ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আমার কাছে নজরুল প্রতিদিনই আবিষ্কৃত হয়

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ১০:২০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮

ড. লীনা তাপসী খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। নজরুল সংগীত জগতের পরিচিত এ মুখ দেশের সংগীতচর্চা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, নজরুল সংগীতের প্রতি ভালোবাসা ও সর্বোপরি সংগীতে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহের জায়গা নিয়ে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে

নজরুল সংগীতের প্রতি আপনার আগ্রহ কীভাবে জন্মালো?
আমি ছোটবেলা থেকেই সংগীত চর্চা করি। এ ক্ষেত্রে আমার বাবার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। বাবা সব ধরনের গানই চর্চা করতে বলতেন, তবে যে গান চর্চা করে স্বাচ্ছন্দ্য পাবো সে গানের প্রতি তিনি মনোযোগী হতে বলেছিলেন। তার কথা মতো গান চর্চা করতে গিয়ে আমি নজরুলের গানে সুরের যে বৈচিত্রতা দেখেছি, তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ‘কেউ ভোলে কেউ ভোলে না স্মৃতি’ গানটা আমাকে সেই ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়ার সময় খুব করে টানতো। ‘উচাতন মন ঘরে রয় না’, ‘পদ্মার ঢেউ রে’ এমন গানের পাশাপাশি শ্যামাসংগীত শুনতে গিয়ে দেখতাম নজরুলের গানে তো সবই আছে। এখানে ক্ল্যাসিকাল আছে, ফোক আছে, আধুনিক গান আছে।

তারপর আমি যখন ভারতে উচ্চাঙ্গ সংগীতের ওপর পিএইচডি করতে যাই, তখন সেখানে দেখি নজরুলের গান আরও নতুন ভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। নতুন রাগ তৈরি হচ্ছে, এসব দেখে আস্তে আস্তে আমি নজরুল সংগীতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। তা ছাড়া নজরুলের জীবন দর্শন ও কর্মময় জীবন নজরুলের প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি করেছে। আমার মনে হয়েছে, নজরুল রাজনীতি না করলেও পারতেন। কারণ তার যা অর্জন ছিল, তাই ছিল অঢেল। তা ছাড়া তার আগে এভাবে রাজনীতিতে কোনো কবির সোচ্চার হওয়ার উদাহরণও ছিল না। তিনি জেলে ৪০ দিন অনশন করেছেন, রাজদ্রোহী হয়েছেন। নজরুলের দর্শন, উদ্দীপনামূলক গান, জাগরণের গান পরিণত বয়সে আমাকে খুব টেনেছে।

নজরুলের মানস ও অসাম্প্রদায়িক ভূমিকা আমাকে নজরুল প্রেমিক হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। নজরুলের গান, ভাবদর্শন সবমিলিয়ে আমি একজন নজরুলপ্রেমিক। নজরুলের আধ্যাত্মিকতা নিয়ে আমি একটি ডকুমেন্টারিতে কাজ করছি, সেটার রেকর্ডিং হচ্ছে। আমি যখন কল্পনা করি ১০ বছরের একটি ছেলে কীভাবে বিস্ময় তৈরি করতে পারে। তখন স্প্রষ্টার বিশালতাকেও উপলব্ধি করতে পারি, কতটা অসীম শক্তি থাকলে অজপাড়াগায়ের একটি ছেলের মধ্যে তিনি এত প্রতিভা ঢেলে দিতে পারেন; তা ভেবে মুগ্ধ হই।
আমার কাছে নজরুল প্রতিদিনই আবিষ্কৃত হয়। আমি নজরুলের সব গান ওয়েবসাইটে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

নজরুল সংগীতচর্চার ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ কেমন পরিলক্ষিত হয়?
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যারা নজরুল সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করছে তারা গভীরে যেতে পারছে। অন্যরা সেভাবে পারছে না।

এবার আমাদের দেশের সংগীতচর্চার প্রসঙ্গে আসি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ভূমিকা নিয়ে বলুন।
এখনো কৃতকার্য বলব না। এর কারণ হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিটা ভুল। অন্য কোনো বিভাগে চান্স না পেয়ে এ বিভাগে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীরা আসে। নিজের প্রতিভা বলে এ বিভাগে চান্স পাওয়ার সংখ্যাটা খুব কম। মাত্র ২/৩% শিক্ষার্থী থাকে যারা সংগীত শিখে এখানে আসে। আমি চেষ্টা করছি এ ভর্তি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সংগীত চর্চা নিয়ে বলুন।
ট্যালেন্ট আছে, কিন্তু এ ট্যালেন্টকে শানিত করা যাচ্ছে না। এটাকে শানিত করতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে ভালো ভালো কণ্ঠশিল্পী রয়েছে, কিন্তু চর্চার কমতি রয়ে গেছে। এটা যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চেষ্টা করা হয়, তাহলে চর্চার সুযোগ হবে।

সংগীত নিয়ে আপনার বর্তমান ব্যস্ততা...
আমি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বেঙ্গলি মিউজিয়াম (আইসিবিএম) নিয়ে কাজ করছি। আগামী ৮, ৯ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমিতে বাংলা সংগীত উৎসবের আয়োজন করব।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ।

 

 
Electronic Paper