ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শহরের ভালোবাসা

সিয়াম বিন আহমাদ
🕐 ১২:২৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০১৯

 

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় করেই ছুটলাম রেলস্টেশনের পথে। পৌঁছতে পৌঁছতে সাঁঝ নেমে পড়ল। স্ট্রিট লাইটের আলোতে নিজেকে বড্ড অপরিচিত লাগছিল। বৃষ্টিরাতের ছাতিম জড়ানো গন্ধ আমাকে হাতছানি দিয়ে দূরে কোথাও ডেকে যাচ্ছিল যেন। ওই দূর শহরটা বড্ড বেশি আপন মনে হচ্ছিল। আত্মার সুতোয় টান পড়ছিল। ওই শহরটাই যেন আমার আলাদা একটা পৃথিবী। কল্পনায় নিজেকে ওই শহরে উপস্থিত করে কতশত স্বপ্ন বুনতে থাকলাম আমি। হঠাৎ একটা দূরাগত ট্রেনের হুইসেল শোনা গেল। তাড়াহুড়ো করে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়লাম। একটু পরেই ঝেঁপে বৃষ্টি আসল। বৃষ্টিটা খানিক কমে এলে জেবাকে ফোন করলাম আমি। নম্বরটা বন্ধ। ফোনে পেলেও আমি এখন জানাতাম না, ‘আমি তোমার শহরে যাচ্ছি।’ অনেক দিনের স্বপ্ন আমার; হঠাৎ জেবার শহরে গিয়ে ওকে সারপ্রাইজ দেব।

ট্রেনের ঝনঝন শব্দে আমার চোখের পাতা বুজে আসে। বোলপুর স্টেশনে ট্রেনটা থামলে হইচই শুনে আমার ঘুমটা ভেঙে যায়। আমি একটু নড়েচড়ে বসি। হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার মোবাইলটা নেই। এপাশ-ওপাশ খুঁজেও পাওয়া গেল না। আশপাশের লোকদের বললাম- ‘আমার ফোনটা পাচ্ছি না।’ শুধু বোবা মানুষের মতো হাঁ করে শুনল তারা। একসময় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনটা থামল। সাত সকালে দোকান-টোকান খোলেনি তখনো। একটু দূরে একটা ফেক্সিলোডের দোকান চোখে পড়ল। দোকানের ফোনটা নিয়ে বার কয়েক জেবাকে ফোন করলাম। রিসিভ হলো না ফোনটা।

জেবার এপথে যাওয়ার সময় নিয়মিত কথা হতো আমার সঙ্গে। আশপাশের প্রতিটা অলিগলি আমার জানা। খুঁটিনাটি সবই বলত আমাকে। একটা রিকশা ডেকে জিজ্ঞেস করলাম- ‘মামা জারুলতলা যাবা?’ লোকটি মাথা নাড়াল। তাড়াতাড়ি রিকশায় চেপে বসলাম আমি। একটু সামনে গিয়ে বললাম, ‘মামা আমাকে হাজিবাড়ী’র সামনে নামিয়ে দিবা।’ নেমে এপাশ-ওপাশ তাকাচ্ছি নীল রঙের বিল্ডিংটা নজরে পড়ছে না। মোড়টা ঘুরে ওদিকে তাকাতেই একটা নীল বিল্ডিং চোখে পড়ে। সামনে গিয়ে ‘শান্তি নীড়’ লেখা দেখে খুশিতে আমি বাগবাগ। ওখানে না দাঁড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

গোধূলি ম্লান হয়ে এলো সাঁঝ নেমে পড়ল। এতক্ষণে বাসার ছাদেও উঁকিঝুঁকি মেরেছি, কোনোভাবেই একপলক দেখা মেলেনি জেবার। এতে একদম দোষ দিচ্ছি না ওকে। কারণ ও জানে না আমি আজ ওর শহরে। জানলে কত খুশি হতো! এসব ভেবে খানিক সান্তনা ভরাচ্ছি। অচেনা শহরে তিমিরাবৃত রাত নেমে পড়ল। মশার কামড় যেন রাক্ষুসী বাঘের ছোবল। সকালে নিশ্চিয়ই জেবার সঙ্গে দেখা হবে এ আশা বুকে লালন করে কষ্টগুলো ভুলে থাকলাম। সকাল-সকালে চোখটা খানিক লেগে এসেছিল। দুহাতে চোখটা মলে দেখি সেই কাঁঠালী কালার থ্রি-পিসটা পরে জেবা বের হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগেই কুরিয়ার করে আমি পাঠিয়েছিলাম এটা। আমি একটু দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে ‘জেবা, জেবা’ বলে ডাকলাম।

জেবা থমকে দাঁড়াল। একটু বিরক্তির সুরে, ‘তুমি?’

আমি আগ্রহ ভরিয়ে বললাম, আমি তোমার তাজিম। তুমি আমাকে চিনতে পারোনি?’ এতটুকু শুনেই জেবা বলে গেল অনর্গল ...‘তুমি এখানে আসবা, আমাকে আগে জানাবে না তুমি?

একটিবার ফোনেও তো বলতে পারতে কথাটা!’ ওর কথা বলার জোঁ শুনে, ফোনটা যে হারিয়ে ফেলেছি এটাও বলতে পারলাম না। জেবার কথা বলার ঢং আর মেসেঞ্জারের সুর সম্পূর্ণ আলাদা মনে হলো। খানিকক্ষণ চুপ থেকে একটু পরে আবার বলে উঠল, ‘আমার একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে। আমি খুব ব্যস্ত। একদম তোমাকে সময় দিতে পারলাম না। সময়-সুযোগ করে আবার এসো কখনো।’ তবুও আমি কষ্টটা লুকিয়ে একগাল হাসি দিলাম। আমাকে রেলস্টেশন পৌঁছে দিয়েই জেবা চলে যায়। রৌদ্রের ফাঁক গলে পথ চেয়ে থাকি আমি। আশার প্রাপ্তিতে যোগ হয় স্বপ্ন পোড়ার ধোঁয়াটে গন্ধ। আমি যেন এই ফুটপাতেরই টোকাই; প্লাটফর্মের দখিন পাশের একটা গ্রিল ঘেঁষে ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকি। খানিক বাদে আবারও উঁকিঝুঁকি করি জেবাকে একটু দেখার জন্য। কিন্তু ও স্মৃতির আঁচড়ে একটিবারও পেছন ফিরে তাকায় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই জেবা ব্যস্ত শহরের অচেনা লোকের ভিড়ে লুকিয়ে যায়। অজান্তেই চোখের কোণে জমাট হয় নীরব অশ্রু। বেদনার প্রখর তাপে গলেও পড়ে ফোঁটা কয়েক।

সদস্য
এগারজন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper