ভেটেরিনারিতে নারীদের অগ্রযাত্রা
ছিয়াদ খান
🕐 ৪:০৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০১৯
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবিকার উৎস হচ্ছে কৃষি। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছে এদেশের কৃষিবিদরা।
খাদ্য তালিকার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো প্রাণিজ আমিষ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে দেশের ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েটদের অবদান চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের মোট রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ানদের সংখ্যা প্রায় ৬৭০০ এবং এর মধ্যে নারী ভেটেরিনারিয়ানদের সংখ্যা ১০৫৪ জন (সূত্র : বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল, ২০১৯)।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মরত নারী ভেট রয়েছেন প্রায় ১৫০ (সূত্র পারসোনাল ডাটা শিট, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, ২০১৯)। বেসরকারি পর্যায়ে প্রাইভেট কোম্পানি, ফার্ম, ভেটেরিনারি ডায়াগনস্টিক ল্যাব, রিসার্চ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত নারী ভেট রয়েছে প্রায় ১৫০ জন। বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি ফ্যাকাল্টিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত নারী ভেট প্রায় ১০০ জন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও প্রবল আগ্রহ নিয়ে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এই পেশাকে। কয়েকজন নারীর সাহসী সিদ্ধান্তই পরবর্তীতে নারীদের এই পেশার সঙ্গে জড়িত হতে উৎসাহিত করেছে।
এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নারী ভেটেরিনারিয়ানদের মতামত তুলে ধরা হলো।
এ বিষয়ে নারী ভেটেরিনারিয়ান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজেদা সুলতানা বলেন, নারী ভেটেরিনারিয়ানরা দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছেন। ভেটেরিনারি বলতে পশু-পাখি পালন ও প্রাণী চিকিৎসাকে বোঝায়।
পশু-পাখি পালনে, চিকিৎসাসেবার জন্য যথেষ্ট ধৈর্য ও মমতা প্রয়োজন যা নারীর মধ্যে বিদ্যমান। প্রাণী সেবার মতো চ্যালেঞ্জিং প্রফেশনকে বেছে নিচ্ছেন। নারী ভেটরা বিসিএস পরীক্ষার মধ্যেমে উত্তীর্ণ হয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত আছেন এবং মাঠ পর্যায়ে সুনামের সঙ্গে প্রাণী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে টিকা উপাদনে ও গবেষণা খাতে বিশেষ অবদান রাখছেন। ভেটেরিনারি ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোতে নারী ভেট প্রায় শতভাগ।
নারী ভেটেরিনারি শিক্ষকদের বেশির ভাগ বিদেশ থেকে পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লব্ধ জ্ঞানের প্রসার করছেন এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করছেন। তাছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি, ফার্ম, এনজিওগুলোতে নারী ভেটরা প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে প্রত্যেক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও প্রাণী কল্যাণে নারী ভেটেরিনারিয়ানরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ডা. লিটা বিশ্বাস বলেন, ভেটেরিনারি মূলত পশু ও প্রাণী চিকিৎসা বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এটা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। উপরন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সেবা প্রদান জন্য এটি অন্যান্য পেশার তুলনায় আর বেশি চ্যালেঞ্জিং। বর্তমানে নারীরা তাদের নিজ যোগ্যতায় সব কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে নেই ভেটেরিনারি পেশাতেও।
সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাকে পেছনে ফেলে নারীরা এগিয়ে আসছেন এই পেশায়। ভেটেরিনারিতে পড়াশোনা করে নারীরা আজ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গবেষণা ভিত্তিক কাজ করছেন যা দেশের প্রাণিজ আমিষের বাড়তি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ভেটেরিনারিতে পড়াশোনা করে আজ নারীরা ভালো উদ্যোক্তা হতে পারেন। এটি দেশের বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ভেটেরিনারিতে পড়াশোনা করে নারীরা আজ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করছেন।
শিক্ষার্থী রুপা আক্তার বলেন, পূর্বের তুলনায় আমাদের দেশেও নারীরা বর্তমানে ভেটেরিনারি পেশার মতো চ্যালেঞ্জিং জব বেছে নিচ্ছেন। ফিল্ড পর্যায়ে এখন অনেক নারী ভেটেরিনারিয়ান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশ বিদেশে গবেষণা করছেন। তাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। এভাবে ভেটেরিনারি পেশাতে নারীরা এগিয়ে এলে দেশের প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে মাইলফলক পরিবর্তন আসবে।