সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল
কামরুল হাসান মামুন
🕐 ১০:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০১৯
বাংলাদেশের পাবলিকের ট্যাক্সের টাকায় যাহা কিছু চলে সব কিছুই রুগ্ন। যেমন বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ রেলওয়ে, টেলিটক, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন বা BRTC, বাংলাদেশ নৌ পরিবহন সংস্থা, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ইত্যাদির কোনটিই লাভবান সংস্থা না।
সবগুলোর একটি কমন জিনিস হলো এগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে সরকারি কর্মকর্তারা।
এ কর্মকর্তারা এসবের দায়িত্ব পেলে এগুলোকে টাকা কমানোর খনি ভেবে এক জীবনে যা কামানো যায় তা এমনভাবে কামায় যেন পরবর্তীতে তার চৌদ্দগুষ্টি বসে খেতে পারে। অথচ এদের যদি দেশের প্রতি মায়া থাকতো আর একটু আন্তরিকতা থাকতো তাহলে এর প্রত্যেকটিই লাভবান প্রতিষ্ঠান হতে পারতো। এক টেলিটক দিয়েই বিশাল লাভ করতে পারতো।
টেলিটকে যারা চাকরি করে তারাও ওখানে চাকুরি করার কারণে একেকজন গর্বিত কর্মকর্তা হতে পারতো। দেশের যুবকরা ওখানে চাকরির জন্য মুখিয়ে থাকতো। একই কথা বলা যায় বিমান অথবা রেলওয়ে অথবা অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি স্কুল, কলেজও একই পথের যাত্রী। এগুলোর মান দিন দিন নিম্নগামী। খুব বেশি দূরে নাই আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমান প্রাইমারি স্কুলের হাল হবে যেখানে কোন শিক্ষিত ও আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের কেউ আর ওখানে পড়ার জন্য স্বপ্ন দেখবে না। গত ৩০-৪০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে একটু গবেষণা করলেই টের পাওয়া যাবে।
৭৩-এর অধ্যাদেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বাকি ৪১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কীভাবে নিয়োগ পায় আর কারা পায় সেটা স্টাডি করলেও অনেক কিছু ফকফকা হয়ে যাবে। এমনকি ৩০ বছর যাবৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৭৩-এর অধ্যাদেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সেগুলো স্টাডি করলেও মানের নিম্নগামিতার চিহ্ন পাওয়া যাবে। একটু স্ট্যাটিসটিকাল এরর থাকতে পারে তবে মোটা দাগে এটাই বাস্তবতা।
আমরা মনে হয় একটু বেশিই থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র মেনে চলছি। এই সূত্র মতে ইকুইলিব্রিয়ামে পৌঁছানোর জন্য সব closed সিস্টেমের এনট্রপি সব সময় বাড়তে থাকবে অর্থাৎ তাদের disorder বাড়তে থাকবে। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও closed সিস্টেম ভাবতে পারি এবং এদের এনট্রপি এনট্রপি বা disorder কেবল বেড়েই চলেছে। এখন বলতে পারেন সূত্র যাহা বলে তাহাই যদি ঘটে থাকে সমস্যা কোথায়?
মনে এনট্রপি কমানো যায়। সেই জন্য কাজ করতে হয়। যেমন রেফ্রিজারেটরকে বাহিরের তাপমাত্রা থেকে অনেক বেশি ঠাণ্ডা রাখা যায় এবং সেটা করা হয় কাজের মাধ্যমে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু মানুষকে নিয়োগ দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিকভাবে চালিয়ে অর্ডার মেইনটেইন করা। সমস্যা হলো চালানোর জন্য যেই ইন্টারনাল ধপঃড়ৎ নিয়োগ দেওয়া হয় তারা বরং সিস্টেমের অর্ডার আরও কমিয়ে দেয়। একই কথা খাটে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে।
সরকারি হওয়া মানেই যেন সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল।
কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক, ঢাবি
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228