ঢাকা, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৯ আশ্বিন ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তারুণ্যের বিজয় ভাবনা

অনিক আহমেদ ও সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ
🕐 ৯:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। একটি স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে তরুণদেরই। বিজয়ের ৪৮ বছর পর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে কী ভাবছে তারা। দেশকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন কী। তরুণদের বিজয় ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন- অনিক আহমেদ ও সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ।

মির্জা গালিব বেগ ছাফি
সান্তাহার সরকারি কলেজ, বগুড়া।
বিজয়ের অনুভূতি সবসময়ের আনন্দের হয়। তবে আনন্দের পাশাপাশি বেদনাও কম নয়। কেননা এই বিজয় এসেছে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে। এ বিজয় অগণিত নারীর সভ্রম হারানোর ফল। আমরা সেই বীর শহীদদের বীরত্বগাথা, আত্মত্যাগের কথা কোনোদিন ভুলব না। ভুলতে পারব না নির্যাতিত মা-বোনদের আত্মত্যাগ। যতদিন এই দেশ থাকবে, ততদিন গভীর শ্রদ্ধায় বাঙালি জাতি তাদের স্মরণ করবে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই নয়, আমাদের বাঙালি জাতির পুরো ইতিহাস অন্তরে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।

মুনিয়া আজম মায়শা
হাজী কাশেম আলী মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।
১৬ ডিসেম্বর প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আমাদের মাঝে হাজির হয়। আমরা নতুন প্রজন্মের তরুণরা বিজয় দেখিনি; কিন্তু আমরা শুনেছি জেনেছি সেই বিজয়ের আত্মকথা। আমাদের সবাইকে বিজয় দিবসের অর্জনকে ধারণ করে নতুনদের কাছে বিজয় দিবসের কথা তুলে ধরতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নির্যাতন-নিষ্পেষিত হওয়ার কথা জানাতে হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যে কামানের গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অসংখ্য প্রাণের আত্মদান, অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, তা জানলে শিউরে উঠবে তরুণপ্রাণ। দেশের প্রতি জাগবে তাদের ভালোবাসা। যে জাতি তার পতাকাকে সম্মান দিতে জানে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব।

আব্দুল্লাহ আল মুবাশ্বির
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
প্রতি বছর বিজয়ের মাস এলেই কেমন যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের বঙ্গবন্ধুর সেই জ্বালাময়ী ভাষণের মাঝে। নিজেকে মিলিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে গগনবিদারী ধর্ষিত মায়ের আহাজারিতে। ইচ্ছা করে অধিকার আদায়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া সেই গরিব কৃষকের রাইফেলের ট্রিগারের সঙ্গে নিজের আঙুলটাকে একবার স্পর্শ করাতে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, আমি তো একাত্তরের সেই মহানায়কদের কাছে এক মস্তবড় কাপুরুষ।

ফাতেমা আক্তার মনিকা
গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা।
লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত আমাদের এই বাংলাদেশ। তবে স্বাধীনতা অর্জন হলেও সর্বস্তরের মানুষের মুক্তি আজও অর্জিত হয়নি। আমাদের বিজয় সেদিনই সফল হবে, যেদিন বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের অবদানে বাংলার ১৬ কোটি মানুষের মুখ থাকবে হাস্যোজ্বল, থাকবে না দুর্নীতি, থাকবে না কোনো অনাহারী, থাকবে না অশিক্ষা। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ।

শাফিউল কায়েস
শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথমে বিজয়ের মাসে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের দেশ, প্রিয় মাতৃভূমি। আমরা নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা দেখে, ইতিহাস পড়ে এবং দাদা-বাবার মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়ানক মুহূর্তের গল্প শুনেছি। তবে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস চাপা পড়ছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভালো করে জানেন না। আমাদের সবার উচিত সোনার দেশ বিনির্মাণের নায়কদের সম্মান এবং তাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা।

হুমাইয়া কবির ঋতু
শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
যে সব বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবনের বিনিময়ে এবং যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আমাদের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড উপহার দিয়েছেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

সাজ্জাদ হোসাইন সৌভিক
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই নয়, আমাদের নবীন প্রজন্মকে জানাতে হবে বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে। এই দেশে জন্মে এই দেশের আলো-বাতাস গায়ে মেখে শুধুমাত্র সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে তারা বড় হচ্ছে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে। আমরা নিজেরা বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করার পাশাপাশি তাদের উদ্বুদ্ধ করতে না পারলে এ লজ্জা আজীবনের। দেশের জন্য কোনো কিছু করার আগ্রহ আমাদের কতটুকু, তার ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ। আমাদের স্বপ্ন থাকা উচিত একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের।

আসাদুজ্জামান শুভ
শিক্ষার্থী, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে ও চেতনা জাগ্রত করাটা ভীষণ প্রয়োজন। এজন্য বইয়ের বিকল্প হিসেবে সিনেমা ও নাটকেই হতে পারে অন্যতম পন্থা। সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসে ১৯৭১ সালের পর পর কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ও নাটক তৈরি করা হয় যেগুলো বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শনী হয়েছিল। তারপর থেকে তেমন একটা হচ্ছে না। আর্থিকভাবে অলাভজনক ভেবে পরিচালকরা এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

 
Electronic Paper