আলোকিত মানুষের আড্ডা
আরাফাত শাহীন
🕐 ১:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৭, ২০১৯
প্রথম বর্ষের শেষের দিকের ঘটনা। আমি ততদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছি। সেখানে সপ্তাহে এক দিন বসা হয়। কথা হয় নানান ধরনের। আগামী দিনে কোনো কোনো পদক্ষেপ হাতে নেওয়া যায় সেসব বিষয়ও আলোচনা করা হতো। আমি কিছু কিছু বিষয়ে কথা বলতাম; যেসব বিষয় আমার নিজের কাছে ভালো লাগে।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমার মনে হলো, আমি যেসব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি সেখানে কী যেন একটা নেই! যেখানে প্রাণের কোনো টান নেই, হৃদয়ের কোনো আকাক্সক্ষা নেই সেখানে গিয়ে কি মানুষ বেশিদিন টিকতে পারে! আমার মনে হলো, আমার এমন কোথাও যাওয়া প্রয়োজন যেখানে আমার প্রাণের চাওয়া পূর্ণ হবে আর হৃদয় হবে শীতল। আর একমাত্র সাহিত্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠনই আমার এই চাওয়া পূরণ করতে পারে।
কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাম্পাসে আসা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সদস্য হয়ে গেলাম। একটা কার্ডে পোষাবে না বলে দুইটা কার্ড করলাম। এভাবে কয়েক মাস পড়ার পর মনে হলো, আমি যে বইগুলো পড়ছি সেগুলো নিয়ে যদি কারো সঙ্গে আলোচনা করা যেত! কিন্তু এমন মানুষ আমি কোথায় পাব! এমন সংগঠন কি আছে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে?
তখন পর্যন্ত আমি জানতাম না যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবচেয়ে কাছের বন্ধু নাফিস অলিই আমাকে এই সংগঠনটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। উত্তম জিনিসের সন্ধান যে দিতে পারে তাকেই তো কাছের মানুষ বলা যায়, নাকি?
তারপর থেকে আমি যুক্ত হয়ে গেলাম বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা পাঠচক্রের সঙ্গে। প্রশাসনিক ভবন থেকে শহীদ মিনারের দিকে যে রাস্তাটি গিয়েছে তার বাম পাশেই লাইটপোস্টের গায়ে ছোট্ট করে লাগানো একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়বে। তাতে লেখা রয়েছে ‘শাখা পাঠচক্র, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’। প্রথম দেখায় সাইনবোর্ডটি হয়তো অনেকের নজর এড়িয়ে যেতে পারে, কিন্তু কেউ যদি একটু মনোযোগ দিয়ে দেখে তাহলে ঠিকই চোখে পড়বে।
এটাই হলো পাঠচক্রের সদস্যদের আড্ডাস্থল। সপ্তাহে একদিন, প্রতি সোমবার বিশেষ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোনো সমস্যা না হলে পাঠচক্রের সদস্যরা ঠিকই এসে হাজির হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে পড়ার জন্য একটা বই দেওয়া হয়; যেটা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়। পরবর্তী সপ্তাহে পঠিত বইয়ের ওপর চলে চুলচেরা বিশ্লেষণমূলক আলোচনা। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সারা দেশে আলোকিত মানুষ গড়ার যে সংগ্রাম শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা পাঠচক্র তারই একটি অংশ। দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মধ্যে অন্যতম।