ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জীবন থেকে গল্প নিই

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ১:২৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০১৯

সীমান্ত সজল নাটক নির্মাণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

বেড়ে ওঠার গল্প...
আমার শুরুটা আসলে হয় পড়ালেখার পাশাপাশি গান দিয়ে। আমি নজরুল একাডেমি থেকে গান শিখতাম। আমি যখন সকালবেলা বাসায় হারমোনিয়াম দিয়ে সা-রে-গা-মা রেওয়াজ করতাম, গানের একদম শুরুটা তখন দেখা গেল এক দিন শুক্রবার সকালে আমাদের বাসায় হঠাৎ করে কড়া নাড়ল কয়েকজন থিয়েটার কর্মী। তখন আমি হারমোনিয়ামে গান প্রাকটিস করছি। আমার বাবা দরজা খুললেন, তখন তারা বলল যে, এ বাসায় আমরা প্রায়ই শুনি একটা ছেলে প্রতিদিন রেওয়াজ করে, আমরা সেই ছেলেটিকে চাই। মানে কী? বলল, বসে কথা বলি।

তারপর...
তারা বসল আর বলল, আমরা আসলে একটা থিয়েটার থেকে এসেছি। আমাদের মঞ্চে এমন আর্টিস্ট দরকার, যে অভিনয়ও করবে আবার গানও করবে। আমাদের অনেক আর্টিস্ট আছে, শুধু অভিনয় করবে কিন্তু গান তো করতে পারবে না। এটা লাইভ গান গেতে হবে। বাবা বললেন, ও তো মাত্র মেট্রিক পরীক্ষা দিল, এখনো রেজাল্ট দেয়নি। এ ফাঁকে ও গান শিখছে। কলেজে ভর্তি হলে ও গানটা কন্টিনিউ করবে, ও অভিনয় করবে কি না জানি না। ওর অভিনয়ের প্রতি কোনো ইচ্ছেও নেই। তখন তারা বলল, এখনো তো রেজাল্ট দেয়নি এর ফাঁকে আমাদেরটা করুক।

বাবার কি সাপোর্ট ছিল?
বাবা আমার দিকে তাকালেন। আমি বললাম হ্যাঁ, আমি করব। এর পর গানের পাশাপাশি থিয়েটার করতে থাকলাম। আমার ইচ্ছে ছিল টিভিতে অভিনয় করব। এবং আমি টিভি নাটকের অভিনয়ের শুটিংয়ে গিয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত আমি অভিনয় করতে পারিনি। আমার ডিরেক্টর স্যার আমাকে অভিনয় করতে দেয়নি। কিন্তু তিনি সেদিন আমার হাতে বিদ্যা তুলে দিয়েছিলেন।

কেমন বিদ্যা ছিল সেটি?
তিনি বলেছিলেন, বাবা তুমি তো গান করতে পারো আবার তুমি লেখালেখিও পারো; তুমি এ প্রজেক্টে আমার সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করো। আমি তো ডিরেক্টর, তোমাকে ভবিষ্যতে অনেক কাজ করাতে পারব। তুমি মনে কষ্ট রেখো না, আমার অ্যাসিস্ট্যান্টটা আসেনি; আমি একা হিমশিম খাচ্ছি। তুমি বাংলায় পড়েছো, তুমি গান যেহেতু করতে পারো। আর সেটা একটা মিউজিক ভিডিওর শুটিং ছিল। তখন আমি কি করলাম, হয়ে গেলাম অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। উনার কথার কারণে আমি দায়িত্ব পালন করেছি ঠিকই।

ডিরেক্টর হওয়ার আশা...
আমার মনে দুলছিল আমি অভিনয় করতে আসলাম, আমাকে একটা ক্লিপবোর্ড আর টেপরেকর্ডার ধরিয়ে দিল। এরপর অনেক দিন আমি আর উনার অফিসে যাইনি। তারপর আমি গান করছি, নাটকও করছি। কিন্তু আল্টিমেটলি যত জায়গায় নাটক করতে যাই, কোনো না কোনোভাবে মানুষ আমাকে একটা না একটা দায়িত্ব দিয়ে বসে থাকে। আমি অভিনয় করি, দায়িত্বগুলোও পালন করি।

এর মাঝে থিয়েটারের দিনগুলো...
একটা পর্যায়ে দেখা গেল, আমার ওই থিয়েটারটার ভেতর আমি গেলাম, শো করলাম, ওই থিয়েটারটায় আমি গান করছি। আমি উদীচী গণসংগীত সংগঠন করছি, তারপর আমি ঢাকা ড্রামা যে নামকরা থিয়েটার সে থিয়েটার দলের মধ্যে আমি মিউজিক কম্পোজার মানে প্রডাকশনে মিউজিকও করছি; টোটাল মিলে আমি গান করছি গানটা আমি ভালোবেসেই করছি। কিন্তু বিখ্যাত শিল্পী হব তা না কিন্তু, গান করছি আর এদিক দিয়ে এসএসসি, ইন্টারমিডিয়েট তারপর অনার্সে ভর্তি হচ্ছি।

ছাত্রজীবনের বাকি পর্বটুকু...
অনার্সে চান্স পেলাম প্রাণীবিদ্যায়, তেলাপোকা কাটতে হচ্ছে ওখানে আমাকে ব্যাঙ কাটতে হচ্ছে, কিন্তু আমার তো রক্তের মধ্যে গান বাসা বাঁধছে। আমি তেলাপোকা, ব্যাঙ কেটে কী করব? আমি বাবাকে বললাম আমার এটা ভালো লাগছে না, বাবা আমাকে গ্রামে ডিগ্রিতে ভর্তি করালেন। আমি ডিগ্রি পাস করে ফেললাম, এখন আমি যে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে অনার্সে পড়তাম, সে অনার্স বাদ দিয়ে ডিগ্রি পাস করে জগন্নাথে মাস্টার্সে চান্স পেলাম বাংলা সাহিত্যে। তখন আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলাম, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

নির্মাতা হিসেবে বেড়ে ওঠা...
দশটা বছর আমি বড় বড় ডিরেক্টরের সঙ্গে চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছি। কাজ শেখার জন্যই এটা করেছি। একটা পর্যায়ে এটিএন বাংলায় একটা রিয়েলিটি শো হলো নাট্যযুদ্ধ, সেখানে কিন্তু আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে অ্যাটেন্ড করিনি, একজন নির্মাতা হিসেবে অ্যাটেন্ড করেছি। পুরো বাংলাদেশে ৬৪ জেলাতে আমি নির্মাতা হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।

প্রথম কাজ...
দশ বছর ছিল আমার শেখার অভিজ্ঞতা আর দুই বছর ছিল আমার ডিরেক্টর হিসেবে আবিষ্কারের প্রতিযোগিতা। ১২ বছর তপস্যা করার পর আমার প্রথম নাটকটা গেল এনটিভিতে ‘মৃত্তিকা ও মারিয়ার গল্প’।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা...
আমি জীবন থেকে গল্প নিই, আর আমি আসলে নির্মাতা হতে চাইনি, মানুষগুলো আমাকে নির্মাতা হিসেবে চেয়েছে। এটার জন্য সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, ভবিষ্যতে আমি একজন নামকরা চলচ্চিত্র নির্মাতা হতে চাই।

 
Electronic Paper