শাহনাজ রহমতুল্লাহর জন্য শোকগাথা
বিনোদন প্রতিবেদক
🕐 ২:২৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০১৯
না ফেরার দেশে একে একে চলে যাচ্ছেন কিংবদন্তি শিল্পীরা। তাদের এ প্রস্থান তৈরি করছে এক অপরিসীম শূন্যতা। দীর্ঘদিন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করার পর হঠাৎ করে বিদায় নিয়ে চলে গেলে এক বেদনাবিধুর পরিস্থিতি তৈরি হয় সহশিল্পীদের মাঝে। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন তারা আর স্মৃতির পাতায় কাটানো শ্রেষ্ঠ সময়ের কাছে হারিয়ে যান নিমিষেই। কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুতে তেমনি শোকাহত হয়ে পড়েছেন তার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করা সংগীত শিল্পীরা। দেশের সংগীত অঙ্গনে তার সহশিল্পীদের তেমনই কিছু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
আমাদের সংগীতের জন্য এ এক বিরাট ক্ষতি। কিংবদন্তি মানে আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা। আমাদের আকাশ থেকে আরও একটি তারা খসে গেল। আমি জানি না, আর কত সেরা শিল্পীকে আমাদের হারাতে হবে। আল্লাহ তার আত্মাকে শান্তিতে রাখুক।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ আর আমাদের মধ্যে নেই। তার দুই ভাই সংগীত পরিচালক আনোয়ার পারভেজ আর নায়ক-গায়ক জাফর ইকবাল আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ আলোটিও নিভে গেল। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
বিশ্বের প্রতিটি দেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থাকে। আপনি যদি খুঁজে দেখেন, তাহলে পাবেন! শাহনাজ রহমতুল্লাহ বাংলাদেশের তেমনই একজন। বাংলাদেশের নাম তিনি উজ্জ্বল করেছেন গানের মাধ্যমে! তার এই হঠাৎ চলে যাওয়া খুব বেদনার।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ অভিমান বুকে নিয়ে চলে গেলেন! কেন করেছিলেন, তা আমি বলব না। এখন তা বলার সময়ও নয়। তবে ধীরে ধীরে তার মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের চলে যাওয়ার যে ক্ষতি, তা আর পূরণ হচ্ছে না। হবেও না।
তিনি এভাবে হুট করে চলে যাবেন, সত্যিই ভাবিনি। এটা আমার জন্য বিশাল একটা ধাক্কা। এটা তো সত্যি আমরা যারা গান শিখেছি এবং এখনো গান করার চেষ্টা করছি তারা এই মানুষটাকে সরাসরি ফলো করেছি। তিনি ছিলেন আমাদের মায়ের মতো। তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবকের মতো। আজ সেই মানুষটা হুট করে চলে গেলেন। নিজেকে বড় একা আর অসহায় লাগছে।
চলে যেতে হয়, এটাই স্বাভাবিক। তবে এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়াটা খুবই বেদনার। শাহনাজ রহমতুল্লাহ আমাদের মাথার ওপর ছাতার মতো ছিলেন। সেই ছাতাটা সরে গেল। মাথার ওপর থেকে ছাতাটা সরে গেলে কেমন লাগে সেটা যার যায় সেই বোঝে। এই কষ্টটা বোঝাতে পারব না। আমরা তার অভাবকে অনুভব করবো। তিনি তার গানের মাঝেই বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।
অনেক শিল্পীর কিছু গান ফ্লপ হয়। কিন্তু শাহনাজ রহমতুল্লাহর ক্যারিয়ারে এটা নেই। দেশের গান, সিনেমার গান, আধুনিক গান- সবখানেই শাহনাজ রহমতুল্লাহ ছিলেন সফল। শাহনাজ রহমতুল্লাহ একাধিক ভাষায় গাইতে পারতেন। তিনি ছিলেন বাঙালির গর্ব। যতদিন আমরা বেঁচে থাকব, আমাদের পরের প্রজন্ম ও বাংলা ভাষাভাষীর অনুভূতি যতদিন থাকবে ততদিন শাহনাজ রহমতুল্লাহ বেঁচে থাকবেন।
একজন প্রকৃত শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তি চলে গেলেন। কিছু বুঝতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে। শুনলাম এশার নামাজ পড়ে নামাজের পাটিতেই তার মৃত্যু হলো! আল্লাহতায়ালা তাকে সম্মানের সঙ্গে নিয়ে গেলেন। যার গান শুনে, গান গেয়ে বড় হয়েছি, যার গানে সরলতা পেয়েছি তাকে হারিয়েছি একটু আগে! তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
আমি আর ফাহমিদা আপা যখন একেবারে ছোট, তখন তার গান গাইতে গাইতে আমাদের বেড়ে ওঠা। সেই ছোটবেলায় যে আদর তিনি আমাদের করতেন, তা বড়বেলাতেও পেয়েছি! শুধু গায়িকা নন, তিনি আমার আদর্শ ছিলেন, অভিভাবক ছিলেন। তিনি সব সময় বলতেন, ‘তুই গান গেয়ে যাবি। থামবি না। আমার সব গান তুই গাইবি!’
বাবা (আলাউদ্দিন আলী) ও শাহনাজ আন্টির যে কত সুন্দর কালজয়ী গান আছে, তা হয়তো গুণে বলা সম্ভব নয়। মা’র (সালমা সুলতানা) অমূল্য সম্পদ যা আমি সব সময় আমার কাছে রাখি তা হলো মা’র গানের খাতা। ১৯৭৫ থেকে যত গান মা অথবা বাবার সৃষ্টি তার প্রায় সব গানই মার খাতায় দিন তারিখসহ মা’র নিজ হাতে লেখা আছে।