ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বসন্তে এসেছিলেন তিনি

মাজহার মুনতাসসির
🕐 ৩:১১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০

বাংলা গানের শেকড় বলা হয় লোক সঙ্গীতকে। লোক সঙ্গীত থেকে বাংলা গানের নানা শাখা-প্রশাখা বেরিয়েছে। বাংলা লোক সঙ্গীতকে এক অজপাড়া গাঁয়ের শিল্পী নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ^বাসীর কাছে তিনি তুলে ধরেছেন নিজ দর্শন। বিদগ্ধ কথা আর সুরের কারিশমায় সমাজ, পরিবেশ ও জীবনকে যিনি গানের মাধ্যমে বেঁধেছেন, আর তা অন্য জীবনকেও স্পর্শ করেছে- তিনি হলেন বাংলা বাউল গানের একজন কিংবদন্তি, ভাটি অঞ্চলের প্রাণপুরুষ বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। গতকাল ছিল তার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী।

১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বসন্তের একটি দিনে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার কালনী নদীর তীরে উজানধল গ্রামে জন্ম নেন কিংবদন্তি এই বাউলশিল্পী। নানা অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা শাহ আব্দুল করিম এক সময় সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা চষে বেড়িয়েছেন।

আর কালে কালে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে তা নিয়ে গান রচনা করেছেন। এই গানে যেমন ছিল আনন্দ তেমনি ছিল জীবন সংগ্রামের প্রেরণা। আর এ কারণেই তাকে দেওয়া হয়েছে ‘বাউল সম্রাটের’ মর্যাদা। অভাব তার পরিবারকে এমনভাবে ঘিরে ধরেছিল যে প্রতিবেলার খাবারও জুটতো না অনেক সময়। তাই সুযোগ হয়নি লেখাপড়া করার। পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় তার ওপর চাপটা বেশি ছিল।

খুব অল্প বয়সেই উপার্জনে নেমে পড়তে হয় তাকে। দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আব্দুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। জীবদ্দশায় তিনি রচনা করেছেন পাঁচ শতাধিক গান। বিভিন্ন স্তরের গান লিখেছেন ও সুর করেছেন তিনি।

নিগূঢ়তত্ত্ব, ভক্তিগীতি, দেহতত্ত্ব, বিচ্ছেদ, ধর্মীয় গীতি, প্রণয়গীতি, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, জীবন তত্ত্ব, প্রেম, জাগরণের গান, আঞ্চলিক, ও দেশের গানসহ বাউল জগতের প্রতিটা পর্যায়ে তার গানের ছোঁয়া আছে। তার উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না, রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না, তুমি রাখো কিবা মারো, ঝিলঝিল ঝিলঝিল করেরে ময়ুরপংখী নাও, তোমার কি দয়া লাগে না, আমি মিনতি করিরে, তোমারও পিরিতে বন্ধু ইত্যাদি।

বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক পান। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম।

 
Electronic Paper