ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বন্ধে মুক্তির আনন্দ

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
🕐 ৭:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ০২, ২০২০

এ নিয়ে চারবার। গত সাতদিনে চারবার বৃষ্টি আসি আসি করেও এলোনা। কাল রাতে অবশ্য খানিকটা ঝড় উঠেছিল, কিন্তু বরাবেরর মতো আকাশ ঘন কালো মেঘ শুধুই ছলনা করল। এই মেঘ-বৃষ্টি-রোদ্দুরের লুকোচুরি দেখতে দেখতেই এখন সময় কাটে। সেই যে ৩৭ দিন আগে বাড়িতে এলাম, এখনও খাঁচায় বন্দি পাখির মতো বদ্ধ। কারণতো একটাই, কোভিড- ১৯।

বদ্ধ জীবনেও যে মুক্তির আনন্দ পাওয়া যেতে পারে, সেটা এবার বুঝলাম। ভার্সিটি বন্ধ, তাই রোজ সকাল ৮ টায় ক্লাস ধরার তাড়া নেই।

পড়াশোনাও শিকেয় তুলেছি। ক্লাস শেষে বিকেলে দ্রুত নিউজ পাঠানোর চাপ নেই, সন্ধ্যায় টিউশনিতে যাবার জন্য ছাত্রের তাগাদা নেই। তার বদলে অভ্যাস পাল্টে বেলা করে ঘুম থেকে উঠা, গল্পের বই পড়া, মুভি দেখা, লেখালেখি করা আর ভাইবোনের সাথে নিয়ম করে আড্ডা দেওয়া ও লুডু খেলা। মন্দ লাগছে না। শেষ কবে টানা এতদিন বাড়িতে থেকেছি, মনে পড়েনা। 

সব খারাপের মাঝেও তো কিছুটা ভালো থাকে। এই যেমন লকডাউনে শহরের যান্ত্রিক কোলাহল থেমে গেছে, প্রকৃতির বুকে চিরযৌবন ফিরে এসেছে, নদী দূষণ কমে গেছে, সমুদ্রে প্রাণীর প্রজননের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। জীববৈচিত্র্যের নিয়ন্ত্রণ মানুষের কাছে থেকে কেড়ে প্রকৃতি নিজের হাতে নিয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এমন কিছু ভালো দিক নিজের মধ্যেও খুঁজে পেলাম। ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর থেকেই হোম কোয়ারান্টাইনে আছি। সামাজিক দূরত্ব মানতে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ক্লাস-পরীক্ষার ব্যস্ততায় স্কুল কলেজের অনেক বন্ধুর সাথে আলাপ হয়ে ওঠেনা লম্বা সময় ধরে। তাদের সাথেও কথা বলছি, গ্রুপে আড্ডা দিচ্ছি। দীর্ঘদিনের জমে থাকা কথায় ফেলে আসা মুহূর্তগুলোর স্মৃতিচারণ হচ্ছে।

গৃহে নির্বাসিত মনটাকে প্রফুল্ল রাখতে মাঝে মাঝে ছাদে যাই কিছু সময়ের জন্য। পড়ন্ত বিকেলে প্রকৃতির কাছাকাছি যাবার সামান্য প্রচেষ্টা।

ক্যাম্পাসে এমন কত বিকেল কেটে গেছে লাইব্রেরিতে বইয়ে মুখ গুঁজে কিংবা টিএসসিতে বসে নিউজ করতে করতে। পাখিদের নীড়ে ফেরার দৃশ্য, স্নিগ্ধ সমীরণ, সূর্যাস্ত -কিছুই উপভোগ করা হয়নি। জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেকটা সময়। সে সময় হয়তো ফিরে পাওয়া যাবে না।

তাই বুঝি ভাগ্যবিধাতা এত অস্বস্তির মাঝেও স্বস্তির বিকেলগুলো ফিরিয়ে দিয়েছেন। মুক্তির আনন্দ অনুভব করছি। তবে এমন মুক্তির আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হোক, সেটা কখনোই কাম্য নয়। সুন্দর ধরণীর বুক থেকে করোনার ভয়াল থাবা খুব শীঘ্রই উঠে যাবে, আবারো ক্লাসে ফিরে যাবো, অলসতা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়বো জীবন সংগ্রামে- এমন প্রত্যাশায় এখন প্রহরগুনি।

 
Electronic Paper