ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভ্রমণ

রাজবাড়ির আঙ্গিনায়

মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ
🕐 ১২:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০১৯

এই চেয়ারটিতে বসেই এক সময় বিশাল ভূখণ্ড শাসন করেছে দিঘাপতিয়া রাজবংশের দয়ারাম থেকে প্রতিভানাথ রায় পর্যন্ত অনেক রাজা। আজ আমরা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। পরশ বুলিয়ে অনুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করছি। রোমন্থনে ফিরে যেতে চাইছি তিন শত বছরেরও বেশি পেছনে।

ভাবতেই অবাক লাগছে আজকের এই নির্জন বাড়িটিই ছিল এক সময়ের কোলাহলপূর্ণ সাড়ম্বর রাজপ্রাসাদ। রাজা, রানী, প্রজা, ভৃত্যে সদাই ব্যস্ত থাকত এর প্রতিটি প্রাঙ্গণ। তারা আজ না থাকলেও ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদটি আজও আছে। আছে তাদের ব্যবহারের সামগ্রীগুলোও। আর সেসব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো দেখতেই রাজ বাড়ির আঙ্গিনায় আমাদের পদচারণা।

বলছিলাম নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনের কথা। সাড়ে ৪১ একর জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম তিনশত বছরেরও বেশি প্রাচীন এই রাজবাড়িটি। ঐতিহ্যবাহী এই প্রাসাদটি দর্শনের জন্যএর আঙ্গিনায় উপস্থিত ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিভাগের বার্ষিক শিক্ষাসফরের জন্য এবার নির্ধারণ করা হয় নাটোর শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরের এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে।

যাত্রাপথে চোখে পড়ে মহাসড়কের দুইপাশে সারি সারি আমগাছ। সবে ধরা আমসহ গাছগুলো পথের সৌন্দর্য অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। পথের দুপাশে এরকম সারিবদ্ধ আমগাছ দেখে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়।

প্রবেশ পথের ফটকটি আসলে একটি বিরাটাকৃতির পাথরের ঘড়ি। ঘড়িটার পাশে বড় ঘণ্টাও। জানা যায় রাজা দয়ারাম ইংল্যান্ড থেকে আনিয়েছিলেন এই ঘড়ি।

ভেতরে ঢুকেই মনে হলো এ যেন এক সবুজ চত্বর। প্রাসাদের পুরো এলাকাজুড়ে বিভিন্ন রকমের গাছের সমারোহ। ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ অনেক প্রাচীন দূর্লভ গাছও সৌন্দর্য বর্ধক ব্রাউনিয়া ও ককেসিয়া বৃক্ষে সজ্জিত প্রাসাদের প্রতিটি প্রাঙ্গণ। নাম না জানা কিছু গাছের ফুল দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আমগাছগুলোতে ছোট ছোট আম ধরে আছে। প্রতিটি গাছের সঙ্গে রয়েছে ফুল বা ফল না ছেঁড়ার জন্য সতর্কবাণী সংবলিত পোস্টার। ভেতরে ঢুকতেই শুরু হলো নিজেদের মতো করে গ্রুপ ভিত্তিক ঘোরাঘুরি। সেই সঙ্গে চলছে সেলফি আর ফটোগ্রাফি। প্রথমেই চোখে পড়ল রাজবাড়ির বিশালাকৃতির কামান। সবাই কামানের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে চললাম অন্যদিকে। বিশাল প্রাসাদের পুরো এলাকা ঘোরা সম্ভব না। তাই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো ঘুরে দেখছি সবাই।

প্রাসাদের পুরো এলাকায় গোলপুকুর, পদ্মপুকুর, শ্যামসাগর, কাছারিপুকুর, কালীপুকুর ও কেষ্টজির নামে ছয়টি পুকুর আছে। পুকুরের শান বাঁধানো ঘাটগুলো প্রাসাদের ঐতিহ্য বহন করছে। প্রাসাদের বামপাশে পুকুর ধারে গিয়ে দেখতে পেলাম দৃষ্টিনন্দন বাগান। বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুলের সমাহারের মধ্যে ফুটে থাকা সূর্যমুখী ফুলের সারিগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

প্রাসাদের বাইরের এলাকা ঘুরে ১৫ টাকা মূল্যের টিকিট নিয়ে প্রবেশ করলাম উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালায়। উত্তরা গণভবনের পুরনো ট্রেজারি ভবনে ২০১৮ সালের মার্চে এই সংগ্রহশালাটি স্থাপিত হয়। অতীতের সঙ্গে বর্তমানের মেলবন্ধন তৈরি করেছে এই সংগ্রহশালাটি। সংগ্রহশালার করিডোরে রয়েছে রাজা প্রমাদানাথ ও সস্ত্রীক রাজা দয়ারামের ছবি ও রাজবাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণ। সংগ্রহশালায় গিয়ে দেখা মিলল রাজ সিংহাসন, রাজার মুকুট, গাউন, পালঙ্ক, ঘূর্ণায়মান চেয়ার, টেবিলসহ রাজপরিবারের ব্যবহারের অনেক জিনিস। সেই সঙ্গে আছে ব্যক্তিগত ডায়েরি, আত্মজীবনী, পাণ্ডুলিপি ও অনেক চিঠি। ভবনের কেয়ারটেকার ঘুরে ঘুরে দেখালেন রাজদরবার, মিলনায়তন, শয়ন কক্ষ, বিশ্রামকক্ষ, বিনোদন কক্ষসহ সবগুলো কামরা। সেই সঙ্গে বর্ণনা করে শোনালেন প্রতিটি কামরার ব্যবহার সম্পর্কে। প্রতিটি কক্ষেই দিনের বেলায় সূর্যের আলো প্রবেশের দারুণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গণভবনের একটি সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অংশ ইতালিয়ান গার্ডেন। ইতালি থেকে আনা এর আসবাবগুলো দেখে মুগ্ধ হতে হয়। এখানে আছে মার্বেল পাথরের বিভিন্ন মূর্তি। প্রাসাদের একটি অতুলনীয় অংশ রানীর টি-হাউস।

ঐতিহ্যবাহী এই স্থানের অনেক কিছু দেখে বের হলাম গণভবন থেকে। বেরিয়ে গাড়িতে কয়েক মিনিটের দূরত্ব পেরিয়ে পৌঁছলাম এক সময়ের নাটোরের জমিদার রানী ভবানীর রাজবাড়িতে।

 
Electronic Paper