ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতন: পালাতে গিয়ে ২ আসামি গুলিবিদ্ধ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
🕐 ৪:০২ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০২১
ভারতের বেঙ্গালুরুতে এক বাংলাদেশি তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার ৬ জনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে দুই আসামি পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের পায়ে গুলি করলে দুজন আহত হন। শুক্রবার (২৮ মে) আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ন্যাশনাল হেরাল্ড ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, শুক্রবার (২৮ মে) সকালে পুলিশের হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করলে টিকটক হৃদয় বাবু ও ও তার সহযোগী সাগর পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়।
এ ব্যাপারে ডিসিপি (বেঙ্গালুরু ইস্ট) শ্রানাপ্পা এসডি বলেছেন, ‘শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ ঘটনার পুনঃতদন্তের জন্য অপরাধীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অপরাধস্থলে। দুজন পালানোর চেষ্টা করায় পুলিশ বাধ্য হয় গুলি চালাতে। অভিযুক্তদের পায়ে গুলি লেগেছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে জানান, কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০/২২ বছরের ওই তরুণীকে তিন-চার যুবক নির্যাতন করেন। তাদের সঙ্গে একজন তরুণীও রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতনের ঘটনাটি ভারতের কেরালার ঘটলেও ভিকটিম ও নিপীড়কদের একজন বাংলাদেশি নাগরিক। ওই নিপীড়কের নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’।
তিনি বলেন, যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে মগবাজার এলাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়। ওই আইডি ধরে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার মাকে ভিডিওটি দেখালে প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন, ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছেন। মগবাজার এলাকার অনেকেই তাকে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ বলে শনাক্ত করেন। হৃদয়ের বয়স ২৬ বছর।
হৃদয়ের মা ও মামার বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, কৌশলে হৃদয়ের মামার হোয়াইটস অ্যাপ নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করা হলে হৃদয় জানান, তিন মাস আগে তিনি ভারতে গেছেন। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটেছে ১৫-১৬ দিন আগের। ভিকটিম বাংলাদেশি। বাসা ঢাকায়, গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। মেয়েটির বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাইলে হৃদয় হোয়াটস অ্যাপে তার ভারতীয় পরিচয়পত্র পাঠান (আধার কার্ড)।
উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ জানান, হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে তারা মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন। মেয়েটির বাবা তার মেয়েকে চিনতে পেরেছেন। হৃদয়ের সঙ্গে নির্যাতনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের পরিচয়ও শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র, যারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অসহায়/বিদেশগমনে ইচ্ছুক নারীদের প্রলুদ্ধ করে পাচার করে। ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় এই নৃশংস ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িত হৃদয় বাবুর বাবা-মা ও মামাকে হাতিরঝিল থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মানবপাচারের মামলার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অভিযুক্ত ও নির্যাতনের শিকার তরুণীকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মেয়েটির বাবা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।