ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অনিকের অনন্য পথচলা

শ্রেয়া ঘোষ
🕐 ১:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২১

অনিকের অনন্য পথচলা

অনিক সরকার। নামটা কয়েকটি অক্ষরে আবদ্ধ থাকা খুব ছোট হলেও এই নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে অসংখ্য কেরামতির গল্প। ২০১৪ সালের বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া থেকে শুরু করে গুগলের ইউরোপীয় হেডকোয়ার্টারে যোগ দেওয়ার যাত্রাপথ ছিল সাফল্যম-িত। বাবা জীবেন্দ্রনাথ সরকার এবং মা অর্চ্চনা সরকারের একমাত্র সন্তান অনিক। অনিকের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। শিল্পের রাজ্যে কোডিং-এর রাজার যে জন্ম হবে এ কে জানত! সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করে অনিক। শৈশবটা বাকি ১০টা শহুরে বাচ্চার মতোই সাদামাটা কেটেছে তার। চট্টগ্রামের বিখ্যাত একটি বিদ্যালয় ‘কলেজিয়েট স্কুল’ - সেখানেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে অনিক ভর্তি হয়, এই স্কুলের অসংখ্য স্মৃতি অনিকের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাওয়া, স্কুলের লাল বিল্ডিং কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো অসংখ্য সুখকর মুহূর্ত অনিকের জীবনে যেন গেঁথে আছে। শিক্ষকের ভালোবাসা, শাসন, শুভকামনা সবকিছুই অনিকের জীবনে পরম পাওয়া। অনিক ভীষণ পড়ুয়া ছেলে, টিফিনের সময়ও তাকে পড়তে দেখা যেত। শিক্ষকদের কাছে ছিল তার অজস্র প্রশ্ন। পড়াশোনার পাশাপাশি অনিক টুকটাক গানও গাইতো।

হাইস্কুলের গ-ি পেরিয়ে অনিক ভর্তি হয় চট্টগ্রাম কলেজে। সরকারি কলেজ হওয়ায় অনিক ক্লাস করত কম। স্যারদের কোচিং আর কলেজ সংলগ্ন প্যারেড মাঠকে কেন্দ্র করে অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে তার। যে কোনো বিষয় বই থেকে খুঁজে খুঁজে নিখুঁত করে পড়ার অভ্যেস অনিকের তৈরি হয় এই সময়টিতে। এই সম্ভাবনাময় মেধাবী তরুণকে তার কয়েক বছর আগের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওভাবে আমার বড় কোনো স্বপ্ন নেই, তবে আমি যেন আমার আশপাশের মানুষদের জন্য কল্যাণকর হয়ে উঠতে পারি যাদের ভালোবাসা এবং সাহায্যের ঋণে আমি ঋণী হয়ে আছি।

কলেজের করিডর পেরিয়ে অনিক পরিবারসহ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চলে আসে ঢাকায়। উদ্ভাস আর ওমেকায় কোচিং করেছিল সে, পরবর্তীতে চট্টগ্রামের সেই তুখোড় অনিক ২০১৪ সালের বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ বুয়েটে প্রথম স্থান অধিকার করে। শুধু তাই-ই নয় এর পাশাপাশি ঢাবিতেও ২১তম হয় সে। বায়োলজিতে দক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও ফিজিক্স, কেমেস্ট্রিতে ভালো করে মেডিকেলেও চান্স পেয়েছিল অনিক।

বুয়েটে পড়া ছিল অনিকের জীবনে টার্নিং পয়েন্ট। খুব ইন্ট্রোভার্ট ছেলেটা হঠাৎ করেই ভীষণ এক্সট্রোভার্ট হয়ে যায়। সবার সঙ্গে মিশতে শেখা, বড় প্ল্যাটফর্মে নিজেকে উপস্থাপন করার কায়দা অনিক শিখেছে বুয়েটে পড়ায় সময়। সক্রিয়তার সঙ্গে অনিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিংও করেছে অনিক। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অংশগ্রহণ করেছে।

অনিক ‘প্রিয়’ নামের একটি কোম্পানিতে ১০ মাস সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং এ কোচ হিসেবেও ছিলেন দীর্ঘদিন। এ ছাড়া বুয়েটের ড. এম সোহেল রহমান স্যারের রিসার্চ সহকারী ছিলেন তিন মাস।

পরিশেষে, ছয়টি ইন্টারভিউ সম্পন্ন হওয়ার পরে অনিক ডাক পায় গুগল থেকে। বর্তমানে গুগলের ইউরোপিয়ান হেডকোয়ার্টার আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে কাজ করছে অনিক। এই দেশের জন্য কিছু করতে চায় সে। দেশের তরুণদেরও অনিক প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে সঠিক দিকনির্দেশনা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper