ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অনলাইনে ক্লাস

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
🕐 ১:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলছে অনলাইন পাঠদান। অনলাইন ক্লাসের অভিজ্ঞতা, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। লিখেছেন
-মুসাদ্দিকুল ইসলাম
তানভীর

সবকিছুর পরেও এগিয়ে যেতে হবে
আনিকা তাহসিন নায়েলা
ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী।

মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাই ভবিষ্যৎ ডাক্তার হিসেবে মানবসেবায় নিয়োজিত হতে যেকোনো বাধা মোকাবিলা করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সেজন্য কলেজ বন্ধ থাকলেও থেমে নেই অনলাইন পাঠদান। নেটওয়ার্ক দুর্বলতাসহ হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে সংযুক্ত হতে পারাটা আকাশছোঁয়া আনন্দের মতো। শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারলেও ব্যবহারিক ক্লাসের সুযোগ না থাকায় কিছুটা সমস্যা রয়েই যাচ্ছে। আমি মনে করি নিরবিচ্ছিন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট অনলাইন ক্লাসের পূর্বশর্ত, সেটা নিশ্চিত হলে সকল শিক্ষার্থীর জন্য ফলপ্রসূ হবে। সবকিছুর পরেও এগিয়ে যেতে হবে, এটাই বড় কথা।

ক্লাসের উপস্থিতি ৩০ শতাংশেরও কম
মুহাম্মাদ আল-মাহদী
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি মানুষ একপ্রকার অনিশ্চয়তায় ভুগছে। মানুষের স্বাভাবিক কর্মকা- যেখানে ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে অনলাইন ক্লাসের মত কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করানো কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা নিয়ে আমার সংশয় আছে। শিক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া যে কোন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত। কিন্তু যেখানে আমাদের ইন্টারনেট অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত দেশগুলোর তুলনায় নগণ্য, সেখানে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করা উচিত। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি ৩০ শতাংশেরও কম। নেটওয়ার্ক না থাকা, মোবাইল অপারেটরগুলোর উচ্চমূল্য, শিক্ষার্থীদের মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ার দিকটি সামনে উঠে এসেছে।

টিউশন ফি বিবেচনায় রাখা দরকার
আহনাফ শাহরিয়ার শান্ত
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনার সামনে অসহায় মানবসভ্যতার উন্নয়নের ভবিষ্যৎ কারিগর শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট না করে অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ যুক্তিসম্মত। কিন্তু এর যথাযথ বাস্তবায়নের পথে রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। অনেকসময় বিভাগীয় শহরগুলোতেও ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা হয়, সেখানে গ্রাম্য এলাকায় ভাল ইন্টারনেট সংযোগ কল্পনামাত্র। খ-কালীন কাজ করে, টিউশনি করে পড়ার খরচ চালানো শিক্ষার্থীদের অবস্থা নাজুক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাই সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন যেমন অব্যাহত রাখা উচিত তেমনি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির বিষয়টাও বিবেচনা করা উচিত।

শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই

বুশরা তাবাসসুম ঐশী
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

গত সপ্তাহ থেকে আমাদের অনলাইনে পাঠদান শুরু হয়েছে। কিন্তু আমি কোনোদিনই শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখিনি। কারণ হিসেবে আমি মনে করি অনেক শিক্ষার্থীর গ্রামের বাসায় চলে যাওয়া আর হঠাৎ লোড শেডিং। এই ক্লাসগুলো আমাদের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা নি:সন্দেহে সময়োপযোগী উদ্যোগ। আর যাঁরা এই ব্যবস্থা সফল করার জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা করছেন, সেসব শিক্ষকদের প্রতি জানাই কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি আর্থিকভাবে অসচ্ছ্বল কিংবা পারিপার্শ্বিকতার জন্য অপারগ শিক্ষার্থী, যারা প্রযুক্তির এই সুবিধা নিয়ে ক্লাস করতে পারছে না, তাদের কথা বিবেচনা করে যথার্থ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

ঘরের বাইরে গিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে
মীর মো. মুদ্দাসসের
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আমাদের দেশে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে একটি বিলাসিতা। যাদের বাড়িতে ওয়াই ফাই সুবিধা আছে, তাদের জন্য সহজ। কিন্তু আমরা যারা এই মহামারির শুরুতেই গ্রামে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি, তাদের অনেকের জন্য অনলাইন ক্লাস করাটা অনেক কষ্টের। বাস্তব কারণ হচ্ছে আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। আমাদের দেশে ফোর জি চালু হলেও সেটির সুবিধা সর্বত্র এক নয়। অনেক সময় বাড়ির বাইরে পুকুর পাড়ে বসে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছি।
তাছাড়া এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো এমন অনলাইন ক্লাসে বোঝা সম্ভব না। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কিছু প্রশংসনীয় কাজ করেছে। ক্লাসের ভিডিও আপলোড করা, উপস্থিতির উপর নম্বর বাতিল করা, চার সপ্তাহ পর পর রিভিউ ক্লাসের সুযোগ উল্লেখযোগ্য।
সব বিশ্ববিদ্যালয় এরকম ব্যবস্থা নিলে অনলাইন পাঠদানেও সফলতা আসবে বলে আমি মনে করি।

 
Electronic Paper