ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কৃষিতে সফল উদ্যোক্তা আরমান

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
🕐 ১:২২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৮, ২০২১

কৃষিতে সফল উদ্যোক্তা আরমান

দীর্ঘ সময়ের বন্ধে সবাই যখন হতাশার মাঝে দিনাতিপাত করছেন, সেই বিরূপ পরিস্থিতিতেও থেমে থাকেননি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরমান হাসান। করোনাকালীন সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ভূমিকায় দাঁড় করিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষে এসে করোনার কারণে থেমে যায় পরীক্ষা। চলে যান গ্রামের বাড়ি শেরপুরে। সেখানে যখন শ্রমিকের অভাবে অধিকাংশ কৃষকের ধান কাটা বন্ধ ছিল তখন আরমান কৃষকদের এ দুঃখ লাঘবের জন্য যোগাযোগ করেন উপজেলা কৃষি অফিসে। সেখান থেকে সরকারি প্রণোদনায় কেনেন আধুনিক রিপার (ধান কাটার মেশিন)। গত আমন মৌসুমেই রিপার দিয়ে লাভ করেন প্রায় এক লাখ টাকা। মূলত এ সময় থেকেই তার কৃষিতে যাত্রা শুরু।

আরমান হাসান জানান, একর প্রতি জমিতে যেখানে ধান কাটার খরচ আট হাজার থেকে নয় হাজার টাকা সেখানে রিপার মেশিনে ধান কাটার খরচ হয় মাত্র দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। চলতি বোরো মৌসুমে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে আরও একটি রিপার নিয়ে ধান কাটা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে দুটি রিপার মেশিন দিয়ে ধান কাটেন তিনি। ধান কাটার মেশিন থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয়ও হয়ে থাকে। নির্ভরযোগ্য আয়ের সন্ধান পেয়ে করোনাকালে কৃষিকাজেই সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন আরমান।

এছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে শেখেন বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের কৌশল। তাদের সহযোগিতায় দুই একর জমিতে আখ ও আখের ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে আলুর চাষ করেন তিনি। শুধু আলু থেকেই চাষাবাদের খরচ উঠে আসে এবং আখ থেকে বার্ষিক ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এর পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ও বীজ ব্যবহার করে আম, টমেটো, আদা, লেবু, সরিষা, জিংক সমৃদ্ধ ধান চাষ করেছেন।

এছাড়াও বাড়ির পাশে তৈরি করেছেন আম ও মালটা ফলের বাগান। সেখানে সাথীফসল হিসেবে চাষ করেছেন মশলা জাতীয় ফসল আদা। যেখানে সাধারণ কৃষক একটা জমিতে বছরে দুটি মাত্র ফসল ফলায়; সেখানে আরমান আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই জমিতে চারটি ফসল করেন। আরমান ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করে একই জমিতে আমন ধানের পর সরিষা এর পর আবার বোরো ধান এরপর আবার আউশ ধান করে আমন ধান রোপণ করেন।

এ বছর জমি ভাড়া নিয়ে তার কৃষি কাজের আরও বিস্তৃতি করবেন বলে জানান তিনি। এখন আরমান তার পরিবার বাদেও অনেক পরিবারের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তার কৃষিকাজে প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ জন লোক কাজ করেন।

তিনি বলেন, অনেকে মনে করে কৃষিকাজে তেমন আয় নেই। সঠিক চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারলে বড় অঙ্কের টাকা আয় করা সম্ভব। শিক্ষিতদের কৃষি কাজ করা উচিত। সরকারিভাবে ধান বিক্রি করতে চাইলেও অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তাই আইটি বিষয়ে কৃষকদের ভালো ধারণা থাকা জরুরি। এসব বিষয়ে অজ্ঞ কৃষকরা নিজেদের পেট চালাতেই হিমশিম খান।

এক্ষেত্রে শিক্ষিত যুবকরা এগিয়ে আসলে খুব সহজেই তারা নিজেদের ও কৃষির উন্নয়ন সাধন করতে পারেন। শিক্ষিত কৃষক ইন্টারনেট, ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিভিন্ন ফসলের সঠিক চাষাবাদ সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষিত দেড় লাখ বেকারের চাকরির বয়সসীমা পার হয়েছে কিন্তু চাকরি মেলেনি তাদেরকে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করানোর চিন্তাভাবনা করছে আরমান।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper