ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দর্শক অভিনেত্রী হিসেবেই চিনুক

শফিক হাসান
🕐 ৩:২৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৯

বিপাশা কবির। ঢাকাই চলচ্চিত্রে আইটেম গার্ল হিসেবে শুরু করেন চলচ্চিত্র-যাত্রা। ছোটপর্দা-বড়পর্দা মিলিয়ে তার অভিনয়ের পরিধি বিস্তৃত। শোবিজ অঙ্গনের বর্তমান সংকট-সম্ভাবনা-উত্তরণসহ নানা বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিক হাসান।

আপনার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কী নিয়ে?
দুইটা ওয়েব সিরিজের কাজ শেষ করলাম। আপাতত মিউজিক ভিডিও করছি কয়েকটা।

আপনার উত্থান আইটেম সং দিয়ে। তারপর মূল নায়িকার চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আইটেম সং দিয়ে শুরু হলেও আমি অভিনেত্রীই হতে চাই। অভিনেত্রী হতেই এসেছি। সেদিকে এগোচ্ছি। নায়িকা হিসেবে আমার সাতটা কাজ করা হয়েছে। আরও কিছু কাজ করব সামনে। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। অবশ্যই চাইব, দর্শক আমাকে অভিনেত্রী হিসেবেই দেখুক, চিনুক।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের নিদানকালকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
বর্তমানের পরিস্থিতির জন্য শুধু শিল্পী দায়ী বলব না। এর সঙ্গে প্রযোজক-পরিচালকদের কথাও উল্লেখ করতে হয়। তবে পরিচালক ও শিল্পীদের দায়ও কম নয়। ভালো হল নেই এটাও উল্লেখযোগ্য একটি কারণ। শিল্পীরা সুযোগ বুঝে উচ্চ পারিশ্রমিক হাঁকেন, তারা একজন প্রযোজকের অর্থনৈতিক দিকটা খেয়াল করেন না। মাথা ঘামান না বাজেট নিয়ে। পরিচালকরা বছরে একটা ছবি করেন, তারাও প্রযোজকদের যথার্থ মূল্যায়ন করেন না। তাদেরও গাফিলতি রয়েছে।

চলচ্চিত্রের গল্প কতটা যুগোপযোগী?
আমাদের ভালো গল্প নেই। তামিল সিনেমার গল্প মেরে সিনেমা বানানো হয়। একশ কোটি টাকার একটা চলচ্চিত্র এক কোটি টাকায় বানালে সেটা নিশ্চয়ই কেউ দেখবে না। ইউটিউব এখন হাতের কাছে। দর্শকও অনেক বেশি বোঝে। একশ কোটি টাকার তামিল চলচ্চিত্র যখন বাংলাদেশে এক কোটি টাকায় বানানো হবে, দর্শক নিশ্চয়ই টিকিট কেটে হলে নকলটা দেখতে যাবে না! গল্প অনেক বড় একটা বিষয়।

ঢাকাই চলচ্চিত্র এখন নানামুখী সমস্যাক্রান্ত...
আমি মনে করি, নানাভাবে আমরা প্রযোজকদের অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছি। যার জন্য তারা এখন নেই। দ্বিতীয়ত, হল কমে গেছে। হলের পরিবেশ খারাপ হয়ে গেছে। যতটুকু সম্ভব সেটা সংস্কার করতে হবে। তাহলে দর্শক আবার হলমুখী হবে। এখন পুরো শিল্প দুইটা ভাগ হয়ে গেছে। সেটা এফডিসি-কেন্দ্রিক হোক বা যে কোনো জায়গার। গ্রুপিং ভেঙে কাজ করতে হবে। সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। এটাই হলো মূল কথা।

অচলায়তন ভাঙতে সরকারের কী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন?
সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, সংকট অনেকাংশে কাটবে। ইতিপূর্বে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, সারা দেশে ১০০টি সিনেমা হল বানিয়ে দেওয়া হবে। সেগুলো যদি করা হয়, চলচ্চিত্র শিল্প তথা সংস্কৃতির জন্যই মঙ্গল। সরকার সংশ্লিষ্টরা সব জানেন, তারা চাইলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।

রিয়েলিটি শো-সহ নানাভাবে নতুনরা আসছেন মিডিয়ায়। বন্ধ্যা পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের বিকাশ কীভাবে ঘটাবেন?
নতুনদের সবাই চলচ্চিত্র করতে আসছে না। কেউ আসছে নাটক করতে, কেউবা যুক্ত হচ্ছে মিউজিক ভিডিওর সঙ্গে। নানাভাবে নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানো যায়। সবাই চলচ্চিত্রে আসছে না। কেউ কেউ আসছে। তবে আমরা যারা পুরোনো শিল্পী, তাদেরও কাজের অভাব। তবে নতুনদের নিয়েও কাজ হচ্ছে। সামনে আরও হবে। গত রোববার দুইটা চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হলো। কম বাজেট নিয়ে হলেও যদি দুই চারজন এগিয়ে আসে আবার হয়তো সুদিন ফিরবে। তখন পুরনোদের পাশাপাশি নতুনরাও কাজ করতে পারবে।

মিডিয়া নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মিডিয়া বলতে আমি চলচ্চিত্রকেই বুঝি। এখন কাজ করছি মিউজিক ভিডিওতে; প্রচুর কাজ করলেও আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে চলচ্চিত্র। একজন অভিনেত্রী হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেতে চাই। এতটুকুই চাওয়া। আইটেম সং এখন আর করব না, একেবারে বাদ দিয়ে দিয়েছি। আরও দুই বছর আগেই ঘোষণা দিয়েছি, আইটেম সং করব না। করিও না এখন। একজন নায়িকা হিসেবে সামনে কাজ করব। ভালো ওয়েব সিরিজ এলে সেখানেও কাজ করব। ভালো মিউজিক ভিডিওতে কাজ করতে চাই। এটাই লক্ষ্য।

যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই রয়েছেন। আপনার অবস্থান কী?
আমি পক্ষ-বিপক্ষ কোনোটাতেই নেই। পক্ষের কথা যদি বলি, যৌথ প্রযোজনার ছবি আগেও হয়েছে। তবে সব যেন নিয়ম মেনে করা হয়। আমাদের যে মেকআপ আর্টিস্ট বা ড্রেস ম্যান আছে এরা অনেকটা নিডি। এদের একেবারে ঘরে বসিয়ে দিয়ে যদি ওদিককার সাপোর্ট নিয়ে সব কাজ করা হয় তাহলে এদের ক্ষতি হয়ে যায়। শিল্পী হিসেবে শুধু আমার দাবিটা জানাব না, নেপথ্যে যারা কাজ করে তাদের সাপোর্ট দিয়ে যদি যৌথ প্রযোজনা করা হয় তাহলে সমর্থন দেব। এরা যদি বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকে, পরিবার চালাবে কীভাবে?

অংশীদারি চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আপনার চাওয়া কী?
যৌথ চলচ্চিত্রে শেয়ারিংটা অর্ধেক-অর্ধেক হওয়া উচিত। শুধু বাংলাদেশের নায়ক নিয়ে ওখানকার নায়িকাসহ অন্যান্য কুলাকুশলী এবং কর্মীবাহিনী নেওয়া হয় এটাকে সমর্থন করি না। মেকআপ আর্টিস্ট, ড্রেস ম্যান, প্রোডাকশন ম্যানেজার, প্রোডাকশন বয়সহ সকলকে নিয়েই যেন কাজ করা হয়। এরা কখনো যেন অনুভব না করে আমাদের হাতে কাজ নেই। যৌথ প্রযোজনা হলেও যেন দেশের মানুষ সাপোর্ট পায়। কাজ থেকে তারা যেন দূরে সরে না যায়।

হালে ঢাকার হলগুলোতে ভারতীয় বাংলা সিনেমাও চলছে। আপনি কি এই আমদানির পক্ষে?
কলকাতার সিনেমা চালানোর পক্ষে নই আমি। আমদানি করা কয়টা ছবি চলছে; দর্শক দেখতে আসছে? যে ছবি স্যাটেলাইটে দেখা যাচ্ছে, ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে সেটা তারা কেন হলে গিয়ে দেখবে? আমদানি করে কী লাভ হচ্ছে। নিজেদের শিল্পীদের বসিয়ে আমদানি করা ছবিতে প্রকৃতপক্ষে কী লাভ হচ্ছে! কোনো সিনেমাই চলছে না। আমি আমদানির ঘোর বিরোধী।

 
Electronic Paper