ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তবুও হয়নি বলা

শামীম শিকদার
🕐 ৩:৫২ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৯

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত একটা। তবুও আয়মানের চোখে কোনো ঘুম নেই। কোনোভাবেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না সে। মনটা কেমন জানি ছটফট করছে। প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট জ্বালাল সে। সিগারেট টানছে আর নিজের মনের সান্ত্বনা নিজেই দিচ্ছে। মনের ভেতরে ঠিকানাবিহীন অজানা কষ্টগুলো ভিড় জমায় তখন লুকিয়ে সিগারেট টানে সে। আজ ইফতির বিয়ে কথাটা যতবার মনে হয় ততবারই আয়মানের বুকটি কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। দীর্ঘ সাত বছর প্রেম করার পর নিজের প্রিয় মানুষটিকে এবারে হারাতে হবে তা সে কোনো দিন কল্পনাতেও আনতে পারেনি।

আজকে ইফতিকে অনেক সুন্দর লাগছে। নতুন রঙিন শাড়ি ও গহনার ভিন্ন সাজে, যেমনটা সে কল্পনা দেখত। কিন্তু দুর্ভাগ্য নতুন বউ হয়ে সে অন্যের ঘরে যাচ্ছে। শাড়ির নিচে ঘোমটা দেওয়া চিরচেনা মুখটা আজ যেন অচেনা। স্মৃতিগুলো চারদিকে ঘুরে আয়মানের কানে কানে তার অস্তিত্বের কথা জানান দেয়। বেশিক্ষণ ইফতির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। দূর থেকে শত মানুষের ভিড়ে একনজর দেখে সুবিধামতো কেটে পড়ল আয়মান।

সাত বছর আগের কথা। যখন আয়মান ও ইফতি একই স্কুলে পড়ত। রোজ দুজনের স্কুলে দেখা হতো। স্কুলে ক্লাস শুরু হওয়ার অনেক আগে প্রাইভেটের কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ত তারা। স্কুলের বারান্দা বা ক্লাস রুমের এক কোণায় বসে গল্পে মেতে উঠত দুজনে। আয়মানের বাড়ি স্কুলের কাছে বলে তার স্কুলে আসতে দেরি হতো না। অন্যদিকে ইফতির বাড়ি হচ্ছে স্কুল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। আয়মান স্কুলে আগে এসে ইফতিকে আনার জন্য তার বাড়ির দিকে যেত। ফলে দুজনের গন্তব্যই হতো একই স্থানে। একজন ছিল অন্যজনের নিত্যসঙ্গী। নিজেদের ভালোবাসায় বিভোর যেন তাদের সাজানো গোছানো স্বপ্নগুলো। অতৃপ্ত ভালোবাসার পরিসমাপ্তির প্রত্যাশা কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।

স্কুল পেরিয়ে কলেজ। তারপর ইচ্ছায় দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। তবে আয়মান এক বিভাগে এবং ইফতি অন্য বিভাগে। নতুন ক্যাম্পাসে নতুনভাবে জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পেল দুজনে। তারা তখন সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে। শিখেছে নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে। ব্যস্ততার সঙ্গে কল্পনার কোনো মিল নেই তা তারা জানে। তবুও তারা কল্পনা করে। দেখে সুন্দর একটি সুখের ঘর বাঁধার স্বপ্ন। যে ঘর দুজনের ভালোবাসায় ভরে উঠবে। এখন শুধু তাদের সময়ের অপেক্ষা। অপেক্ষা করতে করতে চলে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বছর। এই তিন বছরে তাদের ভালোবাসার কথা পুরো ক্যাম্পাস জেনেছে। জেনেছে তাদের কাছের প্রিয় বন্ধুগুলো। নতুন আশার আলো জুগিয়েছে অনেকেই।

এরই মধ্যে ইফতির নিয়মিত বিয়ের সম্বন্ধ আসছে। পাত্র ভালো ও ভালো ঘর হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিয়ে থেকে দূরে সরে আছে ইফতি। পরিবারে চাপে নিজেকে সামলাতে না পেরে আয়মানের কথা বলল। বলল তাদের অতৃপ্ত প্রেমের কথা।

পরের দিন ক্যাম্পাসে আয়মানের সঙ্গে দেখা ইফতির। সব খুলে বলল ইফতি। আয়মান তার কথা শুনে দিশাহারা হয়ে গেল। হঠাৎ ইফতির মুখে এমন কথা শুনে কি করবে তা কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারছে না সে। আয়মানের ভাবনার মাঝেই ইফতি আবার বলছে, ছেলে অনেক ভালো ঘরের, বড় অঙ্কের টাকা মাইনে পায়। তারপর দুজন অনেকক্ষণ নিশ্চুপ। কেটে যায় নীরব কিছু সময়। আকাশের পানে চেয়ে আয়মান বলে, আমি তোমার বাড়িতে যাব ইফতি! ইফতি তখনো নীরব। পাথরের মতো বসে রইল। ইফতির মতো চারপাশের পরিবেশগুলোও যেন তাদের বন্ধু হয়ে নীরবতা পালন করছে। মাঝে মাঝে শুকনো পাতার মচ মচ শব্দ ছাড়া কানে কোনো শব্দ আসে না। আয়মানের চোখ দিয়ে হয়তো দু-এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে; তবে তা ইফতির অজানায়।

কথামতো আয়মান ইফতিদের বাড়িতে চলে গেল। বাড়ির পরিবেশ একদম শান্ত। কোনো মানুষ নেই। মনের অজান্তেই বুকে সাহস নিয়ে দুই একবার আয়মান ‘বাসায় কেউ নেই বলে’ চিৎকারও করেছে। এক পর্যায়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো ইফতির বড় ভাই। আয়মানের কথা শুনে যেন ইফতির ভাই রেগে লাল হয়ে গেছে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

প্রায় এক মাস ইফতির সঙ্গে আয়মানের কোনো যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেও আয়মান পারেনি। বাড়ির সামনে ও ইফতিকে প্রাপ্তি স্থানগুলোতে সে বহুবার খুঁজেছে তার প্রিয় মানুষটিকে। হঠাৎ একদিন তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধু সাইমুনের কাছে জানতে পারল আজ ইফতির বিয়ে। কথাটি শুনে আয়মানের ওপর যেন আকাশটি ভেঙে পড়ল। তার সাজানো গোছানো স্বপ্নগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। মনে প্রশ্ন আসতে শুরু করল তবে কি সব মিথ্যে ছিল? ইফতি কি শুধু তার স্বার্থই খুঁজে নিল? এসব কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেয়ে লুকিয়ে পিশাচ মুখটা একবার দূর থেকে দেখে নিল। আয়মানের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। পুরো পাঞ্জাবিটা ভিজে একাকার।
কি রে আয়মান বাড়ি যাবি না?
বন্ধুর কথা শুনে আয়মান যেন ঘুম থেকে জেগে উঠল। তাড়াহুড়া করে বসা থেকে দাঁড়াল। ভালোবাসার অনেক স্মৃতির ভিড়ে অতৃপ্ত এক হৃদয়ের আর্তনাদ নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকল তারা দুই বন্ধু। বলা কথাগুলোর মাঝেও যেন হয়নি অনেক কথা বলা।

সভাপতি
এগারজন, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper