ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাফল্যের গল্প

অধ্যবসায়ই চাবিকাঠি

নাজমুল মৃধা
🕐 ১:১৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আল মাসুম। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে যখন ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন তখন পথচলা এতটা সহজ ছিল না। খুব স্বাভাবিকভাবেই ভালো বিভাগে ভর্তি হতে পারলে মানুষ মনে করে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে অথবা ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তাই শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিন্তা থাকে সে যেন ভালো বিভাগে ভর্তি হতে পারে। কিন্তু মাসুম এসব পাত্তা দেননি। তিনি আরবি বিভাগে ভর্তি হন এবং প্রচুর পড়াশোনা চালিয়ে যান। আর এর ফলাফলও আসে হাতে-নাতে।

অন্য বন্ধুরা যেখানে হতাশায় ডুবে থাকতো তিনি সেখানে প্রাণবন্ত থেকে চালিয়ে গেছেন একাডেমিক অধ্যবসায়। প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত ছিলেন বিভাগ এবং অনুষদে প্রথম, তার অনার্স (সম্মান) সিজিপিএ ৩.৮৪১। মাস্টার্সে সিজিপিএ ৪.০০ পেয়েছেন। অসংখ্য সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন অনেক বার। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছেন তিনটি এবং আরও একটি পাবেন।

তার এই সফলতার পেছনে রয়েছে আরও গল্প। তার আজকের এই সফলতার সিঁড়িতে উঠতে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক কণ্টাকীর্ণ পথ। নেত্রকোনা জেলার এক অজপাড়া গাঁয়ে বেড়ে ওঠা মাসুম নিজের ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য পথচলার মাধ্যমেই পেয়েছেন সামনের দিনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। এখন তার সামনে রয়েছে বড় হওয়ার অনেক সুযোগ। তার ইচ্ছা তিনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হবেন। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন। সফলতার সঙ্গেই পরীক্ষা দিয়েছেন এবং তার প্রিয় পেশায় উত্তীর্ণ হবেন বলে বিশ্বাস করেন। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হতে সব ধরনের যোগ্যতাই তার মধ্যে বিরাজমান।

মধ্যবিত্ত জীবনের জটিলতা পেরিয়ে, সমস্ত সমালোচনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পার হতে চান বাকিটা রাস্তা। তার আজকের এই সফলতার পেছনে তার মায়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং তার বড় বোনের দৃঢ় মনোবলই প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারবে এমন বিশ্বাস তার আশপাশের কারোর ছিল না কিন্তু মা এবং বোনের বিশ্বাস ছিল মাসুম পারবে। মা ও বোনের ভালোবাসা আর সমর্থনে মাসুমের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। পরিবারের আর্থিক সমস্যায় যখন পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তখনো তার মা আশা ছেড়ে দেননি। তার মাথায় হাত রেখে দিয়ে গেছেন অনুপ্রেরণা।

বিভাগের সেরা রেজাল্ট এখন তার। এখন এমফিল পিএইচডি করছেন। বিশ্বের আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো থেকে তার সামনে আসছে স্কলারশিপের সুযোগ।

মাসুম বলেন, ‘মানুষ সমালোচনা করেনি তা নয়, তবে যে যাই বলতো কারও কথা শুনতাম না। আমি আমার কাজ চালিয়ে গিয়েছি। বিশ্বাস করি প্রকৃতিকে যাই দেওয়া হবে তার প্রতিদান সে দেবে। পরিশ্রম করেছি ইনশা আল্লাহ পরিশ্রমের ফল এক দিন পাব। নিজেকে কখনো ছোট ভাবিনি, প্রচুর অধ্যবসায় করেছি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাই করা উচিত’।

 
Electronic Paper