শুটিংয়ের কার্যক্রম স্থগিত, হতবাক সভাপতি
বদরুল আলম চৌধুরী
🕐 ৯:২৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২০
বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনে বিদ্যমান জটিলতা নিয়ে গঠিত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির কাজ সম্পন্ন। এবার রায় প্রকাশের অপেক্ষা। তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্টে কি রয়েছে? এ নিয়ে রাজ্যের কৌতুহল। শুঞ্জন ছড়াচ্ছে নির্বাচনের দুই মাস হাতে থাকতেই নাকি ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটি! জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কতৃক শুটিংয়ের নীতি নির্ধারনী সকল কার্যক্রম স্থগিতের নিদের্শটাই যেন অগ্রিম সব কিছু বাতলে দিচ্ছে সব। এ নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মাসুদ কামাল জানান, ‘আসলে আমরা আপাতত শুটিংয়ের দৈনন্দিন কাজ ছাড়া নীতি নির্ধারনী কাজ বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ দিয়েছি।’
আর তাই শুটিং অঙ্গনে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, তদন্ত কাজ শেষ না হতেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কতৃক শুটিং ফেডারেশনের নীতি নির্ধারনী বন্ধ করার রহস্য বা কিসের? এ নিয়ে শুটিং অঙ্গনে চলছে রাজ্যের আলোচনা । বলাবলি হচ্ছে নির্বাচিত কমিটি ভেঙ্গে দেয়া ছাড়া নাকি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে বিকল্প কোন পথও খোলা নেই। কারণ, শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের দ্বন্ধটা বর্তমান বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর’র ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর সঙ্গে ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির। যে কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সমর্থন রয়েছে সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর।
মূলত মহাসচিবের অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনটি খোলা চিঠির প্রেক্ষিতে শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনে শুরু হয় মহাসচিব ও সভাপতির মধ্যে মনোমালিন্য। যেখানে মহাসচিবের বিরুদ্ধে উঠে এসেছিল পাহাড়সম অনিয়ম। অভিযোগে টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে, ফেডারেশনে নিজ প্রতিষ্ঠান প্রিয় প্রাঙ্গনের লোকদের নিয়োগ,রাইফেল ক্রয়সহ পদে পদে অনিয়মের কথা। এই অনিয়মকে কেন্দ্র করেই গঠিত হয়েছিল তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি। যে কমিটি ২১ জন স্বাক্ষীর অনুস্বাক্ষর নিয়ে ৪১ পাতার রিপোর্ট জমা দেয় ফেডারেশনে।
পরবর্তীতে ফেডারেশন কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্তক্রমে ঐ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় ক্রীড়া অভিবাবক তথা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) ও ক্রীড়ামন্ত্রণালয়ে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও পরবর্তীতে পুন:তদন্তের জন্য নিজস্ব লোক দিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তদন্ত কমিটি কতৃক দ্রুত (সাত কার্যদিবসে) তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছে। সেই রিপোর্ট বৃহস্পতিবার প্রকাশ হবার সম্ভাবনার কথা শোনান তদন্ত কমিটির একজন সদস্য। তিনি জানান, এক/দুই দিনের মধ্যেই সব কিছু জানতে পারবেন।
এদিকে বলাবলি হচ্ছে যদি কমিটি ভেঙ্গেই দেয়া হয়, তাহলে সেটা হবে কার স্বার্থে? প্রশ্ন দাড়িয়েছে এক জনের দোষে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কি পারে সবাইকে শাস্তি দিতে? আর যাই হোক,এতে বেঁচে যাচ্ছে যার কিংবা যাদের বিরুদ্ধে উঠেছিল অনিয়মের অভিযোগ। জানা যায় ফেডারেশনে একটি রহস্যময় তালাবন্দি বাক্স রয়েছে। যে তালাটি ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সামনে খুলতে অপরাগত প্রকাশ করেছেন ফেডারেশনের মহাসচিব! পরবর্তীতে কার্যনির্বাহী কমিটি কতৃক চিঠির মাধ্যমে তা খুলে দেখানোর জন্য ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়, নতুবা মেজেস্ট্রেটের মাধ্যমে তালা খোলার কথা জানানো হয়। সময় যখনি ঘনিয়ে আসছে ঠিক তখনি ৩০ জুলাই পুন:তদন্তে নেমেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এমন কি ১০ আগস্ট জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ হঠাৎ চিঠির মাধ্যমে শুটিং ফেডারেনকে জানিয়ে দেয়- দৈনন্দিন কাজ ব্যতিত তাদের নীতি নির্ধরনী সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার। অর্থাৎ তদন্তের আগেই যেন রায় চূড়ান্ত! এতে সবাই বলাবলি করছেন এখানেও আবার সর্ষেই ভূত নয় তো!
এদিকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চিঠি পেয়ে হতবাক ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই শুটারদের অনুশীলন শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম। এখন ক্রীড়া মন্ত্রণলয়ে চিঠি পেলে দেখব।
চিঠিটি নিয়ে সভাপতি আরও বলেন, ‘একজন লোকের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের শাস্তিতো সবাই পেতে পারে না। এটা নিয়ম না। আমাদের বিরুদ্ধে যদি অনিয়মের অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে তারা আমাদের জানাতে পারে। আমরা আমাদের অন্যায়টা দেখতে চাই। আমি মনে করি একটি নির্বাচিত কমিটিকে এ ধরনের সুযোগ দেয়া উচিত। তারা বলতে পারে যে, তোমাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে, তোমরা সতর্ক হয়ে যাও। কিন্তু উল্টো একজনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলতে গিয়ে এখন দেখি আমাদের কার্যক্রমই বন্ধ করে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এটা কতোটা নিয়মের মধ্যে পড়ে আমার জানা নেই। ক্রীড়াঙ্গনের অভিবাবকের কাছে অবশ্যই এ ধরনের কিছু আমাদের প্রত্যাশিত নয়।’
বলাবাহুল্য দেশের শ্যুটাররা বিভিন্ন সময় দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনেন। কিন্তু তাই বলে তারাও কি নিয়মের উর্ধ্বে? দেশের প্রকৃত নিয়ম-কানুন মেনে সম্মান বয়ে আনার মধ্যেই থাকছে বিশাল সফলতা। কারণ এটিও যে এক ধরনের শিক্ষা। তা না হয় অনিয়মের প্রভাবে এক সময় বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনও আর খুজে পাবে না আসিফদের মতো শুটারদের।
এতে পশ্চতগমন হতে হবে বর্তমান দেশ সেরা আব্দুল্লাহ হিল বাকিদের মতো। অভিযোগ উঠেছে, এই শুটারও নাকি অন্যায়কে প্রশয় দিতে গিয়ে নিজেও ডুবছেন,সতীর্থদেরও ডুবাচ্ছেন। জানা যায় শুটারদের মধ্যে নাকি রীতিমতো একটি গ্রুপ করে প্রভাব ফেলেছেন। প্রতিযোগিতা এলেই যেন তারাই সিলেকশানে থাকেন। এত আসতে পারছে না নতুন মুখ।
রাইফেল নিয়ে যে কেলেঙ্কারীর ঘটনা ঘটেছে, সেখানেও নাকি বাকির কৌশলগত প্রভাব রয়েছে। তিনি মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন, ব্যবহৃত রাইফেলটি তার গিফটের। সাতজন শুটার সাতটি রাইফেল গিফট পেয়েছেন। অথচ তিনি একাই ব্যাবহার করছেন তিনটি রাইফেল। যা কিনা বিদেশ সফরের সময় সরকার কতৃক বিওএ
লেটারেই উল্লেখ রয়েছে। রাইফেলগুলোর মডেল ও সিরিয়াল নম্বর যথাক্রমে- ১. মডেল নম্বর : Walther LG-400, S/N- 50729, ২. মডেল নং - Walther LG-400, S/N- KBA5711 ৩. মডেল নং - Walther LG-400, S/- KBA 5799)।
আর তাই প্রশ্ন উঠেছে অবশিষ্ট দুটি রাইফেল কোথায় পেলেন আব্দুল্লাহ হিল বাকি? এ নিয়ে অনেক আগেই প্রশ্ন তুলেছিলো বিভিন্ন শুটিং ক্লাব। যেখানে তারা ফেডারেশনে অগ্রিম টাকা দিয়েও ফেডারেশন থেকে রাইফেল পাচ্ছিলেন না।