শিক্ষা বাজেট ভাবনা
রুমান হাফিজ
🕐 ২:৩০ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০১৯
সম্প্রতি ঘোষিত হয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট। প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি পায়। সে অনুযায়ী শিক্ষা খাতের বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ে। মোট জিডিপির অনুপাতে আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র ২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে এ বরাদ্দের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট নিয়ে কী ভাবছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা? কথা বলেছেন- রুমান হাফিজ।
শিক্ষা খাতকে অবহেলা দুঃখজনক
মামুন অর রশিদ
সহকারী অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলেও আমাদের দেশে সেই দণ্ড সোজা না থেকে দিনের পর দিন সেটি নূয়ে পড়ছে। যাহা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য কলঙ্কজনক। প্রতিবছরই আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বাজেটে শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হলেও আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো চিত্র। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা খাত নানাবিধ অব্যবস্থাপনায় ভরপুর। একে এখনই ঢেলে সাজাতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষায় বরাদ্দ দ্বিগুণ করতে হবে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য শিক্ষায় গবেষণা খাতের হিস্যা থাকে খুবই নগণ্য। এখনো অনেক বিদ্যালয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করতে দেখা যায়। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখান বেতনভাতার জন্য শিক্ষকদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়। প্রতিবছরই শিক্ষা খাতের বাজেটের অনুপাত হ্রাস কোনোভাবেই শিক্ষা অনুরাগী বাজেট বলা যায় না। শিক্ষা একটি দেশের ভিত্তি সেই ভিত্তিই যদি নড়বড়ে হয়ে যায় তবে সেই দেশ কাক্সিক্ষত সাফল্য লাভ করতে পারে না। উন্নতি, সমৃদ্ধি যাই বলি না কেন গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা ছাড়া সম্ভব না। সুতরাং দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বাজেটে শিক্ষা খাতকে অবহেলার কোনো সুযোগে নেই।
বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হোক
আবু হানিফ
শিক্ষার্থী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
শিক্ষা যে কোনো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাত। আমাদের দেশের জন্য তা আরও বেশি। শিক্ষার ভিত্তিমূল হলো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর। প্রাথমিক শিক্ষার গোড়া মজবুত না হলে, পরবর্তী স্তরের শিক্ষা জাতির জন্য তেমন কাজে আসে না। এদেশের বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে কর্মমুখী শিক্ষায় জোর দেওয়া উচিত। এ ছাড়া গবেষণা ক্ষেত্রে বেশি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া উচিত। নতুন বাজেটে শিক্ষায় অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত এ বাজেটে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এটি শিক্ষাবান্ধব বাজেট। ইউনেস্কোর মতে, একটি দেশের বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে হওয়া উচিত। এ বছর ২০ শতাংশ না হলেও বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি। সুতরাং অচিরেই ২০ শতাংশের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
দুঃখের বিষয় দেশে শিক্ষা খাতে দুর্নীতি হয় সবচেয়ে বেশি। শিক্ষা খাতে দুর্নীতি রোধ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য অভিভাবকসহ সামাজিকভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে জবাবদিহিতা তৈরি করতে হবে। তাই মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার এবং বণ্টন উভয়ই নিশ্চিত করতে হবে বলে আমি মনে করি।
শিক্ষা খাতকে আরো সমৃদ্ধিশালী করতে হবে
জুরানা আজিজ
সহকারী অধ্যাপক শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
উন্নয়নের দাবি নিয়ে যেসব খাত রয়েছে তার মধ্যে বরাদ্দের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত।
শতকরা হিসাবে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের জন্য, যা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এমন বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
তবে মোট জিডিপির অনুপাতে আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র ২ শতাংশ। এটা খুবই অপর্যাপ্ত।
যেটুকু হয়েছে সেটার যথাযথ প্রয়োগ শিক্ষা খাতকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এজন্য অভিভাবকসহ সামাজিকভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে জবাবদিহিতা তৈরি করতে হবে। ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি ও যথাযথ ব্যবহার দুই-ই নিশ্চিত করতে হবে।
বরাদ্দের পরিমাণ আশানুরূপ হয়নি
নাজনীন সুরভী
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ঘোষিত হয়েছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট। প্রতিবছরের মতো শিক্ষা খাতে বরাদ্দেরর পরিমাণ আশানুরূপ হয়নি। মোট জিডিপির কেবল দুই শতাংশ, যা অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কম। যে শিশুরা, তরুণরা একদিন দেশের হাল ধরবে, তাদের জন্য ব্যয় করাটা যদি বিনিয়োগই হয়, তাহলে এই বিনিয়োগের পরিমাণ আরেকটু বাড়াতে কি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? প্যালেস্টাইনের মতো একটা দেশ যেটা কিনা স্বীকৃতি পায়নি তারা খরচ করছে মোট জিডিপির ৫.৭ শতাংশ। আমাদের মতো স্বাধীন রাষ্ট্রের পড়াশোনার খাতকে কম গুরুত্বের চোখে দেখা জাতি হিসেবে অবশ্যই লজ্জার। আমরা পাল্লা দিতে চাই ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দেশের চাইতে। শিক্ষিত জাতিই পারে দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে। শিক্ষা খাত যত উন্নত হবে ততই উন্নত হবে আমার দেশ, দেশের মানুষ। এদিকটায় গুরুত্ব দেওয়া খুব প্রয়োজন।