ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শিশিরভেজা হেমন্ত

সিয়াম বিন আহমাদ
🕐 ১:০৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০১৯

প্রকৃতিতে শুভ্র বলাকা মুক্ত আকাশে উড়তে উড়তে যখন ক্লান্ত, ঠিক তখনই প্রকৃতির ভাঁজ খুলে রূপসী বাংলা সেজে ওঠে হেমন্তের সাজে। নরম মিষ্টি কমলা রোদের ছোঁয়ায় নিজে নিজেই যেন সেজে নেয় আতপের বিস্তৃত ক্ষেত। মাথায় মাথাল বেঁধে পল্লীর কৃষাণ-কৃষাণিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নতুন ধান ঘরে তুলতে। কাঁচা বাঁশের ভারে দিনভর টানতে হয় সোনালি ধানের আঁটি। প্রখর রোদ কিংবা পড়ন্ত বিকেল প্রতিক্ষণে ভেসে আসে মধুর সুরে বাউল গান। যে গানে জড়িয়ে থাকে প্রশান্তির সুবাস।

শালিক, দোয়েল, বুলবুলিদের আনাগোনা দেখা যায় ঘরের আনাচে কানাচে। কখনও লাউয়ের ডগায়, কখনও ঝিঙের মাচায়, আবার কখনও জানালার ওপরও নেমে পড়ে একটি ঘাসফড়িং। গন্ধরাজ, শিউলি, মল্লিকা, কামিনীর কুঁড়ি ফোটে গাছে গাছে। দখিনা জানালা খুলতেই হলুদ গাঁদা ফুলের ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। সে ঘ্রাণ হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। মাছরাঙা তাকিয়ে থাকে কলমিলতার ফাঁকে। টুয়ার ভেতর চড়ুই পাখি ফুড়ুত ফুড়ুত আসে-যায়। গাছে গাছে গাছিদের শৈল্পিক ছোঁয়ায় রসে হাঁড়ি ভরে সেই রসের হাঁড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন গাছি। শিশুরা খেজুর রসের লোভে কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। তারপর উঠানের মিঠে রোদে বসে পাটকাঠির নল দিয়ে আনন্দভরে খায় খেজুর রস। একটু বড়রা রাতেই সেই কাজ সেরে নেয় গাছির অগোচরে।

শাপলা ফোটা বিলের ঝিলে জল শুকাতে থাকে। ছোট ছেলেমেয়েরা আঁচলে ছেঁকে ধরে চ্যালা, চাঁদা, সরপুঁটিসহ নানা মাছ। মাথার ওপর দিয়ে সারি বেঁধে উড়ে যায় বকের দল। ঝোপের আড়াল থেকে ভেসে আসে ডাহুকের ডাক। সেই ডাক ডেকে আনে নিশ্চুপ সাঁঝ। পল্লীর সাদা-সিধে মানুষগুলো ব্যস্ততা সেরে হাটের দোকানে আড্ডায় মাতে সমবয়সীদের সঙ্গে। ঘরে ফিরে সাঁঝবেলায় আপন কুটিরে এসে ভাঁপা পিঠায় ভাগ বসায়।

সন্ধ্যাবেলা দেখা যায় খেজুর পাটি বিছিয়ে খাবার নিয়ে বসে আছে পল্লীর প্রিয় জননী। হেমন্ত সন্ধ্যা মিশে যায় গোধূলিলগ্নে, নেমে পড়ে নির্জন নিশুতি। খেসারি আর কালাই ফুলের গন্ধে জেগে থাকে জোনাকিরা। জোনাকির আলোয় অন্ধকার সাজে নতুনরূপে। আঙিনার চারপাশে হলদে গাঁদার টলটল পাপড়িতে তারকাদের লুকোচুরি। এ বেলায় ঢের ইচ্ছে জাগে শিউলি, মল্লিকা, জ্যোৎস্না আর বুলবুলির সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতে। আত্মার সুতো ছিঁড়ে টান পড়ে দূরে থাকা আপনজনের দরজায়। নিঃসঙ্গ একাকী মনে হয় নিজেকে। হেমন্তের হৈম সমীরণ মনকে উদাস করে দেয়। ভাবনারা এসে বাসা বাঁধে কষ্টের কুটিরে। কিসের যেন অভাব! না পাওয়া বা প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। এভাবেই জীবন থেকে হারিয়ে যায় এক এক করে হেমন্তের প্রতিটি দিন।

সদস্য, এগারোজন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper