চাঁদের পাহাড়ে একদিন
মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু
🕐 ২:৩০ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৯
রুটিন ওয়ার্কের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আনন্দের জোয়াড়ে কে না চায় গা ভাসাতে। সব নিয়মের বাঁধ ভেঙে হারিয়ে যেতে চায় দূরের কোনো অপরিচিত জায়গায়। আবিষ্কার করতে চায় জীবনের ভিন্ন মানে। মেটাতে চায় মনের খোরাক। তাই শিক্ষা সফর শিক্ষার্থীদের নিকট একটি কাক্সিক্ষত বিষয়। আর তা যদি হয় প্রতিদিনে চলার সঙ্গীদের সঙ্গে তবে তো কথাই নেই। আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও এর ব্যতিক্রম হলাম না। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও মহাস্থানগড় ভেন্যু ঠিক হলো। আমরা দলবেঁধে বিভাগের স্যারদের কাছে গেলাম।
এর মধ্যে মর্তুজা স্যার আমাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য একবারেই রাজি হলেন। স্যাররা সবাই যেতে না পারলেও আমাদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। আমরা যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি বরাদ্দের জন্য আবেদন করে পাওয়া গেল না। গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। হাতে সময়ও খুব কম। সমস্যা নিয়ে গেলাম মর্তুজা স্যারের কাছে। স্যার ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি রিকুইজিশন নিয়ে দিতে চাইলেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
সব জল্পনা কল্পনা শেষে আমরা চূড়ান্তভাবে ট্যুরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করলাম। আমি, হাবিব, অসীম, ফয়সাল, সাব্বির, মেহেদী, শাকিল, দিনার, হিমু, জয়, আঞ্জিরসহ আরো কয়েকজন বন্ধু মিলে ট্যুরের সব পরিকল্পনা ও কাজ শুরু থেকেই করে আসছিলাম। মেয়েদের মধ্যে নাজিফা, মৌ, সৃষ্টি, রিমা, নিতুসহ আরো কয়েকজনও মেয়েদের টাকা তোলা ও অন্যান্য কাজে আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা প্রত্যেকে কাজ ভাগ করে নিলাম। আমাদের যাত্রা শুরু হলো। গত দুই বছরে একত্রিতভাবে এটাই ছিল আমাদের ব্যাচের প্রথম ট্যুর। পাহাড়পুর গিয়ে পৌঁছলাম দুপুর একটায়। এরপর তড়িঘড়ি করে গাড়ি পার্কিং, প্রবেশের জন্য টিকিট করা, রান্নার ব্যবস্থা করাসহ সব প্রস্তুতি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করলাম আমরা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী স্পটটি ঘুরে দেখা হলো। পুরো বৌদ্ধবিহার ইবির লোগো লাগানো সাদা টি-শার্টে ভরপুর হয়ে গেল। আমরা সংখ্যায় কম হলেও গ্রুপ আকারে ঘোরায় দল বেশি ভারী লাগছিল। পাহাড়পুর মহাবিহার নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত। এর প্রকৃত নাম সোমপুর (চাঁদের পাহাড়), মহাবিহার (বিশালাকার বিহারস্থাপত্য)। রাজা ধর্মপাল এর নির্মাতা।
সবাই শিখরের সন্ধানে মগ্ন হয়ে গেল। কেউ স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রিয় বন্ধু বান্ধুবীদের সঙ্গে ছবি তুলছে কেউবা খুঁটে খুঁটে দেখছে সব কিছু। সময় ঘনিয়ে আসছে। আমার শুরুতেই ইচ্ছা ছিল একটা গ্রুপ ছবি তোলার। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সবাইকে একত্রিত করতে বেশ বেগ পেত হলো আমাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলেছে। তিনটা বেজে গেল। সবাই ক্ষুধায় কাতর। এদিকে খুব কম সময়ের মধ্যে খাবার তৈরি করে দিল শিমুল আর আরশাদ। আমরা সাড়ে তিনটার দিকে খেতে বসলাম।
প্রথমে প্রায় ৪০ জনকে খাইয়ে আমরা ১০-১২ জন পরে খেতে বসলাম। খাওয়াটাই তড়িঘড়ি করে খেলাম। কারণ আমাদের এখনো মহাস্থান গড় যাওয়া বাকি। স্যাররা বললেন সেখানে না গিয়ে পাহাড়পুরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে ফিরতে। কিন্তু আমিসহ কয়েকজন এর বিপক্ষে মত দিলাম। স্যাররাও আর জোর করলেন না।
আবার সব কিছু বাসে উঠিয়ে সাড়ে চারটার দিকে রওনা দিলাম মহাস্থান গড়ের উদ্দেশে। কিন্তু বগুড়া ঢোকার আগেই সন্ধ্যা নেমে এলো। তাই আর কেউ যেতে রাজি হলো না। এর মধ্যে বক্সটা হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল। ভ্রমণটা কেমন যেন আর জমছে না। অনেকেই বসে বসে ঝিমাচ্ছে। আমরা কয়েকজন হঠাৎ গান শুরু করলাম। এভাবেই গান গাইতে গাইতে প্রায় রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে ঢুকলাম।