ক্যাম্পাসে স্মৃতিময় আড্ডা
সাজিদ আহমেদ
🕐 ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ০৯, ২০১৯
‘আড্ডা’ বিশ^বিদ্যালয় জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি শব্দ। যা ছাড়া বিশ^বিদ্যালয় জীবনটাই পানসে। ক্লাসরুমের বেঞ্চ থেকে টং দোকানের ভাঙা চেয়ার, প্রতিটি স্থানে এই আড্ডা হয়ে থাকে বছরের পর বছর। স্বপ্নপূরণের অন্যতম স্থান হলো বিশ্ববিদ্যালয়। এখানেই জীবনটা শুরু হয় নব উদ্যমে, নতুন আঙ্গিকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশে, তাদের ধ্যান-ধারণা ও নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
মানুষের কর্মব্যস্ত জীবনে একমাত্র মজাদার অবসর হলো আড্ডা। বিশ^বিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়। আড্ডা ভালোবাসে না এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া সত্যি অসম্ভব। মূলত, ক্যাম্পাসে বন্ধুত্বের শুরুটাই হয় ক্লাসরুমের আড্ডা থেকে। শুরু হয় স্বপ্ন দেখা, স্মৃতিময় হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস জীবন। মানুষের জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন আড্ডার মুহূর্ত দেখা পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। অবাধ স্বাধীনতাময় এই শিক্ষাজীবনে আড্ডা থেকে অর্জন করা যায় এমন কিছু সম্পদ যা একটি মানুষের কর্মময় জীবনের পাথেয় হয়ে ওঠে তার কর্মস্থলে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে নতুনরূপে আড্ডা দিতে কার না ভালো লাগে!
আবার যেখানে আড্ডাই নাকি বাঙালির প্রাণ, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন এসব কিছুর ফাঁকেও চলে তরুণদের আড্ডা। আড্ডার আসরেই ক্লাসের কাজ সেরে নেওয়া যায় অনেকাংশে। আড্ডার বিষয়বস্তুও চলে সফলতা-ব্যর্থতা, পাওয়া না পাওয়ার গল্প, গান-বাজনা, তর্ক-বিতর্ক, সামাজিক-রাজনৈতিক বা পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে। তবে ক্যাম্পাস জীবনে হাস্যরসের আড্ডা হয় সবচেয়ে বেশি। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে খোঁচা মেরে কথা বলা ছাড়া আড্ডা যেন জমে ওঠে না। এই আড্ডাতেই জড়িয়ে অনেকেই খুঁজে পেয়েছে নতুন বন্ধু, কেউবা আবার মনের মানুষ। আবার এই আড্ডা অনেককে করে তুলেছে আত্মবিশ্বাসী।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই/কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই.....।’ আড্ডায় মান্না দে-এর গাওয়া এই গানটির সুরের সঙ্গে সুর মেলায়নি এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। হাতে চায়ের কাপ, আড্ডা দিতে দিতে কখন যে শেষ হয়ে যায় বা গেছে তার দিকে কারও খেয়ালই নেই। সবাই আড্ডায় ব্যস্ত, এই আড্ডাতেই জেগে থাকে ক্যাম্পাস, জেগে থাকে তারুণ্য। যেন শিল্প, সাহিত্য, বন্ধুত্ব, আড্ডা ও ভালোবাসার মায়ায় ঘেরা। গানে গানে মুখরিত হয় তারুণ্যের প্রাণোচ্ছলতা। কেউ পড়াশোনায় মনোযোগী, কেউ রাজনীতি-সংগঠন করছে, কেউ বা মেতে আছে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে একটু কোলাহলমুক্ত ভালোবাসার অন্য ভুবনে, কেউবা আবার এসব কিছু বাদে আড্ডা দিতেই ব্যস্ত।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আড্ডার পসরাও বাড়তে থাকে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে। বিকালে যেন আরও প্রাণময় হয়ে ওঠে, সূর্যটা ডুবে যাওয়ার আগে একটু আড্ডা না দিলেই যেন সারাটা দিন মাটি। যা বন্ধুত্বের অকৃত্রিম মেলবন্ধনকে আরও মজবুত করে তোলে। শহরের কোলাহলমুক্ত, বৃক্ষে পরিপূর্ণ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসেও দেখা যায় অসংখ্য আড্ডার আসর। বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আড্ডা চলে দিনভর। বিশ্ববিদ্যালয় পার্ক, ক্যান্টিন, গোলচত্বর, সেন্ট্রাল ফিল্ড, হতাশার মোড়, নীলদীঘির পাড় সব জায়গায় চলে তরুণদের আড্ডা। নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসের এ আড্ডা চলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। আড্ডা হোক শিক্ষণীয়, আড্ডায় বেঁচে থাকুক ভালোবাসা।