ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উচ্ছ্বাস-আবেগের সমাবর্তন

কামরুল হাসান শাকিম
🕐 ৩:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯

ল্যাটিন থেকে ইংরেজিতে আসা কনভোকেশন শব্দের অর্থ হচ্ছে সমাবর্তন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তিকেই আমরা সচরাচর সমাবর্তন বুঝি। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়ার দিনই সমাবর্তনের দিন। সম্প্রতি হয়ে গেল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) দ্বিতীয় সমাবর্তন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি ব্যাচের দুই হাজার ২৬৩ গ্র্যাজুয়েটকে স্নাতক ডিগ্রি, ৪৪৫ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ২১৮ জনকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্নাতক পর্যায়ের ছয়জনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও স্নাতকোত্তর চারজনকে ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আব্দুল হামিদ উপস্থিত থেকে এই মেডেল দেন।

সমাবর্তন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় গায়ে হলুদের বর্ণিল সাজে সেজেছিল ক্যাম্পাস। আলোকসজ্জা চলেছে কয়েকদিন ধরে। প্রশাসনিক ভবন, অ্যাকাডেমিক ভবন, অডিটোরিয়াম, ছাত্রছাত্রী হল, মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য, শহীদ মিনারসহ সব ভবন সেজেছিল আলোর ফোয়ারায়। ক্যাম্পাস হয়েছিল এক ফুলের বাগান। গাছপালা যেন রঙের আঁচড়ে প্রাণের ছোঁয়া পেয়েছিল। অন্যদিকে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল নোবিপ্রবির প্রতিটি অলিগলি। গ্র্যাজুয়েটদের অংশগ্রহণে শহীদ মিনারসহ ক্যাম্পাসে চলে আড্ডা, গান আর কোলাহল। দুদিনের জন্য অনেকেই ক্যাম্পাস জীবনের ফেলে আসা সেই সোনালি দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিল। উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায় ভরে গিয়েছিল গ্র্যাজুয়েটদের চোখ-মুখ। সমাবর্তন গাউন এক দিন আগে পেয়ে সবাই গাউন পরে যেন মহড়া দিতে ব্যস্ত ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যেন এ সুযোগ হাতছাড়া করল না। অনেকে উৎসাহে গাউন পরে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করে রাখল।

অনেকেই বন্ধু ও প্রিয় মানুষদের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন আর শেষ মুহূর্তের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ক্যামেরার ফ্রেমে প্রতিটি মুহূর্তকে বেঁধে রাখার ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, পুকুরপাড়, হতাশার মোড়, ক্যাম্পাস পার্কসহ সব স্থানে আড্ডা, গান আর কোলাহলে মেতে ছিল সবাই। যেন সবাই কিছুদিনের জন্য চলে গিয়েছিল ক্যাম্পাস জীবনের ফেলে আসা সেই সোনালি দিনগুলোতে। অনেকে আবার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় একসঙ্গে কাটানোর জন্য নিয়ে এসেছিলেন বাবা-মাকে। মা-বাবাকে নিয়ে এই সময়গুলো আগামী দিনের স্মৃতি হিসেবে ফ্রেমে বন্দি করেছেন। তখন তাদের চোখ-মুখে ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। সমাবর্তন হ্যাট আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়ে ছবি তুলছেন যেন স্বপ্নগুলোকে ছোঁয়ার চেষ্টা। অনেকে আবার স্মরণীয় করে রাখতে কিছু হাস্যকর দৃশ্যের ধারণও করেছেন। ব্যাচেলর গ্র্যাজুয়েট, ভুতুড়ের বেশে গ্র্যাজুয়েট, ডুবন্ত গ্র্যাজুয়েট, সাবেক প্রেমিক-প্রেমিকা গ্র্যাজুয়েট, বেকার গ্র্যাজুয়েট, ভিখারি গ্র্যাজুয়েট, হেল্পার গ্র্যাজুয়েট ইত্যাদি। সমাবর্তন হ্যাটের আড়ালে মুখ লুকিয়েছেন কতিপয় গ্র্যাজুয়েট।

তবে দুদিনের আনন্দ শেষে বিদায় বেলায় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেককেই আবেগভরা লেখা লিখতে দেখা যায়। গ্র্যাজুয়েট রাজু আহমেদ লিখেছেন, এ বেলার গল্প হয়তো অবেলায় হাসাবে, কাঁদাবে কিংবা দূর থেকে টিটকারী মারবে। তবুও ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল ফুল, নোয়াখালী থেকে অফিসিয়ালি বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছি। নেক্সট কখন দেখা হয় জানি না তবুও ভালো থেকো প্রিয় স্বপ্নভূমি, ভালোবাসার নোবিপ্রবি।

আরেকজন লিখেছেন এতগুলো প্রিয়মুখ, পরিচিত মুখ, চেনাজানা মুখ আর দেখা হবে না, আড্ডা হবে না, দূর থেকে দেখে গলা ফাটানো হুঙ্কারে ডাকা হবে না, কথা হবে না। ব্যস্ততা আর বাস্তবতার জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে হারিয়ে যাব কোথাও, সময়ের অভাবে ধুলো পড়ে যাবে স্মৃতি কিংবা সম্পর্কগুলোয়। এভাবেই সমাবর্তনের শুরুটা উচ্ছ্বাস আর আনন্দে ভরপুর হলেও শেষ হয় আবেগ আর অশ্রুসিক্ত নয়নে।

 
Electronic Paper