পান্তা কাহিনী
দীপঙ্কর সরকার
🕐 ১২:৩২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
ঐশী - লোকমান সাহেবের একমাত্র মেয়ে। অত্যাধুনিক জীবন বলতে যা বোঝায় ঐশীকে সেসব সুবিধা দিয়েই বড় করেছেন তিনি।
পাশ্চাত্য পোশাক, ইংরেজি গান, ইংরেজি সিনেমা ছাড়া ঐশীর চলেই না। ঘরের চেয়ে পার্টিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ও। পড়াশোনা করছে ইংরেজি মাধ্যমে ফলে বাংলার প্রতি একটু বাঁকা দৃষ্টি ছোটবেলা হতেই ছিল।
কথা বলার সময় ইংরেজি শব্দ না ঢুকালে ওর কেমন যেন আনস্মার্ট আনস্মার্ট লাগে। ফলে মেয়েটি স্মার্ট হতে অধিক স্মার্টতর হয়েছে।
ছোটবেলা থেকে ওর কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেননি লোকমান সাহেব। যখন যা যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।
আজ হঠাৎ ঐশীর ভেতরে বাঙালিয়ানা জাগ্রত হয়েছে। বাবাকে বলে রেখেছে এবারের পহেলা বৈশাখে সে শাড়ি পরবে। সকালবেলা পান্তা-ইলিশ খাবে। আবদার শুনে লোকমান সাহেবের মান যাওয়ার মতো অবস্থা। তার মেয়ে সকালে পান্তা ভাত খাবে তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। লোকমান সাহেব অবাক বিস্ময়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন
-তুই সত্যিই পান্তা খাবি?
-ওহ্, ইয়েস ড্যাড। ক্যান’ট আই ইট পান্তা ভাত?
-পারো। তবে কখনো খাওনি তো
-এবার ট্রাই করব। বৈশাখ ফেস্টিভ্যালে পান্তা-ইলিশ না খেলে চলে?
প্লিজ পাপা তুমি অ্যারেঞ্জ করো।
-আচ্ছা, তুই যখন বলছিস তখন ব্যবস্থা করব।
-ওহ ড্যাড, আমি নিজেই কুক করব কিন্তু।
-সত্যিই?
-ইয়েস।
কথাগুলো বলে চলে গেল ঐশী। এদিকে লোকমান সাহেবের মাথা ঘুরছে। একে তো মেয়ে কোনোদিন পান্তা খায়নি তার ওপর নিজে রান্না করবে; নিজের কানকেও বিশ^াস হচ্ছে না তার। কিন্তু কি আর করার মেয়ের আবদার বলে কথা। ঐশী এ ব্যাপারে দারুণ উত্তেজিত। ইউটিউবে পান্তা ভাতের রেসিপি লিখে সার্চ করছে। সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও চলে এলো- কি করে পান্তা ভাত তৈরি করতে হয়। রেসিপি অনুযায়ী তৈরি করার জন্য রান্নাঘরে গেল ঐশী। ওকে সাহায্য করছে বাড়ির কাজের মেয়ে। কিন্তু কাজের মেয়েকে ও একেবারে চুপ থাকতে বলেছে কারণ পান্তা তৈরির পুরো ক্রেডিট ও নিজে নিতে চায় সঙ্গে বাবাকেও সারপ্রাইজ দিতে চায়। ফলে, কাজের মেয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
ইউটিউবের ভিডিও চালু করতেই বলল- পান্তাভাত চিকন বা সুগন্ধি চালের করা যায় না। পান্তার জন্য মোটা চালের ভাত সবচেয়ে উপযোগী। কি মুশকিল বাড়িতে মোটা চাল নেই; এই রাতেই লোকমান সাহেব মেয়ের আবদার পূরণ করতে মোটাচাল কিনতে গেলেন। প্রায় আধাঘণ্টা পর তিনি চাল নিয়ে ফিরে এলেন। চাল দেখে ঐশীর চোখেমুখে উচ্ছ্বাস। ওয়াও- চালগুলো কী কিউট বলে চালগুলোর সঙ্গে একটা সেলফি তুলে নিল।
এদিকে আধাঘণ্টা আগে
‘কুকিং পান্তাভাত’ ক্যাপশনে যে ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছিল তাতে প্রায় শখানেক লাইক পড়েছে। লাইক কমেন্টসগুলোও বারবার চেক করে নিচ্ছে ও ।
এবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। আর কোনো বাধা নেই। পান্তাভাত করার আগে যে ভাত রান্না করতে হয় সেটাও জানা ছিল না ওর। ইউটিউবে ভিডিও চলছে-
একটি পাত্রে চাল ধুয়ে ২ কাপ পানি দিয়ে চুলার ওপর বসিয়ে দিন। দেখুন গ্যাস আছে কি না। গ্যাস থাকলে মনে করে চুলা জ্বালান। তারপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন ।
কয়েক মিনিট পর হাঁড়ি থেকে চাল তুলে টিপি দিয়ে দেখুন সেদ্ধ হয়েছে কিনা। সেদ্ধ হলে বুঝবেন তা ‘ভাত’ হয়ে গেছে। এবার ভাত থেকে বাড়তি পানি ঝরিয়ে নিন।
হঠাৎ ভিডিও বন্ধ করল ঐশী। মেজাজ চরম খারাপ। এত কষ্ট হবে জানলে জীবনেও এই কাজ করতে আসত না। সব আগ্রহ বিরক্তিতে রূপ নিয়েছে। তার ওপর কাজের মেয়ে বলেছে- ম্যাডাম, এসব আপনাগো কাজ না; দেন আমি কইরা দেই। এই কথা শুনে আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে ঐশী। রাগ করে সেই ভাতের ওপর পানি ঢেলে সেদিনের মতো শুয়ে পড়ল ও। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল- আর জীবনেও রান্নাঘরের চৌকাঠ মারাবে না। ফেসবুকে পান্তার ছবি পোস্ট করা হলো না বলে খুব আফসোসও হচ্ছে। কালকের প্ল্যান ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে ঐশী।
সাধারণত এত সকালে ঘুম ভাঙে না ওর। আজ সকালে ঘুম ভেঙেই রান্নাঘরে গেল ও। যে ভাতগুলোতে ও রাগ করে পানি ঢেলে দিয়েছিল সেগুলো গিয়ে দেখে হুবহু পান্তাভাতের মতো ।
ইউরেকা ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠল ঐশী।
ওয়াও, পান্তা তৈরি হয়েছে। পান্তার সঙ্গে একটা সেলফি তুলে ক্যাপশন লিখল,
-হ্যালো ফ্রেন্ডস।
হ্যাপি পহেলা বৈশাখ। নিজের হাতে পান্তা রান্না করেছি
তারপর ফেসবুকে আপলোড করল।
ওদিকে নোটিফিকেশন আসা শুরু হয়েছে-
Faria commented on zour post
-Wow, nice panta!
Nabila commented on zour post
How cute the panta is! chill friends. Happz pohela Baishakh.
পান্তা না খেয়ে ঐশী এখন কমেন্টের রিপ্লাই দিতে ব্যস্ত।
প্রচার সম্পাদক
এগারজন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228