বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্ত জ্ঞান চর্চার চারণভূমি
নাজমুল মৃধা
🕐 ১:৫০ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৯
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিনোদন এবং সংস্কৃতি চর্চার জন্য রয়েছে শহীদ সুখ রঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। কেন্দ্রটির ভবিষ্যৎ ও বর্তমান কার্য পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন পরিচালক অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাজমুল মৃধা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থীই জানে না এখানে কি হয়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ সুখ রঞ্জন সমাদ্দার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংস্কৃতি চর্চার বিষয়ে আগে অনেক শিক্ষার্থী অবহিত ছিল না। এখানে আসলে কি হয়, এই কেন্দ্রটির কাজ কি? কিন্তু বর্তমানে আমরা চিঠির মাধ্যমে প্রত্যেকটি বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছি যেন ছেলেমেয়েরা এখানে এসে নাটক, আবৃত্তি, গান ইত্যাদিও চর্চা করে। যেসব শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা আছে কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না তাদের জন্য এখানে বিকালে সেশন ভাগ করে দেওয়া আছে যেমন আবৃত্তির জন্য এক সেশন, ঢোল-তবলার জন্য এক সেশন, আবার গান শেখার জন্য অন্য আরেকটি সেশন। এ ছাড়া বিতর্কের জন্য এক সেশন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নাম দিয়ে ২-৩ দিন পর টিএসসিসিতে আর ধারাবাহিক হচ্ছে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে একটি আদর্শ সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে জায়গাটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
টিএসসিসির উদ্যোগে প্রতিযোগিতামূলক কী কী কর্মসূচির আয়োজন করেছেন?
অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান : বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা গত বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে ৭-১০ জুলাই পর্যন্ত আন্তঃহল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ জুলাই ২০১৮ সালে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করি। রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীর ওপরে আমরা স্মরণিকা বের করেছি। সেখানে আমরা নন্দিতা সরকারকে নিয়ে এসে তাকে দিয়ে পারফর্ম করাই। এ ছাড়া নজরুলজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজনও করি আমরা। যেখানে অতিথি শিল্পীদের পাশাপাশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাও অংশগ্রহণ করে। সব থেকে বড় কথা, এখন টিএসসিসিতে শিক্ষকরাও আসেন।
টিএসসিসির ইতিবাচক কী কী পরিবর্তন হয়েছে?
অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান : আগে আমাদের টিএসসিসিটির একটি অস্পষ্ট নীতিমালা ছিল। যেমন শিক্ষার্থীরা টিএসসিসির জন্য টাকা দিলেও সে টাকাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় নিজস্ব ফান্ডে জমা হতো কিন্তু বর্র্তমানে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করেছি। আমার আগের একজন পরিচালক টিএসসিসির জন্য আলাদা একটি অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা করেন ফলে শিক্ষার্থীরা এখন টিএসসিসির বরাদ্দে যে টাকা দেয় তা টিএসসিসির নিজস্ব ফান্ডে জমা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠান সফলভাবে পরিচালনার জন্য আমরা একটি শক্তিশালী জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছি। আগে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী করা হতো অনেক পরে। অনেক প্রতিযোগী পড়াশোনা শেষ করে চলে গেলে পরে ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট দেওয়া হতো। কিন্তু এখন আর তা হয় না। আমরা প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পুরস্কার বিতরণীর ব্যবস্থা করেছি।
বর্তমান প্রযুক্তির জন্য সংস্কৃতি চর্চাও বিভিন্ন সংগঠন কমে যাচ্ছে। যেহেতু আপনারা সংস্কৃতি চর্চার জন্যই কাজ করে থাকেন সে ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সংগঠন বৃদ্ধিতে আপনারা কী ভূমিকা রাখছেন?
অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান : হ্যাঁ, এটা ঠিক প্রযুক্তি হাতের মুঠোয় আসায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি চর্চায় নিয়োজিত সংগঠনগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য টিএসসিসি খুব কম টাকায় ভাড়া দিচ্ছি যাতে তারা এখানে বেশি বেশি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং উৎসবের আয়োজন করতে পারে। এ ছাড়া অডিটোরিয়াম মাত্র এক হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আন্তঃহল প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের খেলোয়াড়ের সমান মর্যাদা দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। আশা করি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংস্কৃতি চর্চা বৃদ্ধিতে আপনারা আগামীতে কী কী পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছেন?
অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান : আমরা লোক উৎসব, আবৃত্তি বিতর্কের ওপর কর্মশালা করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি। এ ছাড়া ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা (যেখানে ছাত্ররা গাইবে শিক্ষকরাও গাইবে), মুক্তিযুদ্ধ উৎসব ইত্যাদি আয়োজন হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে একটি লোক উৎসব আয়োজনের ইচ্ছা আছে। এ ছাড়া প্রতিযোগী, দর্শক এবং পরিবেশ বিবেচনা করে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনকে এসিসহ বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নের জন্য ১১ কোটি টাকার বাজেট আমরা হাতে নিয়েছি। আসলে টিএসসিসির কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।