ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাকৃবি শিক্ষার্থী

মিরাজের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ

হাবিবুর রনি
🕐 ২:০৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২০

করোনার কারণে দীর্ঘ ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে রয়েছে। এক প্রকার অবসরেই কাটছে শিক্ষার্থীদের দিন। কিন্তু এ অবসর সময়েও কেউ কেউ কাজ করছে অসহায় ও গরিব-দুঃখী মানুষের সাহায্যার্থে, কেউ আবার করছে জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজ। দেশজুড়ে হাজারো তরুণ প্রতিনিয়ত কাজ করছেন সমাজ ও মানুষের উন্নতির লক্ষ্যে। ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ আবার নিয়েছেন ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। তেমনি একজন তরুণ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবুল বাশার মিরাজ।

করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছিলেন নিজ জেলা বগুড়ায়। তার বাড়ি বগুড়া জেলার গাবতলী থানার নশিপুর গ্রামে। করোনাকালে বাসায় বসে না থেকে কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। মিরাজের বাড়ির পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে কয়েক বছর আগে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম এলেই কিছুতেই এ রাস্তাটির ধ্বংস ঠেকানো যাচ্ছে না।

তিনি মনে করলেন, এগুলো মেরামত করতে প্রতিবছর সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এটি দেশের জন্য এক ধরনের ক্ষতি। এই ধ্বংস থেকে রাস্তা রক্ষা করতে হলে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এর জন্য ঘরে বসে না থেকে নেমে পড়লেন কাজে। প্রথমে তিনি একই শুরু করলেন। নিজের জমানো ৫ হাজার টাকা দিয়ে গাছের চারা কিনলেন। রাস্তার ধ্বংস ঠেকাতে এলাকার তরুণদের সহযোগিতা নিয়ে বৃক্ষরোপণ শুরু করলেন।

কেবল এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি। বৃক্ষরোপণের ভূতটি তার মাথায় চেপে বসল। তিনি মনে করলেন, এ সমস্যাটি কেবল তার এলাকাতেই নয় বরং পুরো জেলা জুড়েই এ সমস্যা। যদি পুরো জেলার রাস্তার পাশেই বৃক্ষরোপণ করা যায় তবে রাস্তা ধ্বংস ও নদী ভাঙন রোধ করা যাবে। এটি করতে পারলে একটি সবুজ নগরী বগুড়া তথা সবুজ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। কিন্তু পেশায় তিনি একজন শিক্ষার্থী হয়ে চারাগাছ কেনার এত টাকা পাবেন কোথায়? সেই মুহূর্তে তিনি বন্ধু-বান্ধব, আতœীয়-স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীদের সহযোগিতা নিলেন। সবুজ বগুড়া গড়ার লক্ষ্যে তিনি একের পর এক উপজেলা ও নদীর ধারে বৃক্ষরোপণ ও জনসচেতনতা শুরু করলেন। সকলের সহযোগিতায় তিনি বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলার ২১টি স্থানে ২১০০টির অধিক চারাগাছ লাগাতে সক্ষম হয়েছেন।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে কৃষি নিয়ে বেশ জানাশোনা আছে মিরাজের। তিনি জানান, বসতবাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের গাছ লাগানো যেতে পারে রাস্তার ধারে কিংবা পতিত জমিতে গাছ লাগানোর মধ্যে ভিন্নতা আছে। আবার মাটি ভেদেও চারা রোপণের ভিন্নতা আছে। কারণ উঁচু মাটিতে যে গাছ জন্মে নিচু মাটিতে সে গাছ নাও জন্মাতে পারে। আবার কেবল বৃক্ষরোপণ করলেই নয়, দরকার সঠিক পরিচর্যারও। কিভাবে সেগুলোর পরিচর্যা করতে হয় সেটি জানাতে জেলার ২১টি স্থানে ঘুরে ঘুরে সে বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করেন তিনি।

অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, বৃক্ষরোপণ ও জনসচেতনতার কাজটিকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া চারাগাছই ছিল আমার শক্তি। এই বর্ষা মৌসুমে যেখানেই বৃক্ষরোপণ ও জনসচেতনতা করতে গিয়েছি সেখানেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।

আমাকে দেখে অনেকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহী হয়েছেন। বাড়ির পাশে ফেলে রাখা জমিতে তারা বৃক্ষরোপণ করেছেন, এটা দেখে বেশ ভালো লেগেছে। বলতে গেলে অনুপ্রেরণা পেয়েছি এটা দেখেই।

 
Electronic Paper