চায়ের দেশে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস
শামীম শিকদার
🕐 ১:৩৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৭, ২০১৯
আমাদের পরীক্ষা শেষ বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল। সারা দিন রুমে বসে ও শুয়ে সময় কাটাতে কাটাতে এক প্রকার ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি বললে হয়তো ভুল হবে না। হঠাৎ কলেজ থেকে বিভাগীয়প্রধান স্যারের ফোন, আগামী মঙ্গলবার কলেজ থেকে আমরা সিলেটের শ্রীমঙ্গল যাচ্ছি। কোনো কিছু না ভেবেই বলে দিলাম আমি যাচ্ছি। এক এক করে আমাদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সবাইকে ফোন দিলাম। অনেকেই রাজি হলো। সোমবার সকালে হিসাব করে দেখলাম আমাদের ৩য় বর্ষ থেকে ২০ জন যাচ্ছি।
হঠাৎ করেই মাথায় এলো ব্যতিক্রম একটি চিন্তা। তা হলো আলাদা টি-শার্ট তৈরি করা। সবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই অল্প সময়েই তৈরি করে ফেললাম আমাদের টি-শার্ট। সামনে লেখলাম ‘শিক্ষা সফর ২০১৯’ হিসাববিজ্ঞান বিভাগ এবং পেছনে লেখলাম ‘চলো হারিয়ে যাই চা-বাগানে’। মঙ্গলবার সকাল ৭টায় বাস ছাড়বে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে। আমাদের প্রস্তুতির কোনো শেষ নেই। শিক্ষা সফরের যাওয়ার আনন্দে রাতভর চোখে কোনো ঘুম নেই। সকাল ৬টায় আমরা সবাই কলেজ ক্যাম্পাসে হাজির। এক এক করে সবাই বাসে উঠলাম।
অবশেষে আমার সিটই নেই। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত চেয়ার বসিয়ে বসতে হলো। ভেবেছিলাম তেমন আনন্দ হবে না। কিন্তু কাপাসিয়া পেরিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলায় আমাদের বাস ঢুকতেই শুরু হয়ে গেল আনন্দ উৎসব। অর্পন স্যারের কৌতুক, হৃদয়ের গান, মেহেদীর মজার মজার গল্প, লিজার ড্যান্স, কিবরিয়া ও মাধবের বাসের কন্ডাকটারি, আরফান ও ফাহিমের খাবার বিতরণ, ইয়াছিনের নীরবতা। সবমিলিয়ে মনে হলো, এটা যেন আমাদের একটি পরিবার। শুধু আমাদের বাসে নয় বাকি ৫টি বাসেই ছিল এমন আনন্দ ভ্রমণ। শ্রীমঙ্গল আমাদের বাস পৌঁছাল দুপুর ১২টায়। পানসী রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার শেষে আমরা বেরিয়ে পড়লাম পুরো চায়ের দেশ ঘুরে দেখার জন্য।
যতদূর চোখ যায় মসৃণ সবুজে ছাওয়া উঁচু-নিচু টিলা, ওপরে বিস্তীর্ণ নীলাভ আকাশ। এদিক-ওদিক তাকালেই চোখে পড়ে সবুজ বনানী আর বর্ণিল সব পাখি। চা-বাগান, লেক, হাওর, উঁচু-নিচু পাহাড়, ঘন জঙ্গল, খনিজ গ্যাসকূপ আর আনারস, লেবু, পান, আগর ও রাবার বাগান দিয়ে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর এই স্থানটির নামই যেন শ্রীমঙ্গল। শেষে আমরা গেলাম মাধবপুর লেকে। পাহাড়ে ঘেরা একটি লেক।
লেকের পানিতে ফুটে আছে অসংখ্য নীল পদ্ম। চারদিকের সবুজের ছায়া পড়েছে লেকের পানিতে। শীতের পুরনো জীর্ণ শুকনো পাতা ঝরে গাছে গাছে গজিয়েছে নতুন পাতা। প্রকৃতির এই বসন পরিবর্তনের সৌন্দর্য প্রতিফলিত হচ্ছে মাধবপুর লেকে। পাহাড়ের গায়ে চা-বাগানও আছে। পাহাড়ের ওপর থেকে লেকটি দেখতে আরও চমৎকার লাগে। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমরা বাসের উদ্দেশে হাঁটলাম। আমাদের বাস ছাড়ল মাগরিবের আজানের পর। শরীর খুব ক্লান্ত। তবে মন বেশ শান্ত। রাতের আঁধারে ধীরগতিতে বাস এগিয়ে চলল কলেজের উদ্দেশে। রাত ১২টায় আমরা পৌঁছালাম আমাদের গন্তব্যে।