বছরের গৌরবগাথা বাকৃবি
মাসুদ কবির
🕐 ২:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৯
অপরিমেয় খাদ্য ঘাটতি এবং বিশাল জনসংখ্যার এই দেশে যে প্রতিষ্ঠানটি সৌভাগ্যের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হয়েছিল তার নাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষি প্রধান এই দেশে সনাতন কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নে তথা বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ষাটের দশকের গোড়ায় গড়ে ওঠে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫৯ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশন এবং খাদ্য ও কৃষি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ নিয়ে কৃষিশিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণের পথিকৃৎ এ বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ঘাটতি নিরসনে মানসম্মত উচ্চতর কৃষি শিক্ষাদান এবং কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সমর্থ দক্ষ কৃষিবিদ, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ করাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। শিক্ষা, গবেষণা ও পাঠদনে বাকৃবি আজ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। তারই ধারাবাহিকতায় বাকৃবি আজ আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ধারাবাহিকভাবে পরপর দুইবার প্রথম স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে। সৃষ্টিলগ্ন থেকে গবেষণা কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। ওই প্রতিষ্ঠানটির গবেষকদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে ক্রমাগত মাছ, মাংস, শাকসবজি, দুধ, ডিম উৎপাদন বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণে এবং অর্থসামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাউ-৬৩, বাউধান-২ নামে উফশী ধানের জাত, বাউকুল, উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন ফসলের জাত যেমন- সম্পদ, সম্বল, বাউ এম/৩৯৫, বাউ এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফশী সরিষা জাত, সয়াবিন, আলু, মুখীকচুসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, বাউ সয়েল টেস্টিং কিট, কীটনাশক, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ, বাউ ব্রো-হোয়াইট নামে ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভাবন, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর ভেকসিন উৎপাদন, রোগ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উন্নয়ন, হাইড্রোপনিকস এবং সর্বশেষ আবিষ্কার ইলিশ মাছের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে আইসিএফ (ইন্টারডিসিপ্লিনারি সেন্টার ফর ফুড সিকিউরিটি), হাওড় ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ভেটেরিনারি ক্লিনিক ও অ্যানিমেল ব্লাড ব্যাংক, বিরল বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জার্মপ্লাজম সেন্টার, প্ল্যান্ট ডিজিজ ক্লিনিক, দেশের প্রথম কৃষি ও ফিশ মিউজিয়াম।
১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা দিয়েছিলেন। জাতির জনকের দেওয়া সেই পদমর্যাদা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে চলেছে কৃষি গ্র্যাজুয়েটরা কর্মক্ষেত্রে তাদের মেধা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত সফলতার মাধ্যমে।
কৃষিই আমাদের সংস্কৃতির অনিবার্য অনুষঙ্গ। কৃষি প্রধান এই দেশটির সার্বিক উন্নয়নে অতীত ও বর্তমানের মতো আগামী দিনগুলোতেও এ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি তার শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম দ্বারা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করবে।
লেখক : প্রভাষক, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ