ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আনন্দধারা বইছে ভুবনে

আসিফ হাসান রাজু
🕐 ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮

হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শনও এটি। বিহারটির আদি নাম সোমপুর বৌদ্ধবিহার হলেও এ নামটি অনেকের কাছেই অজানা। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগ শিক্ষা সফরে ঘুরে আসে স্থানটি। লিখেছেন- আসিফ হাসান রাজু

দিনটি ছিল পহেলা ডিসেম্বর। দিনটি অন্য দিনের মতো হলেও একটু ব্যতিক্রম। ভোরের আলো তখনো ভালোভাবে ফোটেনি। চারদিকে আবছা আবছা অন্ধকার। ঘড়িতে ঘণ্টার কাঁটা ঠিক ৬টা বাজতেই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম।

গন্তব্য আপাতত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবন। পৌঁছাতে পৌঁছাতেই পূর্বাকাশে লাল রক্তিম সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সূর্যের আলোকোজ্জ্বল ঝলকানিতে চারদিক যেন উল্লাসিত। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দেখি সবুজ দুবলা ঘাসের ওপর বিন্দু বিন্দু শিশির কণা জমে আছে।

এমন দৃশ্য দেখে মনের অজান্তেই দোলা দিয়ে গেল কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতার দুটি চরণ-‘আকাশ হতে খসল তারা আঁধার রাতে পথহারা। প্রভাত তারে খুঁজতে যাবে-ধরার ধুলায় খুঁজে পাবে তৃণে তৃণে শিশিরধারা।’ সত্যিই পথের প্রতিটি ধূলিকণাও সে দিন শিশির বিন্দু হয়ে ধরা দিয়েছিল।

সিরাজী ভবনে পৌঁছে গেলাম সাড়ে ৬টার মধ্যে। সেখানে পৌঁছেই আরও একটি চমক। ভাবছিলাম সবার আগে আমিই উপস্থিত হব। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। সেখানে আমার আগে আরও অনেকেই অপেক্ষায়। ধীরে ধীরে বিভাগের বন্ধু, বড় ভাইয়া-আপু শিক্ষকরা এসে জড়ো হতে লাগলো। সবমিলিয়ে দুইশ জনের এক পরিবার।

গাড়ি যখন গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়ে তখন ঘড়ির কাঁটা ৮টা ছাড়িয়েছে। গাড়ির গতি যতই বাড়তে থাকে ততই বাড়তে থাকে আনন্দ-উল্লাস। গাড়ির মধ্যে চলমান এ নাচ-গানে সবাই ছিল আনন্দে মাতোয়ারা। এ যেন আনন্দধারা বইছে ভুবনে। তিন ঘণ্টা পর গাড়ি যখন বৌদ্ধবিহারে পৌঁছে তখন অনেকের শরীর ছিল ক্লান্ত। গাড়ি থেকে নেমেই যেন সেই ক্লান্তি নিমিশে হারিয়ে গেল। গেট থেকে ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল হাজার বছরের সেই প্রাচীন বৌদ্ধবিহার।

এখানে এলে কিন্তু জাদুঘরে যেতেই হবে। না হলে অদেখা থেকে যাবে অনেক কিছু। জাদুঘরে স্থান পেয়েছে শত শত মূর্তি ও পুরনো সামগ্রী। জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ পড়ে, বেলে পাথরের চামুন্ডা মূর্তি, লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খণ্ডাংশ, কৃষ্ণ পাথরের দণ্ডায়মান গণেশ, বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি, দুবলহাটির মহারানীর তৈলচিত্র, হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী নারায়ণের ভগ্ন মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি, বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি, বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গ, সূর্য মূর্তি ও মনসা মূর্তি।

নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরের এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি নিমেষেই আগত যে কোনো পর্যটককে মুগ্ধ করবে। আর এ জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকেই প্রতিদিন আসছেন হাজারো কৌতূহলি পর্যটক। শুধু দেশীয় পর্যটকই নয় এখানে দেখা মেলে কয়েকজন বিদেশি গবেষকের সঙ্গেও।

যারা তাদের গবেষণার কাজে এখানে এসেছেন বলে জানান। দুপুরের খাবার সেরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে চলে গান, অভিনয়, ফানবক্সের মতো খেলা। সব আয়োজন শেষ করে যখন গাড়ি যখন রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দিল তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। কিন্তু তখনো কারোরই এতটুকু আনন্দের কমতি ছিল না।

 
Electronic Paper