সাফল্যের ২৮ বছর
মোয়াজ্জেম আফরান
🕐 ২:২২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন আর সাফল্যে অনন্য দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষার উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির গৌরব দেশের গণ্ডি পেরিয়েছে অনেক আগেই। ইতোমধ্যে গৌরব ও সাফল্যের ২৮ বছর পেরিয়ে ২৯ বছরে পদার্পণ করেছে শাবিপ্রবি।
বুধবার তাই ফাগুনের আগুনঝরা সকালে ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসবে মেতে ওঠে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। ওইদিন সকাল থেকেই ফুলে ফুলে সেজে ওঠে ক্যাম্পাস। ফাগ্লুনের প্রথম দিনের সুবাদে সবার মাঝে বিরাজ করে বাড়তি আমেজ। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নিয়ে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। পরে সবাইকে নিয়ে মুক্তমঞ্চে কেক কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন পালন করেন।
১৯৯১ সালের এমনই একদিনে অপার সৌন্দর্যের অধিকারী এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ সিলেট শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আখালিয়া এলাকায় ৩২০ একর জমির ওপর অবস্থিত। ৩টি বিভাগ, ১৫ জন শিক্ষক ও ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে আলোর এই ঘর। সময়ের ব্যবধানে ছোট্ট সেই ঘরে এখন স্থান পেয়েছে ২৮টি বিভাগ এবং ২টি ইনস্টিটিউশনের অধীনে প্রায় সাড়ে পাঁচশ শিক্ষক এবং ১২ হাজার শিক্ষার্থী।
শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস প্রাকৃতি সৌন্দর্যে যেমন অনন্য তেমনি নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আলো ছড়াচ্ছে বিশ্বে।
ক্যাম্পাসে প্রবেশকালে ‘এককিলো রোড’, অসংখ্যা ছোট-বড় টিলা, পাহাড়ের পাদদেশে স্থাপিত আবাসিক হলগুলো, টিলার ওপর নির্মিত শত সোপান বিশিষ্ট শহীদ মিনার, জাতির পিতার প্রতিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘চেতনা-৭১’ প্রভৃতি স্থান ও স্থাপনা সবার নজর কাড়বে।
শাবিপ্রবির উদ্ভাবিত অনেক প্রযুক্তি দেশে প্রথম ও অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে। সম্প্রতি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম সেমিস্টার পদ্ধতি চালু, মোবাইল ফোনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু, পুরো ক্যাম্পাস ওয়াইফাই সেবার আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গাতে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার, নিজস্ব ডোমেইনে ই-মেইল চালু, প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলা ভাষার সামাজিক রোবট ‘রিবো’ তৈরি, অনলাইনে টান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কিবোর্ডসহ অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাবিপ্রবির দল ‘সাস্ট অলিক’।
এত অর্জনের মধ্যেও ক্লাসরুম সংকট, পরিবহন সংকটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তবুও এসব সংকট কাটিয়ে খুব দ্রুত বিশ্বের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে শাবিপ্রবি এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক সফলতাকে ধরে রাখতে হলে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা বিগত দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। সামনে এই বিষয়গুলোতে আরও বেশি পরিমাণে কাজ করা হবে।