প্রতিকূলতা
শাহরিয়ার জামান শাওন
🕐 ২:১৩ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৯
মাহিনের একজোড়া কবুতর ছিল। কবুতর জোড়ার বিশেষত্ব ছিল, যখন মাহিন হাততালি দিত তখন কবুতর জোড়া শূন্যে উঠে ডিগবাজি দিত। মাহিনের মুখে তখন হাসির জোয়ার বইতো। মাহিনের মুখের এই অকৃত্রিম খুশির জোয়ার দেখার জন্যই মাহিনের বাবা মদনতনার হাট থেকে কবুতর জোড়া নিয়ে এসেছিল। বিকালের দিকে রাজন ও রফি মাঠে খেলতে গেল। রাজন ও রফি মাহিনের চাচাতো ভাই। এরা যমজ।
কি সুন্দর বোঝাপড়া তাদের মাঝে যেন একে অপরের নয়নের মণি। তাদের খেলতে যাওয়া দেখে মাহিনও বায়না ধরে খেলতে যাওয়ার। কৈশোর বয়স মাহিন খেলতে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুটা প্রতিবন্ধকতা আছে। আসলে মাহিন সবার সঙ্গে মিশতে পারে না। তার সহপাঠীদের বিদ্রূপ, অঙ্গভঙ্গি, হাসি তামাশা সে সহজে বুঝতে পারে না। ওর কাছে মনে হয় যেন সবাই ওর শত্রু। তাই ও যতটা পারে ওর সহপাঠীদের এড়িয়ে চলে। কারো বিদ্রূপ গায়ে মাখে না। কিন্তু সহপাঠীরা বা পাড়ার ছেলেরাও তার পিছু ছাড়ে না। সবাই যেন মাহিনকে জ্বালাতন করেই শান্তি পায়।
অন্যদিনের মতো আজ আর মাহিনের মা মাহিনকে খেলতে যেতে বারণ করেননি। অনুমতি পেয়ে মাহিনের খুশি আর আটকায় কে? ও দৌড়ে মাঠের দিকে গেল।
মাঠে উপস্থিত হয়ে মাহিন বলল যে সে খেলবে। এ কথা শুনে সাজিদ বাদে সবাই হেসে উঠল। ব্যাপারটা এমন যেন কেবলই একটা মজার কৌতুক বলা হয়েছে। পালের গোদা রফিক বলল- ওই দেখ মেয়েরা কানামাছি খেলছে, ওদেরকে বল তোরে দলে নেবে। আর ফুটবল খেলা তোর মতো প্রতিবন্ধীর জন্য না। এ কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল মাহিনের। এরপর রাফি বলল- তোর মতো হাবাগোবার জন্য লুডু খেলার জন্ম। ওইটা খেল যা। এবার মাহিন কেঁদেই ফেলল।
মাহিনের কান্না দেখে অন্য ছেলেরা হেসে গড়াগড়ি দিতে লাগলেও সাজিদ মাহিনের পাশে এসে দাঁড়ালো। সাজিদ সবাইকে বলল মাহিনকে যেন খেলতে নেয়। কিন্তু কেউ কোনো কথা না শুনে দুজনকেই খেলা থেকে বাদ দিয়ে দিল।
সাজিদ মাহিনকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিল। এর কিছুদিন পর ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। সবাইকে অবাক করে মাহিন ক্লাসের টপার হলো। সবাই তাকে অভিনন্দন জানাতে এলেও তার প্রতি সবার মনোভাব ও আচরণ আগের মতোই থাকল। অটিজমে ভোগা একজন রোগীর জন্য এটা ছিল চরম হতাশাজনক। তাকে প্রায়ই ঘরে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে শোনা যেত। এরপর তার মা তার রুমে গেলে সে দ্রুত চোখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু মায়ের চোখ এড়াতে পারে না। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে রফিক অ্যাক্সিডেন্টের শিকার হলে মাহিনই প্রথম এগিয়ে আসে। কালাম চাচার ভ্যান ডেকে এনে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে সে। হাসপাতালে রফিকের পাশে সে সবসময় ছিল এবং তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতেও পৌঁছে দেয় মাহিন।
এরপর থেকে রফিকসহ ক্লাসের সবার মাহিনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে শুরু করে। সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতে থাকে। সবাই বুঝতে পারে তারা এতদিন যা করেছে তা মোটেই ঠিক করেনি। তারা মাহিনের কাছে ক্ষমা চায় এবং তার ভালো বন্ধু হয়ে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। মাহিনও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকে।
সদস্য
এগারজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228