গ ল্প
ঈদ সালামি
নাজনীন সুরভী
🕐 ১:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৯
গত কয়েক ঈদ থেকে সারাদিন পার করার পর রাতে কোমরে ব্যথা দেখা দেয়। এর অবশ্য একটা কারণও আছে। খুব বড় না হলেও মোটামুটি বড় হয়ে গেছি। ছোটবেলায় আব্বা, চাচা, দাদাভাই, মামা, খালু সবাই ঈদের নামাজ শেষ করে এসে সালামি দিয়ে দিত নিজ দায়িত্বে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদ সালামি পাওয়ার হার ব্যস্তানুপাতিক হয়ে গেছে। পায়ে ধরে সালাম করে তাগাদা না দিলে কেউ সালামি দিতেই চায় না।
আমি পায়ে ধরে সালাম করার বিরুদ্ধে বরাবরই। আগে বাসায় কোনো গুরুজন আসলে আম্মা আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলে- পায়ে ধরে সালাম করবি। আমি তখন আব্বা, আম্মা, ছোটবোনের পাশ দিয়ে চক্কর দিয়ে বলি- ইসলামে কেবল দুই শ্রেণির লোকের পায়ে ধরে সালাম করার কথা বলা হয়েছে। আব্বা চোখ কড়মড় করে তাকিয়ে থাকতেন।
ঈদ এলে অবশ্য ভিন্ন কথা। বাসায় যেই আসুক সবার আগে আমি পায়ে ধরে সালাম করি। এইবারও ব্যতিক্রম হলো না। নামাজ শেষে আসার সময় পাড়ার লোকদেরও পায়ে ধরে সালাম করেছি। আব্বা, চাচা, দাদাভাই নামাজ শেষ করে বাসায় আসার পর পায়ে ধরে সালাম করলাম। আব্বা দিলেন তিনশত টাকা, দাদাভাই দিলেন একশত টাকা অবাক করা ব্যাপার হলো ছোট চাচা মাথায় হাত দিয়ে বললেন- তুই যেন অনেক বড় হোস। এইভাবেই যেন গুরুজনদের প্রতি ভক্তি রাখিস। একগাল হেসে চলে গেলেন। আমি তখন বড় হওয়ার যন্ত্রণার কথা ভাবছি। ভেতরের রুম থেকে আব্বার কণ্ঠ শুনতে পেলাম। আম্মাকে বলছেন- রেহানা, নাস্তাপানির ব্যবস্থা কর তাড়াতাড়ি। আমার অফিসের কলিগ আসবে আট-দশজন। মুহূর্তেই আমার চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠল। এই সুযোগ। কলিংবেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমিই দৌড়ে গেলাম। আমার পিছে পিছে আব্বা।
আব্বার সহকর্মীরা বাসায় ঢুকতে লাগলেন আর আমি একে একে দ্রুত সালাম করে যেতে লাগলাম। আব্বা অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। সালাম করে মেরুদণ্ড সোজা করতেই উনারা আমাকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করে সোফায় বসে পড়লেন। আইনস্টাইন ঠিকই বলেছিলেন- মহাবিশ্ব এবং মানুষের নির্বুদ্ধিতা দুটোই অসীম।
সহ-সভাপতি
এগারজন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228