অপূর্ণতার ঈদ
মো. ফাহাদ হোসেন
🕐 ১২:১৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৯, ২০২০
বন্যা আর করোনার কারণে কেমন কাটলো তরুণদের এবারের ঈদ? শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন- মো. ফাহাদ হোসেন
এবারের ঈদে অনেক মানুষই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কেউ গোপনে আর কেউ প্রকাশ্যেই চোখের পানি ফেলছে, আনন্দের রেশও নেই কারো কারো মাঝে। এমনটিই বলেছেন নোবিপ্রবি বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম। তার মতে, চারদিকে ইদ আনন্দের পরিবর্তে করোনার আতঙ্ক। থমকে গেছে মানুষের জীবন-জীবিকা।
মনের কোণে সামান্য আনন্দটুকুও যেন হারিয়ে গেছে। প্রবাদ আছে ‘অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর। দীর্ঘদিন করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে মানুষ যেন অতিষ্ঠ। বিরতিহীনভাবে চলছে কোভিড-১৯ এর যাত্রা। করোনাকালীন দুই ঈদ-ই কাটলো নিরানন্দে।
সবশেষে কামনা করি সকল গ্লানি মুছে যাক, সুস্থ পৃথিবী মুক্তি পাক। সকলেই ফিরে যাক নিজ নিজ কর্মস্থলে।
শৈশব হতে গড়া অভ্যাসকে লালন করে ঈদ উৎসবে যোগ দিতে চেয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইনজিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ। তবে করোনায় অসহায়ত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অংশ নিতে পারে নি এবারের কোরবানীতে, যা তাকে ব্যথিত করে।
এই বিষয়টি খেয়াল রেখে যথাসম্ভব কম আড়ম্বরের মাধ্যমে কোরবানী সম্পন্ন করে গরীবের হক পৌছে দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, গ্রামে থাকার কারণে প্রতিবছরের ঈদ উৎসব খুব প্রাণবন্তভাবেই উদযাপন করা হয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। যেভাবে শৈশব থেকে শুরু করেছিলাম ঠিক সেভাবেই ফজরের নামাজ শেষে কবরস্থান জিয়ারত করে মায়ের হাতের সেমাই খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছি।
যথারীতি ত্যাগের মহিমায় আল্লাহর নামে কোরবানী দিয়েছি। নোবিপ্রবির ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন সায়েন্স-এর শিক্ষার্থী সাবিহা তাসমিম। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদকে নিয়ে মনের মাঝে অনুভব হয় আলাদা আমেজ, আলাদা প্রস্তুতি, অন্যরকম ভালোলাগা। কিন্তু এবছরের ঈদ সত্যি ব্যতিক্রমধর্মী। নিজের এবং প্রিয়জনদের সুরক্ষার জন্য যেমন ঈদ-উল-ফিতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়েছে তেমন এই ঈদেও তা মেনে চলতে হয়েছে।
এবার বাসায় থেকে পরিবারের সাথে সময় কাটানো, বিভিন্ন রেসেপি তৈরি করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের সাথে ঈদ উদযাপন করেছি।
হয়তো এই মহামারি অবস্থার ঈদ পূর্বের মতো হয়নি কিন্তু পরিশেষে একটাই প্রার্থনা পৃথিবী আবার সুস্থ হয়ে উঠুক। সবাই সুস্থ থাকি, নিরাপদে থাকি।
নোবিপ্রবির ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন সায়েন্সেস- এর শিক্ষার্থী খাদিজা খানম উর্মি।
তিনি বলেন, আত্নীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার-পরিজনের সাথে আনন্দ ভাগ করে নেয়ার নামই ঈদ।
কিন্তু এই করোনাকালে অন্য সবার মত আমিও পালন করছি ব্যতিক্রমধর্মী একটি বিবর্ণ ঈদ। ছিলনা নতুন জামা কেনার আগ্রহ। নেই ঈদ সালামী পাওয়া নিয়ে কোন প্রতিযোগিতা। এই বছরের দুটি ঈদই কেটেছে সাদামাটা।
মায়ের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ , ভাই-বোনের সাথে খুনসুটি, ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং ভিডিও কলে আত্নীয়-পরিজনের সাথে দূর থেকে আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমেই কেটেছে বছরের এই বিশেষ দিনটি। গতবছরের মত এবার ইদে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, নিজেকে নতুনভাবে সাজানো, কিংবা অতিথি আপ্যায়ন- এসবের কিছুই হয়ে উঠেনি।
তবুও এমন পরিস্থিতিতে সুস্থ থেকে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করতে পারায় আল্লাহ তায়ালার কাছে জানাই হাজারো শুকরিয়া।