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা থেমে আছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া একজন শিক্ষার্থী জানে আমাদের চাকরি পরীক্ষা অথবা সেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের বয়স কোনোটাই থেমে নেই। যেটা এখন সবচেয়ে বেশি অনুভব করছে যারা মাস্টার্স শেষ পর্যায়ে অথবা চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা খোলার ব্যবস্থা করতে পারে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ (৩য় বর্ষ)
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মানেই অন্যরকম এক ভালোবাসা এবং অনুভূতির জায়গা। যেখানে একাডেমিক শিক্ষাচর্চার বাইরেও জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি। ক্লাস শেষে জব্বারের মোড়ে দল বেঁধে দুপুরের খাবার খাওয়া, রেললাইন কিংবা প্লাটফর্মে বসে আড্ডা, চায়ের কাপ হাতে কে আর মার্কেটে কত শত গল্প, আর ক্লাস শেষে ফটোকপির দোকানে ভিড় জমানো। আবার দিনশেষে যখন রাতে হলে ফেরা হয়। তখন মনে হয় এ যেন আপন নীড়। সবাই যেখানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাসে ফেরা এখন প্রায় অসম্ভব। করোনার প্রাদুর্ভাব কমলেই হয়তো আবার স্বাভাবিক হবে শিক্ষা কার্যক্রম। এখন সবার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের অভ্যাসেরও। ফিরতে চাই প্রাণের সবুজ চত্বরে। তবে অপেক্ষা শুধু সুস্থ পৃথিবীর।
মির্জা তৃণা
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ (১ম বর্ষ)
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ।
আজ আমাদের লেখাপড়া মরীচিকায় জীর্ণ হয়ে পড়েছে। অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম চললেও ৫০% থেকে ৫৫% শিক্ষার্থী কারিগরি ত্রুটি অথবা আর্থিক অক্ষমতার কারণে উক্ত ক্লাসে যুক্ত হতে পারছে না। এদিকে বাসায় অনেক দিন লেখাপড়া ব্যতীত দিন পার করে হতাশা গ্রাস করে ফেলেছে। মানসিক রোগে ভুগছে অনেকেই। আগামী মাস থেকে ক্লাস চালু করতে হবে ব্যাপারটি তা নয়। তবে একটি দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত। এতে করে শিক্ষার্থীরা ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা যেকোনো কাজ শুরু করতে পারে। আবার মাসের পর মাস মেস ভাড়া বহন করা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে কষ্টসাধ্য বিষয়। আর্থিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুব একটা সহায়তা করছে না শিক্ষার্থীদের। এতে দুর্ভোগে কাটছে তাদের দিনগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিশ্ববিদ্যালয়) খুললে যে খুব খারাপ কিছু ঘটবে তা নয়। কারণ গার্মেন্টস খোলার পূর্বেও আমরা এমনটি ভেবেছিলাম কিন্তু আহামরি তেমন কিছু হয় নি। শিক্ষার্থীরা যে বাড়িতে থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে বিষযটা এমনও না। বরং তারা এদিক সেদিক ঘোরাফেরায় ব্যস্ত।