মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ
প্রবাসের খবর ডেস্ক
🕐 ১১:০০ পূর্বাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৮
মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের গত ছয় মাসে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৬৮ কোটি এক লাখ ৯১ হাজার ৫৫১ রিংগিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৮১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪ হাজার ৫১১ টাকা।
চলতি বছরের শুরু থেকে ১৮ জুন ১০১৮ পর্যন্ত এ পরিমাণ রিংগিত মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়াস্থ এনবিএল ও অগ্রণী রেমিটেন্সসংশ্লিষ্টরা।
এদিকে প্রবাসীরা বলছেন, অবৈধ পথে এর দ্বিগুণ টাকা পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাঙালিরা হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত, যা বাংলাদেশ সরকারের রেমিটেন্স খাতে গুরুত্বপূর্ণ কুপ্রভাব ফেলছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি একটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থাকার পরও হুন্ডিকে সঠিক হিসেবে মনে করছে অনেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ব্যবসার সঙ্গে শতাধিক বাংলাদেশি জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে হন্ডি ব্যবসার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। প্রত্যেকটি প্রদেশে রয়েছে তাদের শক্তিশালি নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২-৩ কোটি টাকা লেনদেন করে হুন্ডির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ দূতাবাস ও রেমিটেন্স হাউসগুলো বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করলেও কে শুনে কার কথা।
মালয়েশিয়াস্থ এনবিএল রেমিটেন্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শেখ আক্তার উদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত এনবিএলের ৯টি শাখার মাধ্যমে ২৪৪ কোটি ৭৯ লাখ ১২৫ রিঙ্গিত যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫২১ কোটি ৩৫ লাখ দুই হাজার ৮৩৬ টাকার রেমিটেন্স প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন।
আক্তার উদ্দিন বলেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনবিএলের পক্ষ থেকে আমরা সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করে যাচ্ছি। আর এ সচেতনতা বাড়াতে হাইকমিশনার মহ: শহীদুল ইসলাম দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হাইকমিশনারের দিকনির্দেশনাই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রবাসীদের বলা হচ্ছে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানো নিরাপদ এবং এনবিএলের ৯টি শাখার পাশাপাশি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে যাতে করে এনবিএলের সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।
অগ্রণী রেমিটেন্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ডাইরেক্টর মো. লুৎফুর রহমান বলেন, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত অগ্রণী রেমিটেন্সের ছয়টি শাখার মাধ্যমে ২৩৭ কোটি ৯৫ লাখ তিন হাজার ৯৪৬ রিংগিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯৫ কোটি ৩৪ লাখ এক হাজার ৬৭৫ টাকার রেমিটেন্স প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন।
লুৎফুর রহমান জানান, বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে সচেতনতামূলক বিভিন্ন আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে হাইকমিশনার মহ: শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়েছে। কীভাবে বৈধ পথে দেশে রেমিটেন্স বাড়ানো যায় সে বিষয়ে হাইকমিশনার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে গত ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৭ বিলিয়ন রিংগিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী।
২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা মোট ১১৯ বিলিয়ন রিংগিত পাঁচ বছরে মালয়েশিয়া থেকে তাদের দেশে পাঠিয়েছে।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ২ বিলিয়ন রিংগিত পাঠায় মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়ান প্রবাসীরা। ১৭ বিলিয়ন রিংগিত পাঠিয়ে বাংলাদেশিরা দ্বিতীয় স্থানে আছে। এ ছাড়া নেপালিরা ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন, ভারতীয়রা ছয় বিলিয়ন এবং ফিলিপাইন তিন বিলিয়ন রিংগিত পাঠিয়েছে। এর বাইরে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা তাদের দেশে রিংগিত পাঠিয়েছে।
মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন দেশের মোট ২২ লাখ বৈধ প্রবাসী কাজ করছেন। এ ছাড়া আরও প্রায় ২০ লাখ অবৈধ প্রবাসী কাজ করছেন মালয়েশিয়ায়।