ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিবর্ণ শরৎ শুভ্রতা

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
🕐 ১:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২০

ঋতু পরিক্রমায় বছর ঘুরে আবার শরৎ এসেছে প্রকৃতিতে। ‘শরৎ’ কথাটি মনে হলেই চোখে ভেসে আসে সুনীল আকাশে মেঘের সঙ্গে শুভ্র-নীলের লুকোচুরি, ঝকঝকে রোদের সঙ্গে মন দোলানো সমীরণ, সদ্যবিদায়ী বর্ষার টইটম্বুর নদী আর নদীর ধারে ফোটা স্নিগ্ধ কাশফুল। তাইতো শরৎ শুভ্রতার প্রতীক, স্নিগ্ধতার প্রতীক, পূর্ণতার প্রতীক। বসন্ত যদি হয় ঋতুর রাজা, তবে শরৎ তার রাণী। ঋতু রঙ্গমঞ্চে অগ্নিক্ষরা গ্রীষ্মের পা-ুর বিবর্ণতা মুছে, বর্ষার বিষণ বিধুর নিঃসঙ্গতা দূরে ঠেলে আবির্ভাব ঘটে মায়াবী শরতের। নিঃশব্দে চরণ ফেলে এসে প্রসন্ন হাসিতে জয় করে নেয় কঠিনতম হৃদয়ও। জাগিয়ে তোলে প্রেমের আকুলতা।

রোজ সকালে পথের ধারে ঝরে পড়ে থাকা শিউলি, শেফালি ফুল, প্রাতঃভ্রমণে বের হওয়া প্রকৃতিপ্রেমীর চিরায়িত সঙ্গী। তৃণপল্লবে নবশিশিরের ভীরু স্পর্শ বাড়িয়ে দেয় শরতের রূপলাবণ্য।

ক্লান্ত দুপুরে সোনালী রোদের ঝলকানি শুধুই দ্বিধার সৃষ্টি করে। এই বুঝি আবার মেঘ ডেকে উঠবে। প্রশান্ত বিকেলে নদীকূলে দখিন হাওয়ায় কাশফুলের দোল, নদীর তরঙ্গের মতো আন্দোলিত করে কবি মনে। শরৎ সুন্দরী কাশফুলের সঙ্গে নীলাকাশে তুলার মতো উড়তে থাকা সাদা মেঘের মিতালি, কেবলই শরতের বর্ণের স্নিগ্ধতা আর উদারতা। তাতে অবশ্য মোটেই আড়াল হয়ে যায় না বিল-ঝিলে ফোটা পদ্ম, শাপলার বৈভব। সূর্যাস্তের রক্ত আভাও প্রচ- মায়ায় লেপ্টে থাকে ভাদ্রের বুক জুড়ে। তাই শত ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে মানুষ ছুটে যায় একমুঠো নীল চুরি করতে।

নৈশ আকাশেও থাকে রজতশুভ্র জোছনার উদাস হাতছানি। রূপালি চাঁদের ছোঁয়া থাকুক আর নাই থাকুক শুভ্র মেঘের ভেলার নিরুদ্দেশ ছোটাছুটি, কোমলতার শ্যামলিমায় ঢেলে দেয় অজস্র প্রেমরশ্মি। তারার মিটমিট, অফুরন্ত নির্মল বাতাস, শিউলি আর পাকা তালের সুবাস শরতের রাতগুলোকে আরো মোহনীয় করে তোলে। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে সবুজের ঢেউ, শরতের আরেক অপরূপ দৃশ্য। হেমন্তে যে পাকা ধানের পরিণত প্রতিশ্রুতি, শরতে তারই পরিচর্যা। রূপে-রঙে-রসে একাকার হয়ে বৈচিত্র্যময় ও পরিপূর্ণ সৌন্দর্য কখনই মনটাকে একলা ঘরে স্থির রাখতে দেয় না। বারবার ইচ্ছে হয় বাইরে ছুটে যেতে, প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে।

কিন্তু প্রকৃতির নিষ্ঠুর করোনা নামক অভিশাপে মলিন হয়ে গেছে এবারের শরতের সাজ। ক্যাম্পাসের শরৎ সন্ধ্যাগুলো উপভোগের কেউ নেই। ছোট ছোট কাশবনের পাশে ছবি তোলারও কেউ নেই। হবে না কোনো উৎসবও। বস্তুত বসন্তবরণ উৎসবের পর আর কোনো ঋতুকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান হয়নি মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে। মাঝে হারিয়ে গেছে পহেলা বৈশাখ, জৈষ্ঠ্যের ফল উৎসব কিংবা বর্ষার বৃষ্টি বিলাসি যত আয়োজন। শূন্য ক্যাম্পাসে তাই বিবর্ণ শরৎ শুভ্রতা। এই রোদ, এই বৃষ্টি, আলো-ছায়ার বিক্ষিপ্ত প্রতিযোগিতা দেখতে দেখতে ঘরবন্দি সময়গুলো কাটছে।

বিসর্জনের বেদনায় কালচক্রে একসময় শরৎও বিদায় জানাবে। আসবে নতুন ধানের নতুন উৎসবের হেমন্ত। শরতের বিদায়ের সঙ্গে হোক করোনারও বিদায়। এমনটা সবারই প্রত্যাশা।

 
Electronic Paper