আমার একটা ঘুড়ি ওড়ানো শৈশব ছিল
খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৮
ছেলেটার নাম হাফিজুর। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলাম। দশ-বারো বছরের হাফিজুর আমার পাশে ঘুরঘুর করছিল।
পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা। মাথায় একটা টুপি। কোনো মাদ্রাসায় পড়ে, দেখলে বোঝা যায়।
ফোন শেষ করে জিজ্ঞেস করলাম- কিছু বলবা?
ইতস্তত করে হাফিজুর বলল- একটু আব্বুর সাথে কথা বলব।
বুঝলাম, আমার কাছে মোবাইল ফোন চায়। ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম টলমল করছে।
ওর আব্বুকে ফোন দিলাম। দুইবার রিং হলো। ধরলেন না। ছেলেটার চোখ বেয়ে এবার পানি গড়িয়ে পড়ল।
জিজ্ঞেস করলাম, কী হইছে।
ও একই কথা বলল- একটু আব্বুর সাথে কথা বলব।
হাফিজুর একটা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ে। সপ্তাহ দুই হলো ওর আব্বু ওকে রেখে গেছেন। ছেলেটা এই প্রথম বাবা-মা ছাড়া ঘরের বাইরে। মাদ্রাসার কড়া নিয়ম মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ‘হুজুরের’ চোখ ফাঁকি দিয়ে বাইরে এসেছে বাবার সাথে কথা বলতে।
আবারো ওর আব্বুকে ফোন দিলাম। এবার ধরলেন। হাফিজুর হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আগামীকাল ওর আব্বুর মাদ্রাসায় আসার কথা। ওকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হুজুরেরা কড়া ভাষায় বলে দিয়েছেন- তিন মাসের মধ্যে কোথাও যাওয়া যাবে না। বাবার কাছে এসবই বলছিল হাফিজুর।
হাফিজুরের মতো বয়সে আমি একবার এমন কারাগারে গিয়েছিলাম। বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধুদের ছেড়ে প্রি-ক্যাডেটের হোস্টেলে থাকতে হয়েছিল। সে সময় আমারো এই অবস্থা হয়েছিল।
হাফিজুরের কষ্টটা বুঝতে আমার মোটেই সময় লাগলো না। ও বারবার ওর বাবাকে বলছিল- আব্বু তুমি কাল আসবা তো??
তবুও আমার একটা ঘুড়ি ওড়ানো শৈশব ছিল। ফড়িংয়ের পেছনে দৌড়ে বেড়ানো শৈশব ছিল। ফুটবল-হাডুডুর শৈশব ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে খিস্তি-খেউড়ের শৈশব ছিল।
হাফিজুরদের তাও নাই। হাফিজুররা শৈশব বিসর্জন দিয়ে আরবি মুখস্ত করে। নিজের, বাবা-মা’র বেহেস্ত কনফার্ম করতে গিয়ে ভুলে যায় ঘুড়ি ওড়ানোর বিকেল। ওদের দেখলে মায়া হয়। সত্যি মায়া হয়।
ফোনালাপ শেষে হাফিজুরের রিক্ত-সিক্ত চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম- চলো দু’জনে ডাব খাই।
সোহেল অটলের ফেসবুক থেকে নেয়া।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228