ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ক থা সা মা ন্য @ খোলা কাগজ

হার্ট বোঝে কিন্তু মন বোঝে না

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০১৯

আরজে নীরব নামেই তিনি সবার কাছে পরিচিত। দেশের এফএম রেডিও জগতের দিকপাল এ মানুষটি তার বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে

ঈদের প্রোগ্রাম নিয়ে তো ব্যস্ত সময় কাটালেন...
ঈদ উপলক্ষে মোট ৮টা প্রোগ্রাম করেছি।

ফ্যামিলির সঙ্গেও তো ভালো সময় কাটিয়েছেন ঈদের ছুটিতে...
হ্যাঁ, শুটিং শেষ করেই পুরো ফ্যামিলি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমরা গ্রামেই ঈদের সময়টা কাটাই। পারিবারিকভাবে সবাই মিলে একসঙ্গে কবর জিয়ারত করি।

কার কবর জিয়ারত করেন?
পরিবারে যারা মারা গিয়েছেন, তাদের সবার কবর একসঙ্গেই। আমাদের পারিবারিক কবরস্থানেই জিয়ারত করি।

এথেনা নামে যে উদ্যোগটির সঙ্গে কাজ করছেন...
এটা হসপিটাল, আমার নতুন ভেঞ্চার। আমি অ্যাটাচড হলাম গত মাস থেকে। দীর্ঘদিন ধরে কিছু প্র্যাকটিস করছিলাম, রিসেন্ট কিছু কাজ করার পর মনে হলো হসপিটালে বসি। তারা আমাকে একজন রিলেশনশিপ কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এ কাজটি সম্পর্কে বলুন...
রিলেশনশিপ কাউন্সিলর হিসেবে মানুষের সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম নিয়ে কাজ করি। এখন দেখা যাচ্ছে প্রতিটি সম্পর্কেই নানা রকমের জটিলতা থাকে। সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে, ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে, সন্দেহ বাড়ছে। এ জায়গা থেকে মানুষকে হেল্প করার জন্য মনোবিজ্ঞানীদের যে পার্ট তা নিয়ে কাজ করছি। এটা চ্যারিটি ওয়ার্ক না, কমপ্লিটলি অন্য ৮/১০টা হাসপাতালের মতো।

মানুষের কষ্ট শুনতে কেমন লাগে?
এটা তো আমি ২০০৫ থেকেই করে আসছি। রেডিওতে কাজ শুরুর দিন থেকেই করছি। আমার দেশে-বিদেশে প্রায় ৫৪টার মতো কোর্স করা আছে। রেডিওতে ডে ওয়ান থেকে বলি আমি জানি যে ঢাকার মানুষ কতটা একা। আর এখন সেটা প্রফেশনালি দেখি। সত্যি বলতে কাজ করার অনেক জায়গা, বাংলাদেশে তো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ বলতে গেলে সেভাবে হয় না। মানসিক ইনস্টিটিউটও তো মাত্র কয়েকদিন আগে হলো। হার্ট বোঝে কিন্তু মন বোঝে না। অথচ মনের জন্যই হার্টের অসুবিধা হয়। চেষ্টা করছি, এটা তো হয় যে চুপচাপ কোথাও কিছু বলতে পারলে রোগ সেরে যায়। মনটা হালকা হয়। বিভিন্ন কারণে ফ্রেন্ড অথবা পরিবারের মানুষের কাছে শেয়ার করতে পারে না। একজন কাউন্সিলর এ জায়গা থেকে নিরাপদ, ওই চেষ্টাটাই করছি। দেখি আল্লাহ পাক কী করেন। আমার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল কাউন্সিলর হওয়ার। এটাই ফাইনালি একটা টার্গেট।

পাশাপাশি সিটি এফএম-এও আছেন...
সিটি এফএম এ হেড অব প্রোগ্রাম হিসেবে আছি।

আরজে হিসেবে প্রোগ্রাম করেন?
আরজে হিসেবে সকালে একটা প্রোগ্রাম করি ‘নীরব সকাল’। সেখানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েই কাজ করি।

আপনি তো নাটকে অভিনয় করেছেন, নীরব খান নামে সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন...
হ্যাঁ, সিনেমায় অভিনয় করেছি। এখনো রিলিজ হয়নি।

সিনেমায় কি কন্টিনিউ করবেন না?
নিশ্চিত না, অনেস্টলি বলতে গেলে কি আমার ভাল্লাগে না। এ সময় অভিনয়ের জায়গাটা এখন কেমন যেন হয়ে গেছে। কমফোর্ট ফিল হচ্ছে না।

আপনি তো গানও গেয়েছেন, ফোন করার সময় যে গানটি বাজছিল সেটিও আপনার গাওয়া?
হ্যাঁ, এটাও আমার গাওয়া। আমার তিনটা গান আছে। গান গাইতে অনেক সাহস লাগে, আল্লাহ আমার গলায় সুর দেননি এটা আমি জানি। তাই জেনেশুনে বাদ দিয়ে দিয়েছি।

অনেক সময় বলা হয় যে, যারা সুন্দর করে কথা বলতে পারে তারা গানও গাইতে পারে।
সুরটা আল্লাহর দেওয়া, এটা প্রাকটিস করে হয় না।

গান কি তাহলে আর গাইবেন না?
গান গাইবো, আমি কিছু র‌্যাপ গানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। লেখালেখি চলছে।

আপনি তো শুরুর দিকে যারা আরজে হিসেবে পথিকৃৎ ছিলেন, তাদের একজন। এখন তো রেডিও অনেকগুলো হয়ে গেছে। রেডিওর বর্তমান অবস্থান নিয়ে কেমন বোধ হয়?
রেডিও আরও দরকার, রেডিও হচ্ছে হোটেলের খাবারের মতো। একটা হোটেলে আইটেম থাকে ১০০/২০০, এর মধ্যে আপনি গিয়ে পছন্দ করেন আপনার নির্দিষ্ট কোনো আইটেম। ব্যাপারটা ঠিক এরকমই, ১০০/২০০ রেডিও থাকবে আপনার পছন্দ যেটা আপনি সেটা শুনবেন। রেডিও আরও হওয়া দরকার।

শুরুর দিকের অনুভূতি, যখন রাতভর গান প্রোগ্রামটা করতেন...
আমি এখনো সকালবেলা উঠি। সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শো করি। প্রতিটি সময়েই প্রতিবার কথা বলার সময়েই ভয় লাগে, অপ্রস্তুত হয়ে যাই। এখনো প্রাকটিস করি, তারপর মাইকের সামনে দাঁড়াই। রেডিওতে প্রত্যেক দিনই আমার কাছে নতুনের মতো লাগে।

ছাত্রজীবনে তো বিতার্কিক ছিলেন, এ বিতর্ক শিল্পকে কাজে লাগানো প্রসঙ্গে...
বিতর্কের কোনো বিকল্প নেই। আপনি যা কিছু করেন, যে পেশায় যান বিতর্কের আসলেই কোনো বিকল্প নেই। আপনার বিতর্ক লাগবেই, ভালো কিছু করতে গেলে কমিউনিকেশন টাইপের জব করতে গেলে বিতর্কের কোনো বিকল্প নেই। আপনি ভালো উপস্থাপনা শিখতে চান, করপোরেট জগতে ভালো লেভেলে আসতে চান-এটা লাগবেই। ডিবেট করলে নিজের পরিচ্ছন্নতা আসে। যা বলছেন তা জেনে বলছেন কি না, যা বলছেন তা ক্লিয়ার হচ্ছে কি না সেটি স্পষ্ট হয়। মানে লজিক, অ্যান্টি লজিক কাজ করে তো।

আপনার জীবনের স্বপ্ন নিয়ে বলুন...
প্রথম স্বপ্ন সত্যি কথা বলতে রাজনীতি করার ইচ্ছে আছে এক সময়। তবে সেটা আরেকটু ম্যাচিউর্ড হলে, এখনো অনেক কিছু বুঝি না। যখন বুঝতে পারব তখন শুরু করব। দ্বিতীয় স্বপ্ন খুব ইচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত একটা বাংলাদেশ দেখার। এর জন্য কাজ করব। আর তৃতীয় স্বপ্ন বেশকিছু সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিজের সঙ্গে জড়িত হব। বৃদ্ধাশ্রম থেকে শুরু করে চাইল্ড এডুকেশন, স্যানিটারি, পরিচ্ছন্নতা, তারপর এখন যে অনেক ওয়েব অ্যাবিউজমেন্ট হয় সেগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। দেখা যাক আল্লাহ কতটুকু কাজ করার সুযোগ দেন।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

 
Electronic Paper