ক্যাম্পাসের মুহূর্তগুলো
তাবাসসুম নাবিলা ও মাহবুব আলম
🕐 ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০২০
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি কেমন হবে? বহু আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে অনুভূতিই বা কেমন হয় তা যারা এই বিশাল অঙ্গনে পা রেখেছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন। স্বপ্নের সারথির সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতি তো আকাশ ছোঁয়া! কিন্তু সঙ্গে কাজ করে একধরনের ভয়, না ঠিক ভয় না আশঙ্কা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এসে সবার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, বন্ধু বানানো, আড্ডা দেওয়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া-সব কিছুতেই যেন অজানা ভীতি কাজ করে। কিন্তু যদি আপনার সঙ্গে এমন হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন গিয়ে দেখলেন প্রায় সবাই আপনাকে চেনে? শুধু তাই না সবাই সবার নামও জানে? যদি এমনটা হতো কত দারুণ হতো তাই না! হ্যাঁ ঠিক এমনটাই হয়েছিল আমাদের সঙ্গে।
আমরা বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)-এর ‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবার সঙ্গে সবার প্রথম দেখা হয় ২০১৯ সালের ৪ মার্চে অরিয়েন্টেশনের দিন। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতের বদৌলতে পরিচয় পর্বের সমাপ্তি ঘটে ভর্তির পরপরই । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং অরিয়েন্টেশনের মাঝে তিন মাসের বেশি গ্যাপ ছিল। আর এই দীর্ঘ সময়টাতে সবাই সবার নিয়মিত কথা বলার মাধ্যমে পরিচিত হই।
তারপর ডিপার্টমেন্ট এর বন্ধুদের সঙ্গে কেটে গেল একবছরের বেশি সময়। সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি ক্লাস-ল্যাবে উপস্থিত থাকা, একসঙ্গে ভার্সিটির অনুষ্ঠানের জন্য রিহার্সেল করা, রাত জেগে রকমারি কারুকাজ করে ভার্সিটি সাজানো কিংবা প্রেজেন্টেশনের প্রস্তুতির ফাঁকে সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া আর ঘুরতে যাওয়া হতো নিয়মিত। তারপর এল ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবস যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম অনুষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের উৎসাহের কমতি ছিল না। ডিপার্টমেন্টের সবাই মিলে ঠিক করলাম স্পেশাল কিছু করার জন্য। নিজ হাতে সবাই পতাকা বানালাম। নাটকের রিহার্সেল করলাম।
আবার জীবনের প্রথম কারো নাচেরও অভিজ্ঞতা হল। আমাদের একাত্মবোধ আমাদেরকে সেদিন একসূত্রে বেঁধেছিল। যদিও বিপত্তি বেঁধেছিল নাটকের কাহিনি কি হবে তা নিয়ে, চার-পাঁচবার স্ক্রিপ্ট চেঞ্জ করার পর যখন আসল স্কিপ্ট হাতে আসল তখন হলো নতুন এক সমস্যা। সবাই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে! কেউ রাজাকার হতে চায় না। পরে অবশ্য দু-চারজনকে ধরে বেঁধে রাজাকার বানানো হল। সেবার নাটকে মুক্তিযোদ্ধা ‘বদি’ নামের চরিত্রটি এত জনপ্রিয় হয় যে আমরা এখনও তাকে এ নামে ডাকি।
তারপর এল বাঙালির সবার প্রিয় বাংলা নববর্ষ। নববর্ষের নানা আয়োজনে সবার একসঙ্গে অংশগ্রহণে আমরা যেন একটা পরিবার হয়ে গেলাম। নববর্ষে দেয়ালিকা প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার মাধ্যমে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম পুরস্কার অর্জন করি। রঙ-বেরঙের কাগজ কেটে করিডোরের মাটিতে বসে একের পর এক ফুল, পেঁচার মতো মুখোশ, কুলো, পাখিসহ আরও অনেক শিল্পকর্মের নিপুণ ছোঁয়া দিয়েছিলাম সবাই মিলে। ১৩ এপ্রিল খাওয়া-দাওয়া ভুলে আমরা বানিয়েছিলাম দেয়ালিকা।
পুরস্কার হিসেবে প্রথমবারের মতো আমাদের ডিপার্টমেন্ট পেল সেরা দেয়ালিকা বানানোর কৃতিত্ব। সে সময়টাতে সন্ধ্যাবেলা সারা ক্যাম্পাসে নকশা করা, আলপনা আঁকা আর সঙ্গে চায়ের আড্ডা আমাদের জীবনকে রাঙিয়ে দিয়েছিল।
এমনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে আঁকা কিংবা নতুন কোনো পরিকল্পনায় সবাই সবার পাশে থেকে সেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই হয়তো আমাদের বলা হয় সময়ের সেরা ডিপার্টমেন্ট। সত্যিই অসাধারণ ভালো লাগা কাজ করে। এখন করোনায় সবাই ঘরবন্দি আছি। চা-দোকানের আড্ডাগুলো, প্রিয় বিটাক মোড়ের শিঙাড়া-সমুচার জন্য দৌড়াদৌড়ি আর ছুটি পেলে ঘুরে বেড়ানো, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরগুলো বড্ড মিস করছি।
কবে সবার সঙ্গে আবার দেখা হবে? কবে আবার দেখব আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসটাকে। এক বুক আশা নিয়ে অপেক্ষা করি নতুন দিনের, যেদিন আবার প্রিয় ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসে বসে ভাবতে পারব আসলেই জীবন কত সুন্দর!