ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্মৃতিতে হাবিপ্রবি

আবার আসিব ফিরে

তারিকুল ইসলাম
🕐 ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০২, ২০১৮

ভেলু দার দোকানে চায়ের চুমুক, টিএসসির আড্ডা, লাইব্রেরি চত্বরে গোল হয়ে বসে গান গাওয়া, রাতে হলের ছাদে গিটার, একতারা নিয়ে কলের গানের আড্ডা, ইচ্ছে হলেই ঘুরতে যাওয়া, কোনো ডিসিশন ছাড়াই রাত ২-৩টার সময় দশমাইলে পাখির মাংস খেতে যাওয়া দিনগুলো ফুরিয়ে এলো।

২০১১ সালের ডিসেম্বর মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন দিতে দিতে যখন নাজেহাল অবস্থা ঠিক সে সময় পরীক্ষা দেই হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তিযুদ্ধ শেষ করে সুযোগ হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম তখন শুনেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মতো রঙিন আর সুন্দর সময় নাকি একজন শিক্ষার্থীর জীবনে খুব একটা আসে না।

১৩০ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছিলাম প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার সঙ্গে সখ্য হতে অবশ্য কিছু সময় লেগেছিল। অচেনা পরিবেশ, অপরিচিত মুখের ভিড় আর হুট করে বদলে যাওয়া জীবন।

স্বপ্নের মতো সুন্দর রাস্তা স্ট্রিট অব হেভেন দিয়ে হেঁটে প্রথমেই চোখে পড়েছিল রাস্তার দুপাশে ফুলের গাছগুলো কি যে অপরূপ লাগছিল সেই অনুভূতি বোঝানোর মতো নয়। মূল ফটক দিয়ে প্রথমেই আমাদের ভবন ছিল একাডেমিক ২ ব্যবসায় অনুষদের ক্লাসরুমে ঢুকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরাচরিত ছবির সঙ্গে খুব ভালোই একটা মিল পেলাম। সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচয় হলো, যদিও তখনো বুঝিনি এই অল্প পরিচিত সহপাঠীদের মাঝেই খুঁজে পাব বন্ধুত্বের মতো এমন মূল্যবান সম্পর্ককে। ধীরে ধীরে সময় কাটতে শুরু করল লাইব্রেরি মাঠে গল্পে আর শেখ রাসেল মাঠে খেলাধুলায়। ভেলু দার চায়ের দোকানে বেশি করে চিনি দিয়ে কড়া লিকারের দুধ চা ছাড়া যেন সকালটা বেমানান লাগত। সিনিয়র-জুনিয়র সবাই মিলে ডি-বক্সের আড্ডাটা জমিয়ে চলত। কেউ বা ছাত্রনেতা, কেউবা সদ্য ছেঁকা খাওয়া কবি, আবার ছিল কিছু মঞ্চ কাঁপানো অভিনেতা, কেউ আঁকে ছবি, কেউবা গিটার হাতে গান গায়, কেউ আবার ক্লাসে ফাস্ট বয়। সব ভিন্নতার এক অভিন্ন জায়গা এই প্রিয় হাবিপ্রবি ক্যাম্পাস।

আমাদের কাছাকাছি ঘুরতে যাওয়ার জায়গা ছিল ডেপা নদী, কান্তজীও মন্দির, আর সুখ সাগর, রাম সাগর। অনেক বিকালে আমরা আড্ডায় কাটিয়েছি ডেপার পাড়ে। কারও মন খারাপ চলো ডেপার পাড়ে, কোনো খুশির খবর তবুও তাই। গত সাত বছরে অনেক আড্ডার স্মৃতি বহন করছে এই শান্ত নদীটি। রাতের আড্ডার মূল আকর্ষণ অম্পু দাদার গান আর শিবলু ভাইয়ের গিটার আর আমি, রুবেল ভাই, নাজির ভাই, শুভ দা, হাসেল ভাই এরা ছিলাম সাংঘাতিক মানের ভালো শ্রোতা। আহা কি গান ছিল মিস করব। কখনো বা হলের ছাদ, কখনো শহীদ মিনার, কখনো লাইব্রেরির সামনে চলত আড্ডা সমানতালে। ব্যাচের বন্ধুদের আড্ডার রূপ একটু ভিন্ন ছিল রাত ১২টায় শুরু হতো নাশকতার থিম সং আহা কি সং তার পরে মুড়ি পাটি গণরুমে বন্ধুরা মিলে আড্ডা গান, ঘুরতে যাওয়া সে কি দিন ছিল। টানা ক্লাসের মাঝে কোনো এক ক্লাস পিরিয়ডের আগে ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভের সেই কাক্সিক্ষত ঘোষণা ‘আজ ক্লাস হবে না’। সমস্বরে উল্লাস করে শাজাহান মামার দোকানের গরম পুরি আর গরম শিঙাড়ার আড্ডাগুলো দৈনন্দিন জীবনের অংশ। আবার সারা বছর ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্টের পর পরীক্ষার সময়গুলোতে ফটোকপির দোকানে ভিড় জমানো, ধুলোয় ডুবে থাকা ক্লাসগুলোর লেকচার বন্ধুর কাছে ফটোকপি করার আকুতি। রেজাল্টের সময় কারও কাক্সিক্ষত ফলাফল আসা আবার কারও হতাশা এই দুই নিয়েই জীবনমুখী আলোচনা। নেক্সট সেমিস্টারে ফাটিয়ে দেব এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয় এমনি একটি জায়গা যেখানে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা সবকিছুই হাতের নাগালে থাকে। যে যেটাতে পারদর্শী সে সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত নানান ধরনের অনুষ্ঠান সভা-সেমিনার হতেই থাকে।

এছাড়াও পহেলা বৈশাখ, বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানগুলোতে ক্যাম্পাস পুরো বাঙালিয়ানা রূপ নিয়ে আসে। টপ জিন্স পরা মেয়েটাও সেদিন শাড়ি পরে, আর জিন্স টিশার্ট পরা ছেলেটা পাঞ্জাবি আর মাথায় গামছা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা মুহূর্তই অসাধারণ।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আবেগ, অনুভূতি, আন্তরিকতা আর ভালোবাসা দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ক্যাম্পাসগুলোর অন্যতম। যেখানে প্রতিবছর ২২০০ দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। যেখান থেকে প্রতিবছর অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের শোভা বাড়াচ্ছে।
মিস করব প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রতিটা চত্বর, মিস করব সব শিক্ষকদের ভালোবাসা ভরা সে শাসন, মিস করব বন্ধু তোদের সেই রাস্তা সেই গাড়িসহ ফ্রেশ বাতাস।কবির ভাষায় বলতে হয়, স্মৃতি যেন মনের আয়না। মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেলা যায় না। এ জীবনে যত ভুল, ঝরে যাওয়া ফোটা ফুল। সে ফুলের কাঁটা তো ঝরে যেতে চায় না। আসলেই কথাটি যে কতটা সত্য তা ক্যাম্পাস ছেড়ে আসা শিক্ষার্থীরা বলতে পারবে।

ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিগুলো, ফেলে আসা দিনগুলো বারবার মনের জানালায় উঁকি মারে। যদি আরেকবার ফিরে যাওয়া যেত সেই সোনালি স্বপ্নের দিনগুলোতে। আহা কতই না সুন্দর হতো।

 
Electronic Paper