হৃদয়জুড়ে মা...
রুমান হাফিজ
🕐 ২:৪১ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৯
‘এই জীবনে আমার কোনো বিপদ আপদ চায় না মা যে/ রোজই দেখি চোখের পানি ফেলছে বসে জায়নামাজে।’ ছড়াকার কামরুল আলমের এই ছোট্ট দুটি পঙ্ক্তি মায়ের পরিচয় করিয়ে দিতে যথেষ্ট।
‘মা’- ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কী বিশাল তার পরিধি! সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দটা শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার। মার অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের গর্ভধারিণী, জননী।
জন্মদাত্রী হিসেবে আমার, আপনার, সবার জীবনে মায়ের স্থান সবার ওপরে। তাই তাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিনের হয়তো কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯১৪ সালের ৮ মে থেকে। সমীক্ষা বলছে, বছরের আর পাঁচটা দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি মানুষ নিজের মাকে ফোন করেন, তার জন্য ফুল কেনেন, উপহার দেন। আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো, মায়েদের কি আলাদা করে কোনো উপহারের প্রয়োজন পড়ে? তারা যে সন্তানের মুখে শুধু ‘মা’ ডাক শুনতে পেলেই জীবনের পরম উপহারটি পেয়ে যান।
এই যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জানাচ্ছিলেন এভাবেই, ‘পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর সম্পর্ক হলো সন্তান ও মায়ের। মায়ের মতো এতটা কষ্ট এতটা ত্যাগ কেউ স্বীকার করে না। আর আমার কাছে আমার মা হলো আমার সবটুকু। মাকে ছাড়া নিজের অস্তিত্বটাই যেন কল্পনা করতে পারি না। শাসন আর আদরের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন মা আমাদের। আমার অনুপ্রেরণা, সাহস আমার মা। নিজের অধিকারগুলো আদায় করা মা থেকেই শিখেছি। জীবনের সঠিক গাইডলাইনগুলো এই মানুষটি থেকেই পেয়েছি। মায়ের একটা গুণ হলো খুব সহজেই মিশতে পারে। বন্ধুর মতোই নিজের সারাদিনের কথাগুলো বলা হয়ে ওঠে মাকে। নিজের কোনো কাজের কারণে যখন মায়ের মুখে হাসিটা দেখতে পাই তখন নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষটা মনে হয়। কখন হয়তো জড়িয়ে ধরে বলা হয়নি মাকে কতটুকু ভালোবাসি তাই দূর থেকেই বলছি ‘অনেক ভালোবাসি মা।’
স্মৃতির ঝাঁপি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মালিহা ইয়াসমিন শোনালেন একটু ভিন্ন গল্প, আমার মা একজন নারী হিসেবে যতটা আদর্শ, ততটাই পরিপূর্ণ তার মাতৃত্বে। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে বেশ দামি এক জামা পছন্দ করে বসলাম। মা কিনে দিতে পারেননি বলে বাসায় ফিরে কাঁদিনি যদিও, কিন্তু মেয়ের রাজ্যের মন খারাপ মায়ের চোখ এড়ায়নি। মা তার কয়দিন পরই আমাকে না জানিয়ে ঠিক ঠিক সেই জামা বানানোর কাপড়সহ সবকিছু কিনে আনেন। চাঁদরাতে আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর পাশের রুমে সেলাই মেশিন নিয়ে বসেন যাতে শব্দে আমার ঘুম না ভেঙে যায়। সকালে উঠে দেখি, দোকানে ঝোলানো সেই হুবহু জামাটা আমার পড়ার টেবিলের ওপর রাখা। মা সারারাত এক হাতে ঈদের রান্না গুছিয়েছেন আর আমার জামা সেলাই করেছেন। আমি একদিকে আনন্দে লাফাচ্ছি, মা আমার খুশি দেখে চোখ মোছেন বারবার! বড্ড দেরিতে সে আবেগের মর্মোদ্ধার করতে পেরেছিলাম আমি। এরপর আর কখনোই আমার জীবনে এত খুশির ঈদ আসেনি। পৃথিবীর সব মায়েদের প্রতিটা নিঃশ্বাস হোক স্বস্তির, বেঁচে থাকা হোক ভালোবাসায়।’
মাকে ছেড়ে কয়েকশ মাইল দূরে থাকার কষ্টটা খুব বেশি ভার হয়ে আসে, যখন দুঃসময়ে সামনে পাই না। মাকে ছেড়ে থাকার সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো, তার পরিশ্রমী মুখখানা না দেখে থাকা। মায়ের স্মৃতিচারণ করে এভাবেই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদুল হাসান বাপ্পা, ‘মা’ আজ আমি তোমার থেকে অনেক দূরে। এই ইট পাথরে গড়া ব্যস্ত শহরে সবাই স্বার্থপর। কেউ এখন তোমার মতো আদর করে ‘খোকা’ বলে ডাকে না। বকে না সন্ধ্যা নামছে খেলা ছেড়ে বাড়ি চল। নিঘুম পূর্ণিমা রাতে আকাশ দেখিয়ে কবিতার ছলে বলে না।
মা আমাদের মায়ার বাঁধনের কাছে পথ দূরত্ব কিছুই নই। অন্তর চক্ষু দিয়ে সব সময় তোমায় দেখি। আমার বুকের বা পাশেই তোমার বসবাস, কম্পিত হচ্ছো বারবার। অনেক মিস করি তোমাকে।’ পৃথিবীতে সবাই বদলে যেতে পারে, কিন্তু মা কখনোই বদলায় না। মা আমাদের জীবনে এমন একজন যে আমাদের ভালোবাসে এক্কেবারে তার নিজের অংশ হিসেবে, আর তা সঠিক অর্থেই আমরা সত্যিই তো তাদের নিজের অংশই হই, তাই তার যে ভালোবাসা আমাদের প্রতি তা কখনোই বদলায় না। জগতের সব মায়ের ভালো থাকুক, অনেক ভালো।