যে কারণে আমি পাপনের পক্ষে
নিঝুম মজুমদার
🕐 ৯:২৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময়ের কথা। সেন্ট্রাল লন্ডনের গ্রেস হোটেলে গিয়েছি ক্রিকেটার সানজামুল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। আমার সঙ্গে মিশু ভাই আর সোহান ভাই। সানজামুল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাকি অনেক ক্রিকেটারকে সঙ্গে দেখা হলো, বাক্য বিনিময় হলো।
একটা সময় আমরা তিনজন হোটেলের এক কোনায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম আর ঠিক সে সময় দেখি ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান পাপন সাহেব আমাদের দিকেই হেঁটে আসছেন। ঠিক আমাদের উদ্দেশ্যে নয়, মানে আমাদের অতিক্রম করে খুব সম্ভবত কোথাও যাচ্ছেন।
আমিই তাকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম। বড় সজ্জন মানুষ। কয়েক সেকেন্ডে আপন করে নিলেন। আমি সে সুযোগে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘পাপন ভাই, নাসিরকে আয়ারল্যান্ড সিরিজে রাখলেন; কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেন রাখলেন না?’ ভদ্রলোক জবাবে বললেন, ‘নাসির উঁচু বল খেলতে পারে না।’
আমি খানিকটা হেসে দিলাম। বললাম, ‘আপনি বাউন্স বলের কথা বলছেন? কী যে বলেন ভাই, নাসির কেন বাউন্স বল খেলতে পারবে না? পারে তো...।’
সেই যে আমাদের কথোপকথনের শুরু, তারপর আরও কিছু কথা হলো এবং খানিকটা অবাক হয়ে লক্ষ করলাম দলের একদম নিজস্ব কথাও আমাদের সঙ্গে বলছেন। পরিচয়ের ১০ মিনিট না হতেই একদম অচেনা তিনজন ছেলের সঙ্গে এমন খোলাখুলি কথা বলাতে আমি অবাকের চেয়ে মজা পেয়েছি বেশি।
আমার স্বভাব অনুযায়ী আমি ভদ্রলোককে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে দিয়েছি এরই মধ্যে। যতদূর বুঝলাম, পাপন নামের এই ভদ্রলোক অসম্ভব দিলখোলা, প্রাণখোলা আর কিছুটা স্বভাবে বোকা। মানুষকে খুব সহজে বিশ্বাস করেন, অন্যকে সাহায্য করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ধরনের লোক।
আমাদের মতো অতি অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে হয়তো তিনি রিজার্ভ থাকলে, হ্যাঁ-হুঁ দিয়ে চালিয়ে দিলেই বোধকরি সে যাত্রায় তাকে একেবারে প্রফেশনাল মনে হতে পারত। কিন্তু আমার কেন যেন এই চরিত্রের পাপন সাহেবকেই ভালো লেগে গেল। একজন অতি সহজ-সরল আমুদে মানুষ।
এই ধরনের মানুষদের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এরা মানুষকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন এবং ক্রমাগত দুঃখ পান। অতি সহজেই এই ধরনের মানুষ অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হন এবং সহজে রাগ করেন, সহজে অভিমান করেন আবার চট করে ঠাণ্ডা হয়ে যান।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটারদের আন্দোলন, তাদের ১১ দফা ও পরবর্তীতে আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান সাহেবের ‘মাথা প্রসুত’ ১৩ দফা, পাপন সাহেবের অভিমান, বক্তব্য এসব কিছু দেখে আমার একটা কথাই কেবল মনে হলো, পাপন সাহেব এই ছেলেগুলোর জন্য পিতৃসুলভ ছিলেন। একটা সহজ-সরল বোকা লোক কিছু সাবেরীয় চালে খামাখাই মানুষের গাল খেলেন।
মিরাজের ফোন নম্বর ডিলিট করে দেবেন, মুশফিকের বাবাকে সাহায্য করেছেন, ইমরুলের সন্তানকে সাহায্য করেছেন- এসব কিন্তু পাপন সাহেব বড়াই করে বলেননি। বলেছেন এক গহিন দুঃখবোধ থেকে। কিন্তু এই আবেগ কে বোঝে এমন ক্রুদ্ধ সময়ে? আমাদের এই যাতনাময় আর ভীষণ ভুলের সময়ে পাপন সাহেবের কথাগুলো অনেকের কাছেই বেমানান লেগেছে হয়তো...। প্রফেশনাল স্থানে সবাই চান ব্যক্তি হবেন রাশভারি, হবেন মার মার কাট কাট জাতীয় প্রাণী। ক্রিকেট বোর্ডে জনতা পিতা চান না কিংবা চান না পিতৃসুলভ কাউকে।
আমার কিন্তু পাপনকেই ভাল্লাগে। রাশভারি, হিসেবি, জটিল, পেশাদার এসব তো হওয়াই যায় কিংবা দুই দুইয়ে যোগ করে চার-ই হবে এমন ঘরানার লোকও হওয়া যায়। কিন্তু সবাই হতে পারেন না পিতৃসুলভ। পাপন হতে পেরেছেন। আমি তাই পাপনের পক্ষে।
নিঝুম মজুমদার
ব্যারিস্টার
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228