আইয়ুব বাচ্চুর জানাজা শুক্রবার বাদ জুমা, দাফন শনিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর নামাজে জানাজা শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ আজ সারাদিন এই হাসপাতালেই থাকবে। বিকেল চারটায় সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ শহীদ মিনারে রাখা হবে। শুক্রবার জানাজা শেষে মরদেহ চট্টগ্রামে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। শনিবার নিজ গ্রামে জানাজা শেষে মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হবে।’
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি তার হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ৩০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল বিভাগের পরিচালক ডা. মির্জা নাজিমুদ্দীন জানান, সকাল সাড়ে আটটায় বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন আইয়ুব বাচ্চু। তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক তার গাড়িতে করে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি। তবে পথিমধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো তার হার্টে রিং পরানো হয়। তবে সম্প্রতি তিনি ঘনঘন হৃদরোগে ভুগছিলেন। দুই সপ্তাহ আগেও তিনি শরীর চেকআপ করাতে হাসপাতালে এসেছিলেন।
ডা. নাজিমুদ্দীন বলেন, সম্প্রতি তার হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল। যাকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় কার্ডিওমায়োপ্যাথি। হাসপাতালে আনার সময় কার্যকারিতা শূন্যের ঘরে চলে আসে। আর এতেই তার মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের এই কিংবদন্তীর মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সংগীত জগতসহ শুভাকাঙ্খীরা হাসপাতালে ছুটে গেছেনে বলে জানা গেছে।
তিনি একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, প্লেব্যাক শিল্পী। এলআরবি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট তিনি। তিনি ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এর আগে তিনি দশ বছর সোলস ব্যান্ডের সাথে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সঙ্গীতজগতে তার যাত্রা শুরু হয় ফিলিংসের মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে। অত্যন্ত গুণী এই শিল্পী তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি (AB) নামেও পরিচিত। তার ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সঙ্গীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি।
তার কণ্ঠ দেয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত রক্তগোলাপ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ময়না (১৯৮৮) এর মাধ্যমে।
১৯৯১ সালে বাচ্চু এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন তিনি। এই ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম এলআরবি প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। সুখ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ উল্লেখযোগ্য গান।
‘চলো বদলে যাই’ সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন আইয়ুব বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অবিহিত কড়া হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ঘুমন্ত শহরে প্রকাশিত হয়। তিনি অনেক বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তার গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।
২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর বাচ্চু ফুসফুসে পানি জমার কারণে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হন।
২০১৪ সালের ১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে 'টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৪'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে 'বিসিবি সেলিব্রেশন কনসার্ট'-এ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন নিয়ে মাইলস ব্যান্ডের হামিন আহমেদের সাথে বাচ্চুর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই দ্বন্দ্বের সূত্রে বাচ্চু ও তার ব্যান্ড এলআরবি বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সদস্যপদ প্রত্যাহার করে।