ঢাকা, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬ আশ্বিন ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

হাছিবুল ইসলাম সবুজ, কুবি
🕐 ৬:০৭ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০২৩

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

২০০৬ সনের ৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপে আত্মপ্রকাশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালের ২৮ মে । ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে ৪ টি অনুষদের আওতায় ৭টি বিভাগে ৩০০ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ১৫ জন শিক্ষক- শিক্ষিকা নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৬টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে প্রায় ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও ২৬৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালি হচ্ছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে পূর্ণতা অপূর্ণতার মধ্যে দিয়ে ১৮ বছরে পদার্পন করে প্রাণের বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, অভিমত ও অনুভূতি তুলে ধরেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাছিবুল ইসলাম সবুজ-

 

গৌরবের সাথে গড়ে উঠুক দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় শব্দ টির সাথে একটু খানি আবেগ জড়িয়ে আছে। গত ৫ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধূলিকণা গায়ে মেখেছি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অনেক শিক্ষার্থীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যার কারণে ভিন্ন ভাষা ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পেরেছি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটিতে বিতর্ক করেছি, শিখেছি অনেক কিছু।দারুন কিছু মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে যখন আসি, দ্বিতীয় দিন দেখি সিনিয়ররা আন্দোলন করছেন বাস বৃদ্ধির জন্য। তখন বুঝতে পারি, আন্দোলন ছাড়া আসলে কোনো কিছু আদায় করা যায় না। সেই থেকে সব-কটি যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টা করিছে।
একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ শিক্ষা গ্রহণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কোনো একজন ছাত্রের জীবন নিয়ে চিন্তা করে কি না আমার সন্দেহ আছে, একেকটা ডিপার্টমেন্ট অনার্স শেষ করতে ৫-৬ বছর পর্যন্ত সময় নেয়। শিক্ষকদের অবহেলা ও আন্তরিকতা অভাবেই এমন টা হচ্ছে। সঠিক সময়ে ক্লাস নিচ্ছে না, খাতা দেখছে না, খাতা জমা দিচ্ছে না, আসলেই কি এসবের কোনো রুলস রেগুলেশন নেই। ফলাফল পেতেও সময় চলে যায় মাস কি বছর। এগুলো পরিবর্তন করা দরকার। যেসব বিভাগে শিক্ষকদের অপ্রতুলতা আছে সেখানে নজর দেওয়া উচিত। একটি পরিপূর্ণ সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটা শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের যথা সময়ে ক্লাস পরীক্ষা নিয়ে তাদের পরবর্তী জীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক,সুনাম কুড়িয়ে আনুক একটু একটু করে। এই শান্তির নীড় ছেড়ে চলে যাচ্ছি, তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে চাই, বিচ্ছেদের মুখে প্রেমের বেগ বাড়িয়ে উঠে। তাই তো তার কথা এখন একটু বেশীই মনে পড়ে।

কিন্তু দিনশেষে সবাই কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে মানুষ হতে পারে? বীর প্রতাপ সিং বলেছিলেন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তার মানে এই না যে আপনার মধ্যে মনুষত্ব আছে। আপনার মনুষ্যত্ব তখনই প্রকাশ পাবে যখন আপনি একটি ক্ষুধার্ত শিশুকে দেখে মনে কষ্ট পাবেন।

মেহেদী হাসান অপু
আইন বিভাগ (২০১৭-১৮)
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাক প্রাণের বিদ্যাপীঠ
চাকরি নামক সমরক্ষেত্রটির একদম পূর্ববর্তী সমরক্ষেত্রটিই হল আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি। এই লড়াইয়ের শেষে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন আমার হয়ে গেল। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ প্রথমবারের মত আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে পা দেবার পর থেকে আজ পর্যন্ত অনেক পরিবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা পেরিয়ে গেছে। সেসময় ছিল না PA-চত্ত্বর, ছিল না বঙ্গবন্ধু হলের বর্ধিতাংশ, ছিল না শেখ হাসিনা হল, ছিল না এই দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার। বর্তমানে এই সবই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভা অনেকাংশে বাড়াচ্ছে। আরো বড় পরিসরে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিতাংশ প্রকল্পের কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊষালগ্নে মাটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে অনুষদগুলোয় প্রবেশ করতে হত বলে অগ্রজদের কাছে শুনেছি। এখন আর সেই মাটির রাস্তা নেই, বরং পাকা রাস্তা রয়েছে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় জুড়েই। এখন আর বৃষ্টিবেলায় কর্দমাক্ত হয় না কোন শিক্ষার্থীর জুতো। অসংখ্য শিক্ষার্থীদের কলরবে ক্যাম্পাসে যে আমেজ বিরাজ করে, ছুটির দিনেও সে আমেজ বজায় থাকে পর্যটকদের ভিড়ে। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, পিঠা উৎসব, মেলা-সহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে প্রায়ই মেতে ওঠে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এবার আরো একটি বড় উৎসবে মুখরিত হতে যাচ্ছে এই ক্যাম্পাস,আর তা হল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ বছর পূর্তি উৎসব। আরো একবার উদযাপনে মেতে উঠবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলে। শুধু ১৭ বছর নয়, বরং শত শত বছর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বেঁচে থাকুক, তার লাল মাটির সৌন্দর্য নিয়ে মাথা উঁচু করে থাকুক সেই প্রত্যাশা রইল।

মায়িশা সুবাহ্ প্রমি
লোক প্রশাসন বিভাগ (২০১৯-২০)
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় হোক শিক্ষার্থীবান্ধব
প্রতিটা শিক্ষার্থী অনেক আশা-স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের সেই সুবিশাল আশা আর স্বপ্নগুলি নিমিষেই থমকে যায় যখন তারা বুঝতে পারে যে তাদের সাধারণ প্রয়োজনীয়তা টা অপূর্ণ। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পার হয়ে গেলেও এমন অনেক সাধারণ প্রয়োজনীয়তা আছে যা এখনো অপূর্ণ।

প্রতিনিয়ত নিত্য দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের হোটেলে খাবারের মূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে, সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি খাবারের মান কমিয়ে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান করে খাবারের মূল্য হ্রাস এবং মান উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এখনো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করতে হয় হাতে লিখে তারপর আবার সেটা নিয়ে এটাচড হলে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় স্বাক্ষরের জন্য তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আবার সেটা নিয়ে বিভাগে জমা দিতে হয়। পরীক্ষার আগে এসব নিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয়ে হয় এখনো শিক্ষার্থীদের। যেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ফাইনাল পরীক্ষার টাকা জমা পরীক্ষার আগে এসব নিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয়ে হয় এখনো শিক্ষার্থীদের। যেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ফাইনাল পরীক্ষার টাকা জমা থেকে শুরু করে ফরম পূরণ অনলাইনে সম্পন্ন করে সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো এনালগ পদ্ধতি অনুসরণ করে। প্রশাসনের উচিত ফরম পূরণ সহ ব্যাংকে টাকা প্রদান এর সকল বিষয়াবলী অনলাইনে সম্পন্ন করার সুযোগ করে দেওয়া।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি তাদের স্টুডেন্ট দের আলাদা ইউজার আইডি ও পার্সওয়াড দেওয়া হয়, যেটা দিয়ে স্টুডেন্ট রা ওয়েবসাইটে লগইন করে নিজের বিগত সকল সেমিস্টারের ফলাফল সহ বিস্তারিত সকল তথ্য দেখতে পারে। আমাদের নতুন যে ওয়েবসাইট টি তৈরি করা হয়েছে এখানেও যদি আমাদের এমন একটা সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে এটা একটা ভেরিফাইড পরিচয় বহন করবে আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসাবে এসব সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করছি।

মোঃ তালহা জুবায়ের
মার্কেটিং বিভাগ (২০১৯-২০২০)
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

খাবারের ভর্তুকি বৃদ্ধি করা হোক
শিক্ষাজীবনের অন্যতম চমকপ্রদ সময়ে নামের পাশে যুক্ত হয়েছে কুবিয়ান।বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মুক্ত চিন্তার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র।কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আফসোস, ১৭ বছরের পথচলায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে আছে বিশাল ফারাক! কুবিয়ানদের অনেক অর্জন সত্ত্বেও সাম্প্রতিককালে নেতিবাচক দিক দিয়ে কুবি বারবার হচ্ছে শিরোনাম! বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরও শিক্ষাবান্ধব হওয়া জরুরি। এখানে ল্যাব,গ্রন্থাগার ও ক্লাসরুমের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ক্যাফেটেরিয়ায় প্রয়োজনীয় ভর্তুকি আবশ্যক। সবশেষে লালমাটির ক্যাম্পাসের প্রতি ভালোবাসা।

মোসা: খাদিজা আক্তার
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ (২০১৯-২০)
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 
Electronic Paper