ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নেশার জন্য গাড়ি-মোবাইল চুরি করতেন এ অভিনেতা!

অনলাইন ডেস্ক
🕐 ১২:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩

নেশার জন্য গাড়ি-মোবাইল চুরি করতেন এ অভিনেতা!

‘জানি দেখা হবে’ থেকে ‘চতুষ্কোণ’। টিভি পর্দায় ব্যাক টু ব্যাক কাজ করেছেন অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি সিরিয়াল এবং সিরিজে কাজ চালিয়ে গেছেন তিনি। ‘গাঁটছড়া’ ধারাবাহিকের হাত ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছেন। তবে অভিনেতার যাত্রাপথ মোটেও মসৃণ ছিল না। একসময় মাদকাসক্ত ছিলেন তিনি। নেশার সামগ্রীর জন্য এতটাই পাগল হয়ে উঠতেন যে অপরাধ করতেও দ্বিধা করতেন না। গাড়ি কিংবা মোবাইল চুরি করে টাকা জোগাড় করতেন। মায়ের গয়নাতেও হাত দিয়েছিলেন! একাধিকবার রিহ্যাবে থেকেছেন।

 


কিন্তু বের হওয়ার পর যেই সেই! আবারও ফিরে গেছেন নেশার জগতে। একের পর এক বন্ধু মাদক সেবন করতে গিয়ে মারা গেছেন। ভয় লেগেছে। তবু নিজের প্যাটার্ন ভাঙতে পারছিলেন না। অবশেষে নেশাকে জয় করতে পেরেছেন তিনি। ১৫ বছর আগে ২২ জানুয়ারি নতুন জীবন পেয়েছিলেন। সে কারণেই এই দিনটি তাঁর কাছে বিশেষ। ফেসবুকে পুরনো স্মৃতিচারণা করে ইতিবাচক বার্তা দিলেন আবারও।

অনিন্দ্যর কথায়, ‘আমার কাছে এখনো জলের মতো স্পষ্ট ২০০৮ সালে আজকের এই দিনটা। আর দেখতে পাই বলেই হয়তো আজ এই পোস্ট করতে পারছি। ব্যাঙ্কসাল কোর্টে হাজিরা দিয়ে আমাকে রিহ্যাবে ফিরতেই হতো।

রাত নয়টার বনগাঁ লোকাল ধরে আমাকে যেতে হত হাবড়া। শেষবারের মতো নেশা করব বলে একটু ব্রাউন সুগার, কয়েকটা পাতা, একটা সিরিঞ্জ, একটু তুলো আর একটা চামচ সঙ্গে নিয়েছিলাম। হাবড়া স্টেশনে নেমে একটু এগোলেই সেই রিহ্যাব যেখান থেকে আমার ভালো থাকার লড়াই শুরু হয়েছিল।’

তাঁর সংযোজন, ‘তার আগে প্রায় ২৮-২৯ বার ডিটক্স আর রিহ্যাব হয়ে গেছে। যেদিন ছাড়া পেতাম সেদিনকেই রিলাপস, এ রকম একটা প্যাটার্ন ছিল। আমাদের ভাষায় আমরা বলি ক্রনিক রিলাপসি। ছ’ থেকে সাত বছর ধরে অনবরত ঘুরতে থাকা একটা বৃত্ত। নয় বাইরে নেশা করছি নয় তালা চাবির ভিতরে ভালো আছি। তালা চাবির বাইরে বেরোলেই আবার নেশা।’

অনিন্দ্য জানান, তিনি যে কোনো দিন নেশামুক্ত হতে পারবেন, এই বিশ্বাস তাঁর ছিল না। আর অন্য কেউও তাঁর ওপর বিশ্বাস করত না। রিহ্যাবের খরচ দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছিল পরিবার।

অভিনেতার কথায়, ‘লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, কাঁসার জিনিস তখন আমার কাছে সোনার মতোই দামি। যেকোনো গাড়ির লক খুলতে লাগত ঠিক তিন মিনিট। একটা নোকিয়ার মোবাইল মানে নগদ দুই থেকে তিন হাজার। সেটাই অনেক তখন আমার কাছে। এমন একটা সময় আমি আমি বুঝতে পারছিলাম এভাবে যদি চলতে থাকে আমি ২৮ বছর অবধিও টানতে পারব না।’

বন্ধুদের মারা যেতে দেখে ভয় পেয়েছিলেন অনিন্দ্য। আর সেই ভয় থেকেই নেশার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস অর্জন করেছিলেন তিনি। অভিনেতা বলেন, ‘এভাবেই আমার ভালো থাকার শুরু । শুরুটা সত্যি কঠিন ছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজ যখন রাস্তায় লোকে সেলফি তুলতে চায়, অটোগ্রাফ চায়, ভালোবাসা দেয় তখন আমি নিজেকে দেখি আর পুরোটাই কেমন স্বপ্নের মতো লাগে। আদৌ এটা সত্যি হচ্ছে তো?’

আজও তাঁর ভেতরে থাকা নেশাতুর সত্তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন অনিন্দ্য। একেবারে শেষে বললেন, ‘মা চলে যাওয়ার আগে আমাকে নেশামুক্ত অবস্থায় দেখে গেছে। কিন্তু বাবা চলে যাওয়ার আগে আমার ঘুরে দাঁড়ানো প্রত্যক্ষ করে গেছে। গর্ব করে সবাইকে বলত আমি অনিন্দ্যর বাবা। বোনের ও গর্ব আমি। আর কী চাই?’

সূত্র : এই সময়

 
Electronic Paper