ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সুন্দর আগামী গড়ছে 'হেল্প দ্যা ফিউচার'

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৭:২৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২১

সুন্দর আগামী গড়ছে 'হেল্প দ্যা ফিউচার'

ঢাকার একঝাঁক তরুণ-তরুণীর হাতে গড়ে ওঠা এক কিশোর সংগঠন 'হেল্প দ্যা ফিউচার'-আগামী প্রজন্মকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আরেক নাম। নিজেরা পড়ালেখার পাশাপাশি শেখাচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরও। কাজ করছেন স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সঠিক মানসিক বিকাশে। দেখা মিললো হেল্প দ্য ফিউচারের পরিচালক সাইফুল্লাহ খালেদের সঙ্গে; জানালেন তাদের সংগঠনের গল্প। শুরুটা কীভাবে?

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সাইফুল্লাহ খালেদ অন্যান্য দিনের মতোই রুটিন অনুযায়ী বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ছিলেন আড্ডায়। আড্ডার পাশেই বেশকিছু অসহায় শিশুর দিকে প্রতিনিয়ত চোখ আটকায় তার, ভাবনায় আসত তাদের জীবন, দুর্দশা নিয়ে। এরপরই ঠিক করলেন তাদের নিয়ে কিছু করবেন, ভাবের সঙ্গে কাজের মিল রেখে দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক করলেন তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি গরীব বা রাস্তায় ছেলেমেয়েদের পড়ানো এবং অন্যান্য বিষয় শেখানোর বিষয়ে।

এরপরই প্রতিদিন ক্লাস শেষে রুটিন ছিল তাদের সঙ্গে সময় কাটানো। কিন্তু তিনজনে আর কত? ছয় মাসেই তাদের ছোট সংগঠনটিকে বড় করতে জোগাড় করলেন আগ্রহী আরও তরুণ-তরুণী। দিয়ে দিলেন একটি সুন্দর নাম 'হেল্প দ্যা ফিউচার'। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কিশোর শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি দেশ ও দশের সাহায্য করার মনোভাব সবার মাঝে সৃষ্টি করা, অসহায়দের সহায়তা ও সৃজনশীল কাজ করার মনোভাবকে বিকাশ এর উদ্দেশ্য এবং 'একটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বাঁচো' নিজেদের এই মূলমন্ত্র নিয়ে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা তাদের এই সংগঠন মূলত কিশোরদের নিয়েই কাজ করে।

হেল্প দ্যা ফিউচার-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানতে চাইলে সংগঠনটির প্রধান সাইফুল্লাহ খালেদ বলেন, ‘আগামীর স্বপ্নবাজ শিশু-কিশোরকে একত্রিত করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি তাদের প্রতিভাকে বিকশিত করে চারিত্রিক গুণাবলীর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করে দেশ ও দশের সেবা করাই হেল্প দ্যা ফিউচারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।’

সমাজের অসহায় শিশুরা যখন ছিল অবহেলার পাত্র, তখন তাদের পাশে থেকে চিনিয়েছেন বাইরের জগৎ, পরিচয় করিয়েছেন শিক্ষার আলোর সঙ্গে। শুধু পথশিশু বা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাহায্য ছাড়াও দরিদ্রদের পাশেও রয়েছে সংগঠনটি। প্রতি বছর এ সংগঠনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা উপকরণ। শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণ, দুই ঈদে দেয়া হচ্ছে নতুন জামা ও ঈদ সামগ্রী আর সাথে বছরজুড়ে নানা আয়োজন তো থাকছেই।

সম্প্রীতি বিশ্ব পর্যটন দিবসে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আয়োজন করেছে সৈকত পরিচ্ছন্য অভিযান ও সচেতনতা কার্যক্রম যেখানে অংশগ্রহণ করেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত পর্যটকেরা। এ ছাড়া দেশের কোনো অঞ্চল ক্ষতির মুখে পড়লেই এগিয়ে যাচ্ছেন সংগঠনের সদস্যরা। ঈদে যখন সবাই ব্যস্ত পরিবারের সঙ্গে, তখন অসহায়দের পাশে কাটাচ্ছেন নিজেদের সময়। সবকিছুর পাশাপাশি কাজ করছেন শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে। সংগঠনের মাধ্যমে আয়োজন করা হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী, যেখান থেকে তরুণ-তরুণীরা আলোকচিত্রর মত সৃজনশীল বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। এবং সাথে বিভিন্ন কর্মশালা, যেখানে অংশ নেন শত শত শিক্ষার্থী।

এর পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর, যা ভূমিকা রাখছে তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য সহশিক্ষা ও বাস্তবমুখী কার্যক্রমে। তাছাড়া এই সংগঠনের মাধ্যমে অনেক অসহায় শিশুই এখন নিজেরাই উচ্চারণ করে পড়তে পারছে, লিখছে বর্ণ। পরিচিত হচ্ছে শিক্ষা জগতের সঙ্গে। এ ছাড়া বিভিন্ন সহায়তামূলক কার্যক্রম অসহায় শিশু কিংবা দরিদ্রদের মুখে এনে দিচ্ছে হাসির চিত্র। অনেক পরিবার যাদের দিন কাটত দিনমজুরের কাজ করে, আগের থেকে ভালো অবস্থানে এনে পরিবর্তন করে দিয়েছেন তাদের জীবনের মান। যেখানে কাজ করছে হেল্প দ্যা ফিউচারের একটি প্রকল্প ‘স্বনির্ভর’।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৬) ৬, নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন অর্জনের জন্য কাজ করছে প্রকল্প ‘সবার জন্য নিরাপদ পানি’ যার মাধ্যমে গ্রামের যে সকল পরিবার নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছেন তাদের জন্য টিউব-ওয়েল এর ব্যবস্থা করে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

সংগঠনের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে সাইফুল্লাহ খালেদ বলেন, প্রথম দিকে তেমন একটা সাড়া না পেলেও বর্তমানে সেটা বিপরীত।

প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। গত সাত বছরে আমরা যেভাবে মানুষের মুখে হাসির আলো এনে দিয়েছি আমাদের জায়গা থেকে, এতেই আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা। সংগঠনের দ্বারা যেভাবে অনেকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ কিংবা তাদের মুখের হাসি- এই সবকিছুকেই নিজেদের বড় সার্থকতা মনে করেন সংগঠনের প্রতিটি সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক। ভবিষ্যতেও এমনভাবে দেশের পরিবর্তনে কাজ করে যেতে চায় এই সংগঠন।

যার একটি উদাহরণ, আসছে বছরের শুরুতে পরীক্ষামূলক একটি বিদ্যালয়ে স্থাপিত হতে যাচ্ছে মেডিকেল ক্যাম্প। যেখানে প্রতি মাসে প্রতিটি ছাত্রকে পরীক্ষা করে নির্ণয় করা হবে তাদের শরীরের উন্নতি। যার মাধ্যমে দূর হবে শিক্ষার্থীদের শারীরিক দুর্বলতা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper