ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাফল্যের গল্প

মা আমার সফলতা দেখে যেতে পারেননি

মু. ফারহান
🕐 ১:৫০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৯

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করে চাকরিজীবন শুরু হয় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে প্রোগ্রামার হিসেবে। ভালো কিছু করার টার্গেট ছিল ছোটবেলা থেকেই। সে হিসেবে প্রাইভেট কোম্পানিতে সন্তুষ্ট না হতে পারায় এবং বড় ভাই ডা. অনুপম মজুমদারের অনুপ্রেরণায় ঠিক করেন সিভিল সার্ভিসেই যাবেন। একবার অংশগ্রহণ করেই পেয়ে যান সফলতা।

৩৭তম বিসিএসে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, বলছিলাম এদেরই একজনের কথা যার নাম নিরূপম মজুমদার। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট চরপার্বতী গ্রামের রেবতী মোহন মজুমদার ও শৈবলনী মজুমদার দম্পতির ছোট ছেলে। পেশায় দর্জি হওয়ায় সংসার চালাতে বাবাকে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। তিন ভাইবোনের পড়াশোনার পেছনে মামার আর্থিক সহযোহিতা থাকায় পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটেনি কখনো।

বড় ভাই অনুপম মজুমদার ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে ২৫তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে পরিবারের হাল ধরেন। বাবা-মা ফিরে পায় কিছুটা স্বস্তির জীবন। তখন থেকেই বড় ভাই নিরূপমের পড়াশোনার ভার নেন। স্কুলজীবনে সব ক্লাসেই ছিলেন ফার্স্টবয়। ছোটবেলা থেকেই তুখোড় মেধাবী হওয়ায় শিক্ষকদের মন কাড়েন। ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। ২০০৭ সালে এসএসসি (শিডিউল কাস্ট) উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ ৫.০০ এবং ২০০৯ সালে সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

কলেজজীবন শেষে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল নিয়ে দোটানায় থাকায় ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেননি। স্বল্প প্রস্তুতি নিয়ে ও চান্স পেয়ে যান নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সে অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে ব্যাচ পড়াতেন আর বড় ভাইয়ের সহযোগিতা তো আছেই, তা নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিতর্ক করতেন এবং জড়িত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। মাস্টার্সে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটিতে।
স্নাতক শেষে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে প্রোগ্রামার হিসেবে যোগদেন। বড় ভাই ডা. অনুপম মজুমদারের অনুপ্রেরণায় প্রচ- ইচ্ছা জাগে সিভিল সার্ভিসে আসার। তখন ৩৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির জন্য হাতে আছে প্রায় চার মাস। এ সময় চাকরি ছেড়ে দেন এবং বন্ধুবান্ধবদের থেকে গুটিয়ে নেন নিজেকে।

পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে থাকেন প্রিলিমিনারির জন্য। সকাল ১০টা থেকে রাত ২-৩টা পর্যন্ত দৈনন্দিন কাজ ছাড়া বাকি সময় টানা পড়াশোনা করতে থাকেন। নিজের প্রস্তুতির অভিজ্ঞতা থেকে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রস্তুতি শুরুর আগে একটা মাইলফলক ঠিক করে সে অনুযায়ী নিয়মিত পড়তে হবে। সব টপিক বিস্তারিত পড়লে ভাইবাতেও কাজে লাগবে।

প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য আগে থেকেই সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। কোনো একটি বিষয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারলে অন্য বিষয়ের জন্য নির্ধারিত সময় কমিয়ে অসম্পূর্ণ বিষয়টি শেষ করতে হবে।

প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার জন্য খুব অল্প সময় পেলেও সে সময় অসুস্থ মায়ের সেবা করার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে।
ভাইবার ঠিক আগমুহূর্তে তাদের রেখে না ফেরার দেশে চলে যান জন্মদাত্রী মা শৈবলনী মজুমদার। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে নিরূপম ভাইবার প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে থাকেন। সর্বশেষ ভাইবা দিয়ে নিজের পছন্দের প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন।

প্রশাসন ক্যাডারে আসা সম্পর্কে বলেন, দেশ ডিজিটাল হচ্ছে সামনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে তাই ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে প্রশাসনে এসেছি যেন প্রশাসনকে এদিকে এগিয়ে নিতে পারি এবং একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা করতে পারি।

প্রশাসন ক্যাডারে সুযোগ পাওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে নিরূপম বলেন, এটা হচ্ছে একটা অসাধারণ অনুভূতি। দরিদ্র পরিবারের ছেলে হয়ে এই অর্জন সহজ ছিল না। এখন সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে চোখে আনন্দের অশ্রু চলে আসে।

আমার মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। প্রায় সময় নিজে না খেয়ে আমাদের খাওয়াতেন। প্রতিটা ধাপে আমার মা সবসময় প্রেরণা জুগিয়ে আমাকে এগিয়ে নিয়েছেন। তবে অনেক প্রাপ্তির মাঝে একটা অপ্রাপ্তি হচ্ছে আমার মা সফলতা দেখে যেতে পারেননি।

 
Electronic Paper