চীনের ফর্মুলা মিয়ানমারকে বাঁচানোর জন্য
আলী রীয়াজ
🕐 ৯:২৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
রোহিঙ্গাদের ওপরে চালানো গণহত্যা এবং বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার যখনই আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি হয় সেই সময়েই মিয়ানমারের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয় চীন। তারা হাজির করে নতুন ফর্মুলা, উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই চাপের বিষয়ে আলোচনাকে বিভ্রান্ত করা, এমন ধারণা দেওয়া যে সমাধান এখন হাতের মুঠোয়।
গত রোববার চীন আবারও তাই করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে মিয়ানমার কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফোরামে আইনি ব্যবস্থার মুখে পড়েছে। আইসিসিতে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘আইসিজে’তে গাম্বিয়া মামলা রুজু করেছে, আর্জেন্টিনায় অং সান সুচি ও মিয়ানমারের সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক কমিটিতে (তৃতীয় কমিটি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হয়েছে। ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যর্থতার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন ও প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এই সময়ে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এমন এক প্রস্তাব হাজির করেছেন, যা নেহাতই শিশুসুলভ। মিয়ানমার সরকারের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের ‘আস্থার ঘাটতি’ দূর করতে মোবাইল ফোনে সংযুক্তির নতুন ফর্মুলার কথা বলেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। (হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন ‘মোবাইল সংযোগ’ করেই সমস্যার সমাধান হবে বলে চীনা কূটনীতিকের প্রস্তাব)। তিনি এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন ‘১+১+২’ আইডিয়া। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এই মহতী আইডিয়া হচ্ছে এই রকম- একটি রোহিঙ্গা পরিবার এমন একজনকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করবে, যে কি-না মিয়ানমারে ফিরে যাবে। চীন তাদের দুটি মোবাইল ফোন দেবে। একটি ওই প্রতিনিধির কাছে থাকবে, আরেকটি থাকবে কক্সবাজারে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে।
পরিবারের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে গিয়ে যা দেখবেন, তা জানাতে পারবেন শরণার্থী শিবিরে থাকা তার স্বজনদের। ‘মিয়ানমারে গিয়ে তারা স্বচক্ষে পরিস্থিতি দেখবে, রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো ও নিরাপদ কি-না তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে। সেই আলোকে তারা দেখবে, সামনে আগানো যাবে কি-না।’
লি জিমিং এই অভিনব প্রচেষ্টার প্রস্তাব দিয়েছেন রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ পোস্ট আয়োজিত ‘রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কৌশল সন্ধান’ শীর্ষক সেমিনারে দেওয়া ভাষণে। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেছিলেন কি-না আমার জানা নেই, কিন্তু যে প্রশ্নটা করা দরকার- চীন কেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে অবাধে রাখাইন সফরের অনুমতি দেওয়ার ওপরে জোর দিচ্ছে না? কেন মিয়ানমারের ওপরে এই নিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে না?
এসব প্রতিনিধি দলের স্বচক্ষে দেখার চেয়ে নিয়ন্ত্রিত সফরে হাতে ধরিয়ে দেওয়া মোবাইল ফোনের ওপরে চীনাদের ভরসার কারণ কী? চীন মিয়ানমারকে এসব বিষয়ে না বলে ঢাকায় নতুন ফর্মুলা হাজির করার কারণ বোধগম্য। এই ১+১+২ নামের এই নতুন ফর্মুলার যোগফল যে শূন্য হবে সেটাও আমাদের জানা। ফলে এসব ফর্মুলার দিকে নয়, নজর দেওয়া দরকার কী করে মিয়ানমারের ওপরে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়ানো যায়।
আলী রীয়াজ
অধ্যাপক
