ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফেসবুক থেকে

হেনস্তার শিকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

শফিক হাসান
🕐 ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০২১

হেনস্তার শিকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

মন্ত্রী বলেছে,
রোজিনা খামচি দিয়েছে
আসলে তো কলম ছিল
ছুড়তে চেয়েছে
তাতেই সব ‘অতিরিক্ত’
তিক্ত হয়েছে।
ভাবো, কেমন মন্ত্রী অভিষিক্ত হয়েছে!

খালেদ হোসাইন, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

রোজিনা তুমি কেন ঢুকেছিলে স্বাস্থ্যের এত গহিনে
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে?
তুমি কি জানো না স্বাস্থ্য স্বয়ং এক সংক্রামক ব্যাধি!
সকলেই কমবেশি জানে সেই ব্যাধির পরিধি।
ফলে কমিউনিটির বেইজ্জতি তোমাকে
পড়তে হলো নথি চুরির মিথ্যা বদনামে!
অথচ আমরা তার দুর্গন্ধ রাখছি ঢেকে কথার পারফিউমে।

পুলক হাসান, কবি ও সাংবাদিক

রোজিনাদের লেখার স্বাধীনতা এই রাষ্ট্রের সমস্ত গোপনীয়তার চেয়ে বেশি মূল্যবান।

আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সচিবালয়ে আমি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছি। প্রত্যেক সাংবাদিক সকালে খালি হাতে সচিবালয়ে ঢোকেন। বিকেলে পকেট ভরে কাগজপত্র নিয়ে অফিসে ফেরেন। এসব কাগজপত্রের বেশিরভাগই গোপন। যা একজন সাংবাদিক আরেকজন সাংবাদিকের সঙ্গেও শেয়ার করেন না। এসব কাগজপত্র নানা কৌশলে, নানা সোর্স থেকে সংগ্রহ করা হয়। একজন সাংবাদিক আদালতেও তার সোর্সের নাম বলতে বাধ্য নয়। সারাবিশ্বে এটাই সাংবাদিকতা। এইসব গোপন তথ্যই মানুষ পড়ার জন্য সংবাদপত্র কেনে, টিভি দেখে। সরকারের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি পড়ার জন্য নয়।

সরকারের কাছে আজ সাংবাদিকতা নতুন করে শিখতে হবে? রোজিনা ইসলামকে চুরির অপবাদে মামলা দেওয়া হয়েছে। রোজিনা ইসলাম চোর হলে সারা বিশ্বের সকল পেশাদার সাংবাদিকই চোর। তবে কিছু কিছু সাংবাদিক আছে, যাদের সেই চুরি করার যোগ্যতা বা ইচ্ছা নেই। তারা সরকারের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিকেই সংবাদ মনে করে। প্রকৃত অর্থে তারা সাংবাদিক নয়, তারা সরকারের মুখপাত্র বা পিআরও।

আসাদ জোবায়ের, লেখক ও সাংবাদিক

রোজিনা ইসলাম যদি ‘চোর’ হয়, তবে যিনি এই ‘চুরি’র মামলার বাদী, তড়িঘড়ি করে সেই উপসচিবের দফতর বদল করলেন কেন, হুজুর?

আলতাফ শাহনেওয়াজ, কবি

‘রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন’- কী হাস্যকর সান্ত¡না! বারবার বলা এই বাক্যের মধ্য দিয়ে এটাই কি স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে নাÑ এর আগে এ ধরনের ঘটনায় অনেকে ন্যায়বিচার পাননি? অথবা রোজিনা ইসলামের ন্যায়বিচার না-পাওয়ার আশঙ্কা আছে? কিংবা শুধু তাকেই এটা বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হবে? ন্যায়বিচার নাগরিকের অধিকার। কারও নিশ্চয়তায় এর প্রাপ্যতা নির্ভর করে না।

তাপস রায়, সাহিত্যিক

আনিসুল হককে কাঁদতে দিন।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে জামিন দেননি আদালত। এতে ব্যথিত হয়ে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক আদালত প্রাঙ্গণে কাঁদলেন। এই কান্না নিয়েও অনেকে ফেসবুকে ট্রল করেছেন। কিছু মানুষ এতই অমানুষ যে সবকিছুতেই ‘নাটক’ দেখতে পায়! কর্মস্থল হচ্ছে মানুষের দ্বিতীয় পরিবার। পুরনো সহকর্মীরা হয়ে ওঠেন পরিবারের সদস্যের মতো। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সেই সহকর্মী যদি হন রোজিনা ইসলামের মতো যোগ্যতম সাংবাদিক, তার হেনস্তায়-অপমানে আনিসুল হক ব্যথিত হবেন, তার চোখ বেয়ে কান্না আসাই স্বাভাবিক। আদালত প্রাঙ্গণের সেই অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

ব্যক্তি ও লেখক আনিসুল হকের সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে তারা জানেন, আনিসুল হক কী রকম সংবেদনশীল। তার বেশ কয়েকটি প্রেমের উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। নিজের লেখালেখি সম্বন্ধে একবার লিখেছিলেন, উপন্যাসের চরিত্রগুলোর দুঃখে আমি কাঁদি। কাঁদতে কাঁদতে লিখি।

কাল্পনিক চরিত্র যাকে কাঁদাতে পারে, লিখতে লিখতে কাঁদেন, কাঁদতে কাঁদতে লেখেন সেই তিনি দীর্ঘদিনের সহকর্মীর বিপদে কাঁদতে পারবেন না; এ কেমন আবদার!
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি। ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। সেই সময়ে আনিসুল হক প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় লিখেছিলেন ‘আমাদের কাঁদতে দিন’। সমালোচনাকারীদের আচরণে মনে হয়, আনিসুল হক নতুন করে কাঁদতে শিখেছেন এবং কেঁদে অপরাধ করেছেন!

আমরা বড় দুর্ভাগা জাতি। আমাদের হাসির অধিকার নানাভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত হরণ করা হচ্ছে জিইয়ে থাকা শেষ হাসিটুকুও। এখন কান্নায়ও ‘নিষেধাজ্ঞা’! দুঃখ পেলে কাঁদা যাবে না? সেখানে বাধা দেবে আমাদের মতো সাধারণ ‘মানুষ’রাই!

শফিক হাসান, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper